চলমান এশিয়া কাপ যেখান থেকে শুরু করেছিল বাংলাদেশ রোববার শেষ করবে সেখান থেকেই। শিরোপা নির্ধারণি ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ভারত। যারা কিনা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফর্ম আর আত্মবিশ্বাসে বৃহস্পতির তুঙ্গে আছে। আসরে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপ্রতিরোধ্য দলও তারাই। তাই বলে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের সমীহ করছে না স্বাগতিক শিবির। ফাইনালে যে কোনো কিছুই হতে পারে বলে হুংকার ছেড়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল।
স্বপ্নের শিরোপা থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে আছে বাংলাদেশ। রবিরাতে প্রতিবেশী ভারতকে হারালেই চার বছর আগের দুঃস্মৃতি ভুলতে পারবে বাংলাদেশ। ২০১২ এশিয়া কাপের জমাট বাধা কান্না মুছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জাগরণই হবে টাইগারদের। তবে কাজটা সহজ হবে না।
শিরোপা লড়াইকে সামনে রেখে শুক্রবার অনুশীলনের ফাঁকে তামিম তেমনটাই দিলেন। বলেছেন, ‘ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তাদের সঙ্গে যারাই প্রতিপক্ষ থাকে, তাদের ভিন্ন ধরনের অনুভূতি থাকাটাই স্বাভাবিক।’ ক্ষুদ্রাকৃতির ক্রিকেটে ভারত যে সাম্প্রতিককালের সেরা ফর্মে সেটা বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ক্রিকেটপাঠ করিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে।
আমিরাতকে মাত্র ৮১ রানে বেঁধে দিয়ে ধোনি-রোহিতরা জিতেছেন ৫৯ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখে। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচেও পরিস্কার ফেভারিট ভারত। কিন্তু ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য, অনিশ্চয়তার টি-টোয়েন্টি এবং জয়েরধারায় থাকায়
Asia-Cup-Bangla10309আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই বাংলাদেশ শিবিরেও। তামিম তাই বললেন, ‘ওরা এশিয়া কাপে ভালো ক্রিকেট খেলছে। সেই সঙ্গে আমরাও খুব ভালো খেলছি। শেষ তিনটি ম্যাচে আমরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ফাইনালে যে কোন কিছুই হতে পারে। যে দল ভালো খেলবে তারাই জিতবে।’
সদ্য পুত্র সন্তানের বাবা হওয়া দেশের সেরা ব্যাটসম্যান ভারতবধের মন্ত্রটাও বললেন, ‘একটি জিনিস নিশ্চিত, ভারতের সঙ্গে জিততে হলে তিন বিভাগেই আসাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। সব বিভাগেই আমাদের থাকতে হবে অনেক শক্তিশালী। কারণ প্রথম ম্যাচে ওরা খুব বাজে অবস্থা থেকে ফিরে এসে ম্যাচ জিতেছে। ওদের সেই দক্ষতা আছে। ওই ভুলগুলো আমরা কম করলে সবকিছুই সম্ভব।’ চলমান এশিয়া কাপে শুধু ব্যাটিংয়েই ভারত দেখিয়েছে তাদের বোলিং বৈচিত্রতাও।
মূলত বোলাররাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, স্বাগতিক বাংলাদেশ ও খর্বশক্তির দল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ভারতের জয়ের পথটা মসৃন করে দিয়েছেন। তাই কোহলি-রোহিত-যুবরাজদের আগ্রাসী ব্যাটিং বিভাগ তো আছেই বাংলাদেশকে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে ভারতীয় বোলিং আক্রমণ নিয়েও। যে কারণে বাংলাদেশ সতর্ক প্রতিপক্ষের দুই বিভাগ নিয়েই।
তবে টাইগাররা নিজেদের নিয়েই ভাবছেন বলে জানালেন তামিম, ‘আমি বিশেষ কোনো একজনের নাম বলবো না। তারা প্রত্যেকেই ভালো বোলার। ভারতের সবাই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। আমরা আমাদের নিয়েই ভাবছি। একটি খারাপ বল পেলে তার সদ্বব্যবহার আর ভালো বল হলে তাকে সমীহ করা।’ প্রতিপক্ষ ভারত বলেই একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। টাইগারদের এই আত্মবিশ্বাস কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে ইতিহাস। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে হারানো কিংবা হোম কন্ডিশনে ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো এই দু্ইয়ে মিলে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে মাশরাফিবাহিনী।
এই দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে তামিম স্মৃতি রোমান্থনই করলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ভালো কিছু ইনিংস খেলার স্মৃতি তো অবশ্যই মনে পড়ে। আমরা বিশ্বাস করি, একটা দল যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, আমরা যদি আমাদের মতো খেলি, তাহলে যে কোনো দলকে হারাতে সক্ষম। যা আমরা প্রমাণ করেছি। ভারতের সর্বশেষ সিরিজে তাদেরকে আমরা হারিয়েছি। যদিও সেটা অন্য ফরম্যাট ছিলো। তারপরও আমরা যদি ভুল কম করি, তাহলে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে।’ অতীত ঘাঁটলে অনুপ্রেরণা পাওয়া যেতে পারে এটা ঠিক।
কিন্তু ময়দানি লড়াইয়ে সেদিকে তাকানোর সুযোগ কই। তাই রোববার নতুন করেই শুরু করতে চান টাইগারদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলা তামিম, ‘আগে আমরা মোটামুটি ভালো খেলেছি। কিন্তু এগুলো অতীত। রবিবার যখন আমি শুরু করবো তখন নতুন একটি দিন। আমাদের শূণ্য থেকেই শুরু করতে হবে।’ বাংলাদেশের এই শুরুটা যেন হয় উৎসবমুখর। তেমন স্বপ্নই দেখছে টাইগাররা। এমন কিছুর প্রত্যাশায় আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও।