হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর তোপখানা এলাকায় ১২ বছর বয়সী শিশু গৃহকর্মী সুইটিকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আসামি নাহিদ জাহান আখি কারণে-অকারণে সুইটিকে নির্যাতন করতেন। সুইটিকে নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে সুইটির সঙ্গে ঘটে যাওয়ার বর্বর ঘটনার বর্ণনা।
মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার বাদী শহিদ মিয়া সংসারের অভাবের কারণে নয় মাস আগে তার মেয়ে সুইটিকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতে মাসিক তিন হাজার টাকায় আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখির সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী সুইটিকে নিয়ে যায় আসামিরা। এরপর বাদী আসামিদের কাছ থেকে দুই মাসে মোট ছয় হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপর থেকে আসামিরা বিগত সাত মাসে বাদী বা ভুক্তভোগী সুইটিকে কোনো টাকা পয়সা দেয়নি।
মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর বাবা শহিদ মিয়া তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আখির বাসায় যান। কিন্তু তার সঙ্গে আসামিরা ভুক্তভোগী সুইটির দেখা বা মোবাইলে কথা বলতে দেয়নি। গত ৩ জুলাই রাতে শাহবাগ থানার পুলিশ বাদীকে ফোন জানায়, গত ১ জুলাই তার মেয়ে সুইটিকে আসামি তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখি মারপিট করে গুরুতর জখম করেছে। বর্তমানে সুইটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
চিকিৎসাধীন সুইটি জানায়, সে ঠিকমতো কাজ না করার অজুহাতে আসামি তানভীর ও তার স্ত্রী নাহিদ বিভিন্ন কারণে-অকারণে তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ অমানবিকভাবে মারপিট করতো। কিন্তু মারপিটের ঘটনা আসামি নাহিদের বাবা, মা ও ভাইবোনকে জানালেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১ জুলাই বেলা ১১ টায় আসামিরা বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ঘরে থাকা লাঠি দিয়ে সুইটির হাতে, পায়ে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের মাধ্যমে জখম করে। একইদিন রাত ১০ টায় সুইটির পরা কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মশা মারার ইলেকট্রনিক ব্যাট দিয়ে তার পশ্চাতদেশে শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। এছাড়া আসামি তানভীর ও আখি রুটি তৈরির কাঠের বেলুনি দিয়ে সুইটির দুই হাঁটু, পা, পিঠে, দুই হাতের বিভিন্ন জায়গায়, বাম চোখের ওপরে আঘাত করে চামড়া তুলে ফেলে এবং অনেক জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আখি কাঠের বেলুনি দিয়ে সুইটির বাম হাতের কনুইয়ে হাড় ভাঙা জখম করে। আসামি আখি সুইটির গোপনাঙ্গে বেলুনি ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। যার ফলে সুইটির গোপনাঙ্গ বিকৃতসহ ক্ষতবিক্ষত হয়। আখি ভুক্তভোগী সুইটির চোখে, মুখে ও গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়োও লাগিয়ে দেয়। সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য আসামিদের বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে ভাত খেতে না দিয়ে তাকে বাথরুমে আটকিয়ে রাখা হয়। গত ৩ জুলাই বাথরুম থেকে সুইটি বের হয়ে ঘরে রাখা বিস্কুট খাওয়ার কারণে আসামিরা রাগান্বিত হয়ে তাকে মারধর করে। এরপর ভুক্তভোগী সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে পাশ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নেয়।
এদিকে গত সোমবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় ভুক্তভোগীর বাবা শহিদ মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় আসামিদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া ভুক্তভোগী সুইটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আছে বিধায় পরবর্তী প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখা এবং জামিন না দেওয়ার জন্য শাহবাগ থানার এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন আবেদন করেন।
এসময় আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমানের আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে শনিবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে সেগুনবাগিচার বাসা থেকে তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আখিকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।