ড.গোলসান আরা বেগমঃ করোনাকালিন সময় ২০২১ এর মাঝা মাঝি পর্যায়ে বাংলাদেশ ত্রিমুখী সমস্যায় হাবু ডুবু খাচ্ছে।একদিকে করোনা,অন্য দিকে ডেঙ্গু,চিকনগুনিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে,প্রায় ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। কভিড ১৯ এর আক্রান্তের হার ৪০% এসে দাঁড়িয়েছে।যা পার্শবতী রাষ্ট্র ভারতের চেয়েও বেশী। মৃত্যু হারও প্রতিদিন বাড়ছে।গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে করোনার প্রাদুভাব। আশংকা করা হচ্ছে এর ভয়াবহতা ভয়ঙ্কর আকার ধারন করতে পারে।
সরকার ঘোষিত লকডাউন, কটোর সাট ডাউনের যাঁতাকলে পড়ে মানুষ দুঃসহনীয় জীবন যাপন করছে। করোনার আতংকে কেউ ঘরে বন্দি,আবার জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে কেউ কাজ কর্মে রয়েছে নিয়োজিত। কেউ কেউ তো লক ডাউন মানতে রাজী নয়। সরকারকে গালাগাল ,দোষারুপ যা ইচ্ছা তা বলছে।দেশে বিদেশে টকশোতে বসে মহাঞ্জানী গুনীরা নানা পরামর্শ দিচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক কথা বলছে।। ঘুরানো পেছানো টক ঝাল মিস্টি কথায় করোনা প্রতিরোধে সরকারকে বলছে ব্যর্থ। অথচ অর্থ,অনুদান,প্রনোদনা,স্বাস্থ্যসেবা, ভ্যাকসিন, নগদ টাকা ইত্যাদি নানা ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে করোনা মোখাবেলায় সরকার সর্বক্ষণ কাজ করে যাচ্ছে।
বড় সমস্যা হলো লম্বা চওড়া কথা বললেও নিজের চরকায় কেউ তেল দিচ্ছে না। রাখছে না করোনা প্রতিরোধে জোড়ালো ভুমিকা। ১০০% মানুষ যদি মাক্স পড়তো, বিধি বিধান মেনে চলতো -করোনা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হতো। চারিদিকে চোখ রাখলে দেখবেন ২৫% লোকও মাক্স ব্যহার করে না। অদৃষ্টবাদে যারা বিশ্বাসী,তাদের কথা শুনলে তো চোখ কপালে ওঠে যায়। জন্ম মৃত্যু আল্লাহ হাতে। করোনায় মরন কপালে লিখা থাকলে মরবো। এই ধারনা পোষণ করে গ্রামে গঞ্জের বাজারে দোকানে আড্ডাটা জমে ওঠে বেশ রসালো গল্পে।চায়ের কাপে সেদ্ধ করে রাজনীতি,আরো করে নানা কুতর্ক, বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখায় করোনাকে।।
আমরা জানি কুকুরের লেজে সাত মন ঘি ঘষলেও লেজ সোজা হয় না। কিছু ঘাড় তেড়া লোক রয়েছে তারা হাজার বার বোঝানোর পরও বলছে- করোনা বলে কিছু নেই, ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজন নেই। এদের গোয়ার্তুমির জন্য লাশের পর লাশের মিছিল আরো বড় হতে পারে। চিকিৎসার অভারে রাস্তা ঘাটে মানুষ মরে পড়ে থাকতে পারে।গোড় কাফন করাবে কে কাকে এমন পরিস্থিতির সৃস্টি হতে পারে।ছোট বেলায় বাবার মুখে শোনেছি– কলেরা নামক ব্যাধিটি যখন পৃথিবীতে মহামারী আকারে আসছিলো,তখন এক জনের কবর সম্পন্ন করতে না করেতে আর এক জন লাশ হয়ে যেতো অাজকাল করোনায় স্বামী সকালে মারা গেলে বিকালে মারা যাচ্ছে স্ত্রী। যেন সুইয়ের ডগায় দাড়িয়ে আছে আমাদের জীবন।তারপরও আমাদের হুশ ঞ্জান হওয়ার লক্ষণ দেখছি না।
দমবন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবেশেও জন্মদিন উদযাপন হচ্ছে,বিয়ে উৎসব,পূঁজা-ঈদ উদযাপন, আনন্দ ফুর্তি থেমে নেই। লুটপাট,দুনীতি,চুরিচামারি, হত্যা খুনাখুনি ইত্যাদিও পাল্লা দিয়ে চলছে। এদিকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বন্ধ। অটো পাশ সাটির্ফিকেট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের । যা ভবিয্যৎ জাতি গঠনের জন্য সুখবর নয়। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হলেও জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। দিন আনে দিন খায় তাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ছেড়ে,চাকুরী হারিয়ে বাড়ি ফিরেছে বহু মানুষ। এদের কী হবে,এ ব্যাপারে চিন্তা করা জরুরী হলেও পথ বের করা যাচ্ছে না।
করোনা চলে যাবে পৃথিবী থেকে তাড়াতাড়ি তার লক্ষণও দেখছি না।্আমরা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে হাতে নিয়ে কচু পাতার টলমল জলে বসবাস করছি।মাথায় রেখে হাত করছি হা-হুতাশ। গাঢ় অন্ধকার চার দিক থেকে ধেয়ে আসছে,কবে নতুন করে করোনাবিহীন সোনালি সুর্যের উদয় হবে কেউ বলতে পারছে না। মানুষিক ভাবে বহুজন ভেঙ্গে পড়ছে, করছে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি।্
লেখকঃ কবি,উপদেষ্টা- বাংলাদেশ কৃষকলীগ।