ড.গোলসান আরা বেগমঃ নারী রাজনৈতিক নেতৃত্ব জায়েজ নয়। এই তীর ধনুকটি রুখে দিয়ে কয় জন নারী রাজনীতির মাঠে নামতে পারে? প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা বাধা দেয় পরিবার পরিজনরা। মা রাজনীতি করলে ছেলে মেয়ের বিয়ে শাদির ঝামেলা। আমার নিজের ছেলের বিয়ে ভেঙ্গেছে দুই বার। রাজনীতির রোষানলের কারনে ছেলে,মেয়ে বা স্বামীর চাকুরী খোয়া যেতে পারে,পরতে পারে নানা ধরনের সমস্যায়। এতো ঝুঁকি ঝামেলা নিয়ে কোন নারী রাজনীতিতে পা রাখতে সাহস পায় না। আবার এক ধরনের নারী রয়েছে যারা শখের চোখের,চূলের,শরীরের যত্নে ও ভারতীয় সিরিয়াল দেখার নেশায় থাকে মোহগ্রস্থ, রাজনীতির মাঠে কি খেলা চলছে তা দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না,তাদের কথা নাই বা বললাম।
স্বামী সন্তান চায় তার মা রান্না বান্না করে খাবার সাজিয়ে হাসি মুখে স্বামী সন্তানের পথ চেয়ে অপেক্ষা থাকুক । তাদের ঠোঁটে সকালে বিকালে গরম চা তুলে দিক,ওরা খাবে আরাম আয়েশ করতে করতে। সবাই চায় নারী বাসরের ফুলদানি সাজাবে,রান্না ঘরে ভুড়ি ভোজের আয়োজন করবে,সারাদিন ঘামঝুড়িয়ে পরিশ্রম করুক। তার যে নিজস্ব চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে,জাতীয় উন্নয়নে রাখতে পারে অবদান তা কেউ কেউ একদম মানতে নারাজ। বরং আচঁল টেনে ধরে ও নিরুৎসাহিত করে।
নারীর সফলতা আসার সাথে সাথে প্রতিহিংসার দেয়াল তৈরী হয়ে যায়। নানা ফন্দি করতে থাকে কি ভাবে তাদেরকে ধুলিসাৎ করে দিবে। তার হাঁটা ভালো না। কথার ধরন বেশ ঝাঁমেলা, বেয়াদব, বুদ্ধি মেধা নেই ইত্যাদি কতোই অপবাদ ছড়াতে থাকে। পারলে চরিত্রে উপর আঘাত তুলে দেয়। চলার পথে প্রতিরোধ দেয়াল তুলে দেয়। কত সরাবে সে কন্টক পথ চলার পথ থেকে। হাঁ এভাবে হোঁচট খেয়েই নারীরা রাজনীতিতে সফলতা আনছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে তার অঙ্গ সংগঠনের সকল স্তরের কমিটিতে ৩০% নারীকে পদায়ন করার। ফলে নারীরা বেশ সাহসিকতার সঙ্গেই রাজনীতিতে পা রাখছেন । আবার কেউ কেউ রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে প্রধান্য দিচ্ছেন। নারী জাগরনের ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই শুভ লক্ষণ। ধর্মান্ধতা যতই নারীর চলার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে,পারবে না রুখে দিতে। তাই আজকাল ঘরে বাইরে কর্মের নানা অঙ্গনে, আড্ডায় নারীর উপস্তিতি ক্রমাগত হারে বাড়ছে।
নারীরা তোমরা পুড়াও সকল ব্যর্থতা। কোমরে গোঁজে আচঁল মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াও। তুমিও মানুষ, তোমার রয়েছে পৃথিবীর সকল জয়ে ক্ষয়ে দশ আঙ্গুলের হাতের ছোঁয়া। তুমিও পারো সাপের সাথে করতে সখ্যতা। সকল ভয়কে জয় করতে রয়েছে তোমার মস্তিষ্কে বুদ্ধি মেধা । সাহসের পাথর ঘষে, অসাধ্যের সাথে পাঞ্জা লড়ে তুমিও পারো লড়তে দেখিয়ে দাও। নারী তুমি পারবে এগিয়ে যেতে।
যত প্রতিবন্ধকতা আসুক, নারীরা যে সফল রাজনীতি করছে না, তা নয়, করছে অত্যন্ত সাহসিকতার উপর ভর করে ও প্রতিকূলতাকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করে। পদে পদে মার খাচ্ছে, লাঞ্চিত হচ্ছে,চোখ রাঙ্গানি তো উঠতে বসতে সহ্য করতে হচ্ছে ।
বাংলাদেশের নারীরা অনেক ভাগ্যবান,ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সুব্যবস্থা থাকায় নারীরা রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারনীতে ও রাজনীতিতে অংশ গ্রহন করার সুযোগ পাচ্ছে।
শেখ হাসিনার মতো বিচক্ষণ নারী বান্ধব নেতা পাওয়ায় কর্মের ও রাজনীতির বহু মুল্যবান ঈর্ষনীয় স্থানে জায়গা পাচ্ছে নারীরা। যা কোন দিন কল্পনাও কেউ করেনি। নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৯ হলো নারী উন্নয়নের মাইল ফলক।
এর সুবাদে রাজনীতি,চাকুরী থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই নারীরা রাখছে সফলতার প্রতিফলন। নোভেল বিজয়, হিমালয়, মহাশূণ্যে গমন ইত্যাদি বহু দুঃসাধ্য কাজে স্বীয় মেধা, কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। নারীরা পারেন না, পারবে না — একথাটির উপর লবণ ছিটিয়ে দিয়ে সকল কাজে হচ্ছে অগ্রগামী।
তারপরও হেফাজতে ইসলাম নামক একটি ইসলামী অরাজনৈতিক সংগঠন নারীর উন্নয়নকে সহ্য করতে পারছে না। তাদের আত্মা প্রকাশ ঘটে নারী নীতিকে বিরোধিতা করেছিলো ২০১৩ সালে। তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে তাদের মূল কর্মসুচি হিসেবে। যেখানে নারীর অধিকার হরন থেকে শুরু করে বহু অযৌক্তিক কুরুচিপূর্ণ দাবী করেছিলেন । মেয়েরা ৪র্থ শ্রেণির বেশী পড়ার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কুএডুকেশান শিক্ষার দরকার কি?
তথ্য বিপ্লবের যুগেঃ
গ্লোবাল ভিলেজের সদস্য হয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এভাবে পিছিয়ে থাকবে– তা মেনে নেয়া যায় না।
কেউ কি কখনও ভেবেছিলো সতিদাহ প্রথা,সহমরণের মত নির্দয় ও নিষ্টুর বিধি বিধানের বিলুপ্তি ঘটবে। চৌকাঠের আড়াল থেকে বেরিয়ে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভেঙ্গে নারীরা জেগে ওঠার গান গাইবে। হাতে তুলে অস্ত্র শত্রুকে করবে প্রতিহত। বেগম রোকেয়াসহ নারী জাগরণের সকল শুভাকাঙ্ক্ষীকে এ কারণে ফুল হাতে সেলুট জানাতে হয়। যে নারীরা সূঁইয়ের ডগায় সূঁতা লাগানো ছাড়া আর কিছুই পারতো না, সেই নারী আজ মহামারী করোনার ভেকসিন আবিস্কারেও রেখেছে সফলতা। ২০২১ সালের দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার ১০০ জন বিজ্ঞানীর তালিকায় ওঠে এসেছে বাংলাদেশের তিন জন নারী বিজ্ঞানীদের নাম। গর্ব অহংকারে বলতে হবে নারীরা হলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বর্ণালী অধ্যায়ের সংযোজনের নাম।
নারীর নেই অর্থনৈতিক মুক্তি সে রাজনীতি করবে কিভাবে। বহু নারীরা ঘরের জমানো মুষ্টির চাল বিক্রি করে তার হাত খরচ ম্যানেজ করে। কে দেবে তাকে রাজনীতি করার জন্য অর্থের যোগান। সে যদি ছোট খাটো নির্বাচনও করে, তা হলে বেশ একটা অর্থের প্রয়োজন হয়। তারপরও বলবো নারীরা সকল ঝাই জামেলা প্রতিহত করে রাজনীতি করছে, প্রতিদিন অংশ গ্রহনের হার বাড়ছে।
আসুন ব্যক্তি, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে নারীদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেই। শুধু সন্তান উৎপাদন নয় ঘরে বাইরে বহু দায়িত্ব সে পালন করতে পারে। স্মরণীয় বরণীয় নারীরা যে ভাবে আলোর মশাল জ্বালিয়ে দুর করেছে অন্ধকার, নতুন প্রজন্মের নারীরা আরো দায়িত্বের সাথে হাতে তুলে হাতুরী সরাবে জঞ্জাল, এগিয়ে চলবে দুর্বার গতিতে। ভোরের আলোতে ফুটাবে সুগন্ধি ফুল,জ্বালাবে মঙ্গল প্রদীপ।