সিইসি আরো বলেন, ‘যেহেতু একটা টাইমলাইন আছে, আর্লি ডিসেম্বর, সেটাকে মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছি। ডিসেম্বরে ইলেকশন, তাই অক্টোবরে শিডিউল ঘোষণা করতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শুরু হচ্ছে, আমরা কি নির্বাচনী ট্রেনে উঠে গেলাম—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এই ঘোষণাটা তো প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দিয়েছেন। তিনি ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে অথবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনিই এটা ঘোষণা দিয়েছেন।’
এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আমার একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। এটি তাঁর এবং তাঁর দল যে কাজগুলো করছে সে সম্পর্কে জানার একটি সুযোগ। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।’
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ওই বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক ও সুশাসন বিভাগের প্রধান টিমোথি ডাকেট উপস্থিত ছিলেন।
ঐকমত্য কমিশনের আশা : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুতই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। নির্বাচনের টাইমটেবিল তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার বলা হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগির এ ব্যাপারে (নির্বাচন) আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা জানানো হবে। ফলে ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার কারণ নেই।’
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন ২০ এপ্রিল পর্যন্ত : নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে গতকাল সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করা যাবে। এর আগে গত ৩ মার্চ নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘দল নিবন্ধনের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন আহ্বান করতে হবে, এ ধরনের কোনো বিধান নেই। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ও নেই।’
গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যাঁরা নিবন্ধিত হতে চান, তাঁরা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ইসির কাছে আবেদন করতে পারবেন। ইসি সেই আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং নিবন্ধনের জন্য পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, তা সম্পন্ন করবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসংক্রান্ত বিধিতে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান বিধান অনুসারে নতুন দলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার সদস্য থাকতে হবে।
তবে নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে—বিদ্যমান এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা-থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম পাঁচ হাজার সদস্য থাকার বিধান করতে হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দল নিবন্ধনসহ নির্বাচনী আইনের সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার যে সুপারিশ রেখেছে তা বাস্তবায়ন করা না হলে বিদ্যমান আইনেই দল নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’