আশ্রয়ণ প্রকল্পেও দুর্নীতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পটিও দুর্নীতিমুক্ত নয়। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার ঘটনাটি অন্তত সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম। সেই সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে এলাকার ভূমিহীনদের জন্য ২১৭টি ঘর নির্মাণে সরকার অর্থ বরাদ্দ করে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ১ লাখ টাকা খরচ ধরে প্রকল্পে মোট ব্যয় হয় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও নিজে লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেই এককভাবে কাজগুলো করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত ১১টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ঘর নির্মাণ প্রকল্পে নিজস্ব রাজমিস্ত্রি নিয়োগ দেওয়া, বিধিবহির্ভূতভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে কোনো কিছু অবহিত না করে এককভাবে ব্যাংক লেনদেন করা, কাজ শেষ না করেই বিল তুলে নেওয়া ইত্যাদি।

কাজীপুর উপজেলার সাবেক এই নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে উপসচিব পদমর্যাদায় বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গত জানুয়ারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। এরপর এ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ তদন্তে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিভাগীয় মামলার তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসাবে এখন বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজে কাজীপুর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা যে দুর্নীতি করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তিনি শুধু দুর্নীতিই করেননি, এককভাবে কাজ করে সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা ও নীতি লঙ্ঘন করেছেন। তার এ ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে তার উচিত ছিল, ভূমিহীনদের মতো অসহায় একটি শ্রেণির জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত রাখা। অথচ তিনি মোটা দাগে ১১ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। আমরা আশা করব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর