হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্থলচর প্রাণীর মধ্যে বৃহত্তম এবং নির্বিশেষ তৃণভোজী প্রাণী। প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র সুসংহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে হাতি। গুরুত্বপূর্ণ চারটি অবদান রাখছে—
প্রথমত, হাতি নতুন স্থানে বনায়ন ও উদ্ভিদের বিস্তারে ভূমিকা রাখে। তারা বীজ পরিবহনকারী হিসেবে কাজ করে। আফ্রিকান হাতি সবচেয়ে বড়। যদিও এশিয়ান হাতি আকারে ছোট, তবু প্রাণীজগতের অন্যতম তৃণভোজী হেভিওয়েট হিসাবে বিবেচিত। হাতি প্রচুর উদ্ভিদ সামগ্রী খায় প্রতিদিন। গাছপালা ভক্ষণের ফলে অনেক সময় বীজসহ তারা খেয়ে ফেলে এবং বীজগুলো তাদের অন্ত্রের মধ্যে পরিবহন করে। বিষ্ঠার মাধ্যমে সেগুলিকে নতুন স্থানে ফেলে। এইভাবে একটি উদ্ভিদের বীজ যেখানে প্রাথমিকভাবে খাওয়া হয়েছিল সেখান থেকে হাজার হাজার মিটার দূরে ফেলে দেয়।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হাতি ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের মধ্যে বীজ ছড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া হাতির গোবর হলো নিখুঁত সার। এটি বীজকে অঙ্কুরোদগম ও বৃদ্ধি করতে সাহায্যে করে। হাতির দ্বারা বীজ বিচ্ছুরণে উদ্ভিদদের নতুন অঞ্চলে উপনিবেশ করার সুযোগ তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাণীর জন্য নতুন আবাসস্থল এবং খাবার তৈরি করে। বীজ পরিবহন করে হাতি বনায়নের পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে।
দ্বিতীয়ত, হাতির বিষ্ঠা বাস্তুতন্ত্রকে উর্বর করে এবং উদ্ভিদের সংখ্যা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাতির বিষ্ঠার মধ্যে গোবরি বিটল পোকা বসে এবং তারাও সেখান থেকে খাদ্য সংগ্রহ ও বংশ বিস্তার করে। এবং বিষ্ঠায় ডুবে থাকে বিটল লার্ভা, যা গোবর থেকে খাবার সংগ্রহ করে। সেই লার্ভা আবার বিভিন্ন প্রাণীর খাবারের উৎস হিসেবে কাজ করে; যেমন মাঠের ইঁদুর।
তৃতীয়ত, হাতি নিজের প্রয়োজনে পানির জন্য গর্ত খোঁড়ে; তাতে তাদের প্রয়োজনীয় পানির পাশাপাশি অন্য প্রাণীদেরও খাবার পানি মেলে। বনে আগুন লাগলে তা ছড়িয়ে পড়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
চতুর্থত, হাতি তার আশেপাশের পরিবেশ পরিবর্তন করে। খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বড় গাছের নিচের অংশে বেড়ে ওঠা গাছপালা পরিচ্ছন্ন করে বনকে বদলে দেয়। হাতির আকারের কারণে হাতির চলার পথে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। বনাঞ্চলে হাতি পদদলিত করে আগাছা পরিষ্কার করে। এর ফলে সূর্যের আলো বনের তলায় পৌঁছায়, যা নিচু গাছগুলিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। এবং যেহেতু বিভিন্ন ধরনের প্রাণী বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে; তাই এটি প্রজাতির জীববৈচিত্র্যকে উন্নীত করতে সাহায্য করে। এবং জীবের বসবাসের জন্য নতুন স্থান তৈরি করে দেয়।
হাতি আজ বিলুপ্তির পথে! কারণ হাতির দাঁত মূল্যবান হওয়ায় প্রতি বছর আফ্রিকার বন্য হাতি শিকার বাড়ছে। আমাদের জীববৈচিত্র্য এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হাতি রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) হাতিকে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।