ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর ‘নির্দোষ’ জেনে যে প্রতিক্রিয়া জানালেন নুসরাত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১
  • ১৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের চাঞ্চল্যকর ঘটনা কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু। ওই মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সংশ্লিষ্ট মামলায় আনভীরের জড়িত থাকার কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপরই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নুসরাত। তিনি বলছেন, মামলা থেকে আনভীরের অব্যাহতির আবেদনের ওপর নারাজি (প্রতিবেদনের ওপর অনাস্থা) দেবো।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেল পাঁচটায় বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, এটা তো অন্যায়। আমি আদালতে নারাজি দেব। আনভীরকে যদি অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে দেশে অন্যায়ের বিচার হবে কী করে?’

তিনি বলেন, ‘দেড় মাস আগে এডিসি নাজমুল সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারপর আমি অনেকবার পুলিশকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার ফোন আর ধরে না। ফোন না ধরায় আমি বুঝতে পেরেছি কোনো একটা কিছু হতে যাচ্ছে। আজ গণমাধ্যমে জানতে পারলাম, তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ শুরুতেই বলছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। কিন্তু আনভীর জড়িত থাকার পরও তাকে কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হল, সেটা তো আমি জানি না। তবে আগামী ২৯ জুলাই ধার্য তারিখ রয়েছে। আমি আদালতে যাব এবং নারাজি দেব।’

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘মুনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। এটি গত সোমবার (১৯ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দাখিল করা হয়।’

গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।

ঘটনার দিন রাতেই মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগ করা হয়, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।

এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মাসের (মার্চ) ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।

গত ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন ও হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া নুসরাতের কাছে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’

মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, মুনিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক, মালিকের মেয়ের জামাইসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলা সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে পুলিশ।

মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন সেই ভবনের বেশকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করে পুলিশ। সেসব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পায় তারা। তবে ঘটনার দিন বা এর আগের দিন মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে এই দুই দিন সন্দেহজনক কারও যাতায়াত ওই বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের আশপাশে পাওয়া যায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর ‘নির্দোষ’ জেনে যে প্রতিক্রিয়া জানালেন নুসরাত

আপডেট টাইম : ১২:০২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের চাঞ্চল্যকর ঘটনা কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু। ওই মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সংশ্লিষ্ট মামলায় আনভীরের জড়িত থাকার কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপরই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নুসরাত। তিনি বলছেন, মামলা থেকে আনভীরের অব্যাহতির আবেদনের ওপর নারাজি (প্রতিবেদনের ওপর অনাস্থা) দেবো।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেল পাঁচটায় বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, এটা তো অন্যায়। আমি আদালতে নারাজি দেব। আনভীরকে যদি অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে দেশে অন্যায়ের বিচার হবে কী করে?’

তিনি বলেন, ‘দেড় মাস আগে এডিসি নাজমুল সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারপর আমি অনেকবার পুলিশকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার ফোন আর ধরে না। ফোন না ধরায় আমি বুঝতে পেরেছি কোনো একটা কিছু হতে যাচ্ছে। আজ গণমাধ্যমে জানতে পারলাম, তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ শুরুতেই বলছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। কিন্তু আনভীর জড়িত থাকার পরও তাকে কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হল, সেটা তো আমি জানি না। তবে আগামী ২৯ জুলাই ধার্য তারিখ রয়েছে। আমি আদালতে যাব এবং নারাজি দেব।’

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘মুনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। এটি গত সোমবার (১৯ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দাখিল করা হয়।’

গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।

ঘটনার দিন রাতেই মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগ করা হয়, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।

এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মাসের (মার্চ) ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।

গত ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন ও হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া নুসরাতের কাছে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’

মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, মুনিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক, মালিকের মেয়ের জামাইসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলা সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে পুলিশ।

মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন সেই ভবনের বেশকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করে পুলিশ। সেসব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পায় তারা। তবে ঘটনার দিন বা এর আগের দিন মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে এই দুই দিন সন্দেহজনক কারও যাতায়াত ওই বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের আশপাশে পাওয়া যায়নি।