হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীর সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক বড় নিবিড়। টেনশনতাড়িত মানুষ নদীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই এক মুহূর্তের ভালোটুকু খুঁজে পায়।
বহুকাল ধরেই নদী ও প্রকৃতি মানুষের জীবনজীবিকা, টিকে থাকাসহ সব ধরনের মানসিক সুস্থতাও দান করে চলেছে।
শুধু মানুষই নয়, নদীর ওপর নির্ভর করে আছে নানান জীববৈচিত্র্য। পাখিও তার মধ্যে একটি। আমরা যে পাখিটি নিয়ে আলোচনার করছি সে পাখি অবশ্য জলচর হাঁসের মতো নদীর পানিতে ভেসে বেড়ায় না। সে নদীর পাড়ের গর্তে বাসা করে।
নদীরপাড়ের গর্তেই সে তার পরবর্তী প্রজন্মটিকে উৎপন্ন করে। স্নেহ, মমতা, খাবার, উত্তাপ প্রভৃতি দিয়ে তাদের বড় করে তোলে। নদী এবং নদী অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল এ পাখিটি নাম- ‘নীললেজ সুঁইচোরা’ (Merops philippinus)। এর ইংরেজি নাম Blue-tailed Bee-eater.
এ পাখিটির শারীরিক সৌন্দর্য এতই আকর্ষণীয় যে এর থেকে সহজে দৃষ্টি ফেরানো যায় না। এর পালকে পালকে যেন নানান রঙের বর্ণাঢ্য মেলা। যেন এক প্রকৃতির সবুজ।
এ পাখিটি সম্পর্কে পাখি আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক শোভন বলেন, আমাদের দেশে যে চার প্রজাতির সুইচোরা (Bee-eater) পাওয়া যায় তার মধ্যে এই ‘নীললেজ সুইচোরা’ একটি প্রজাতি এবং এরা সবাই রেসিডেন্ট বার্ড (আবাসিক পাখি)। এ পাখিরা সারাদেশে ব্রিড (প্রজনন) করে না। এদের আমি তাদের ব্রিড করতে দেখেছি উত্তরবঙ্গ এবং নর্থবেঙ্গলের এলাকাগুলোতে। তবে এই বছর এরা ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে ব্রিড করছে। এই পাখিগুলো নদীরপাড়ের বালুতে বাসা করে। আমি সেখানেই তাদের একটা ঝাককে বাসা করতে দেখেছি। এই ছবি দুটো আমি সেখান থেকেই তুলেছি।
তিনি আরো বলেন, এরা আসলে বনের পাখি না। এরা নদীর পাড়ে বসবাস করে থাকা পাখি। কলোনির মতো অনেকগুলো পাখি একসঙ্গে বাসা করে। এরা লোকালি (স্থানীয়ভাবে) মাইগ্রেড (পরিযায়ন) করে আমি যতদূর জানি। শীতের সময় একটু সাউথের দিকে নেমে ছড়াগুলোতে যায়। ব্রিডিং টাইমে (প্রজনন সময়ে) নর্থে নদীর পাড়ে এসে এই জায়গাগুলোতে বাসা করে।
এর শারীরিক বর্ণনা প্রসঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ পাখিগুলো দেখতে অনেকটা আমাদের শালিকের সমান। দৈর্ঘ্যে ২৩ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার। এদের থুতনি হলুদ, গলা তামাটে আর পুরো দেহ সবুজ। সেই সঙ্গে নীললেজ তো রয়েছেই। চাওড়া নীল লেজের মাঝের পালক সুঁইয়ের মতো সরু ও লম্বা। এই নীললেজের বিশেষত্বের জন্যই তার ইংরেজি নামকরণ হয়েছে- ‘ব্লু ট্রেইল্ড’।
প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও লেখক ইনাম আল হক বলেন, নীললেজ-সুঁইচোরাদের প্রজননকাল মার্চ-জুন। এ সময় তারা তাদের নিজস্ব কলোনির প্রজনন করে। তাদের প্রিয় স্থান নদীর খাড়া তীর, বালিময় খাড়া উঁচু পাহাড় বা সমতল বালিতীরের মধ্যে প্রায় ২ মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ। সেখানেই তারা বাসা তৈরি করে ৫টি থেকে ৭টি ডিম পাড়ে।
নীললেজ-সুঁইচোরা সচরাচর জোড়ায় বা ছোট ঝাঁকে থাকে। ছেলে ও মেয়ে পাখি চেহারায় কোনো পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্গা, মালদ্বীপ থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান এ পাখি গবেষক।