হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেনোপজ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে আসার ঘটনা ঘটে। এর ফলে তারা প্রজননে অক্ষম থাকেন। এ বিষয়টি সকলেরই জানা। তবে পুরুষদের মেনোপজের বিষয় জানেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুব কম। তবে পুরুষদের মেনোপজ মহিলাদের তুলনায় খুব আলাদা।
মেল মেনোপজ কী ও লক্ষণ
মেল মেনোপজকে সাধারণত এন্ড্রোপজ বলা হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের স্তর কম হলে তাকে মেল মেনোপজ বলা হয়। ৫০ বছর বয়সের পর পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন কমে যেতে থাকে। বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর ১ শতাংশ টেস্টোস্টেরন কমে যেতে শুরু করে। এটি মেনোপজের প্রধান কারণ।
ড. পঙ্কজ আগরওয়াল জানান, মেল মেনোপজের মতো হরমোনের সমস্যা শুধু যৌন সমস্যাই বাড়ায় না, বরং শরীরের নানান অংশেও প্রভাব বিস্তার করে। এতে ব্যক্তির মধ্যে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে অবসাদ বা অন্য কোনো পরিবর্তন দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন—
১. এনার্জি কমে যাওয়া।
২. মনমরা হয়ে থাকা।
৩. অবসাদগ্রস্ত থাকা।
৪. মনোযোগী হতে না-পারা।
৫. অনিদ্রা।
৬. ওজন বৃদ্ধি বা মাংসপেশী দুর্বল হওয়া।
৭. যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া।
৮. বন্ধ্যাত্ব।
৯. পুরুষদের স্তন বৃদ্ধি।
১০. চুল ঝরা।
১১. হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া।
মহিলাদের থেকে পুরুষদের মেনোপজ কীভাবে পৃথক
মহিলা ও পুরুষের মেনোপজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উল্লেখ্ সমস্ত পুরুষের মধ্যে মেনোপজ দেখা যায় না। আবার এর ফলে পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায় না। তবে হরমোন কমে যাওয়ায় যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী করবেন
মেল মেনোপজের প্রতি দেশের পুরুষরা গাম্ভীর্যের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করেন না। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মধ্যে দেখা দেয়। তবে মেল মেনোপজের কোনও স্পষ্ট কারণ নেই। তবে বিশেষ কিছু বিষয় মাথায় রেখে এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করে তোলা যায়।
মেনোপজের সঙ্গে জড়িত কোনো সমস্যা অনুভূত হলে দেরি না-করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যা যা লক্ষ্য করছেন সে সব নোট করুন। অনেকে লজ্জার কারণে মেল মেনোপজের বিষয় কথা বলেন না। তবে এটি লজ্জার বিষয় নয়। এ সময় একাকীত্ব অনুভব করলে বা মন খারাপ থাকলে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করুন।
টেস্টোস্টেরন টেস্ট করে মেনোপজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পর সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসাও করা যেতে পারে। উল্লেখ্য পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করাতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই থেরাপির কারণে হৃদরোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
নিউট্রিশনিস্ট ও ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ বরুণ কাত্যালের মতে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যক্তিকে সুষম ও পুষ্টিখর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এ সময় জাঙ্ক ফুড খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ফ্যাট, শর্করা এবং প্রোটিন টেস্টোস্টেরনের স্তরকে প্রভাবিত করে। নিজের খাদ্য তালিকায় জিঙ্ক (মাশরুম, পালক, ব্রকোলি), ওমেগা ৩ (শুকনো ফল, স্যালমন, সার্ডিন, চিয়া বীজ), ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম (দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য ও সোয়া) সমৃদ্ধ খাবার-দাবার অন্তর্ভূক্ত করুন। খুব মিষ্টি ও নোনতা, ক্যাফিন ও মেদযুক্ত খাবার খাবেন না। এগুলি অধিক পরিমাণে খেলে শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং হরমোন তৈরি বাধা পেতে পারে।
সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে এর লক্ষণের প্রভাব কমানো যেতে পারে। এর জন্য সুষম আহার, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং অবসাদ থেকে দূরে থাকার বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে মেল মেনোপজ দেখা গেলেও এর লক্ষণগুলোর কারণে অধিক সমস্যায় পড়তে হবে না।