হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র আড়াই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ! তা-ও আবার পাটের বীজ বিক্রয়ে। এই অভিযোগে বিচার হয় সামরিক আদালতে। সেই আদালত অভিযুক্ত ওবায়দুল আলমকে জেল-জরিমানা করে। হন চাকরিচ্যুত। সামরিক আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ৩৯ বছর পর চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে এলো জয়। একই সঙ্গে পাবেন চাকরি জীবনের বেতন-ভাতাদিসহ সব সুবিধাদি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে গতকাল সোমবার এ রায় দেন।
রায়ের পর পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল ন্যায়বিচার পাব। সর্বোচ্চ আদালত থেকে আমি তা পেয়েছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ক্ষমতায় আসাকে বৈধতা দিয়ে সংবিধানে আনা হয় সপ্তম সংশোধনী। এক রিট মামলায় ২০১১ সালে ঐ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এর পরই সামরিক আদালতের দেওয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে আইনি লড়াইয়ে নামেন ওবায়দুল। রিট করেন হাইকোর্টে। সেখানে সামরিক আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০১৭ সালে ঐ রিটের রায়ে হাইকোর্ট সামরিক আদালতের সাজার রায় ও জরিমানার আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে।
একই সঙ্গে সাজা বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবসর পর্যন্ত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত বছরের ৮ মার্চ আপিল বিভাগ সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের অংশ বাদ (এক্সপাঞ্জ) দিয়ে দেয়। তবে বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধাদি প্রদানের রায় বহাল রাখে।
এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউ পিটিশনে যুক্তি ছিল, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর ২৯ বছর কেটে গেলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি রিটকারী। মার্শাল ল’ প্রত্যাহারের পর এ সংক্রান্ত রিভিউ কমিটির কাছেও কোনো আবেদন করেননি। ফলে তিনি কোনো সার্ভিস বেনিফিট পেতে পারেন না। গতকাল ঐ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ এবং ওবায়দুলের পক্ষে প্রবীর নিয়োগী শুনানি করেন। আইনজীবীরা জানান, ৩৯ বছর পর চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে জয়ের পর ওবায়দুল আলম বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা পেতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকল না।