মানবিক পুলিশ পরিদর্শক জাফর আহম্মেদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশালের বানারীপাড়ায় গাড়ি না পেয়ে ফেরিঘাটে স্ট্রোকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া অসহায় বৃদ্ধা ফজিলাতুননেছাকে নিয়ে বসেছিলেন পুত্রবধূ ও দুই মেয়ে। টহলের সময় তা দেখে বৃদ্ধার জীবন বাঁচাতে নিজের পুলিশ ভ্যানে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান মানবিক পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.জাফর আহম্মেদ। এতে তিনি মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে ভূষিত হয়েছেন।

মাত্র এক মাস পূর্বে মামলা তদন্তে বরিশাল জেলার শ্রেষ্ঠ তদন্ত পুলিশ অফিসার হিসেবে পুরস্কার পাওয়া বানারীফাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.জাফর আহম্মেদ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফেরিঘাট থেকে ফজিলাতুন নেছাকে পুলিশ ভ্যানে হাসপাতালে নিয়ে যান।

তার কর্তব্যপরায়ণ দায়িত্ব পালনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন। পরিদর্শক মো.জাফর আহম্মেদ এর পূর্বেও উপজেলার একাধিক ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়া আইফোন উদ্ধার করে প্রশংসিত হন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বাইশারী গ্রামের বৃদ্ধা মা ফজিলাতুননেছা (৬৫) নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তার পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে একটি ট্রলারে তাকে নিয়ে উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য বানারীপাড়া ফেরিঘাটে পৌঁছান। সেখানে তারা সড়কের পাশের একটি বেঞ্চের ওপর বৃদ্ধা মা ফজিলাতুন নেছাকে বসিয়ে রেখে রিকশা-ভ্যান খোঁজাখুঁজি করছিলেন পুত্রবধূ ও দুই মেয়ে।

ফেরিঘাটে তারা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করার পরেও কোনো রিকশা-ভ্যান না পেয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে তার পুত্রবধূ ও দুই মেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। ওই দিন রাত অনুমান ১১টার দিকে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.জাফর আহম্মেদ তার পিকআপ ভ্যান নিয়ে বন্দর বাজারে ডিউটিরত পুলিশদের চেক করতে যান।

এ সময় তিনি ফেরিঘাটের একটি বেঞ্চে কয়েক জন নারীকে বসে থাকতে দেখে তাদের কাছে সেখানে বসে থাকার কারণ জানতে চান। এ সময় তারা বৃদ্ধা মা ফজিলাতুন নেছা স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানানোর পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে তারা গাড়ি না পেয়ে বৃদ্ধা মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন না বলে তাকে জানান।

এ সময় পরিদর্শক জাফর আহম্মেদ তাদের কথা শুনে দ্রুত বৃদ্ধা ফজিলাতুননেছাসহ তাদেরকে তার পিকআপ ভ্যানে তুলে উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেই ডাক্তারকে ডেকে আনেন এবং বৃদ্ধা ফজিলাতুন নেছাকে চিকিৎসা করান।

এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কবির হাসান যুগান্তরকে জানান, যে কোনো ব্যক্তি স্ট্রোক করলে প্রথমে তার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। এজন্য তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেখানে চিকিৎসক তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে ওই চিকিৎসক তার প্রয়োজনে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে পারেন।

তিনি বলেন, পরিদর্শক জাফর আহম্মেদ তার পিকআপ ভ্যানে যে বৃদ্ধাকে দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছেন, সে জন্যই ওই বৃদ্ধা চিকিৎসা সেবা পেয়ে সুস্থ আছেন। এজন্য তিনি পরিদর্শক জাফর আহম্মেদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এদিকে পরিদর্শক (তদন্ত) মো.জাফর আহম্মেদের এ মানবিকতা জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যে তার ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তাকে একজন মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রশংসিত করেন।

এছাড়াও ওসি (তদন্ত) মো. জাফর আহম্মেদের এ মানবিকতার প্রশংসা করে থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, আমরা এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিয়মিত মানুষের সেবক ও বন্ধু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর