ঢাকা ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম আজও মেলে বাংলার শেষ নবাবের দরবারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১
  • ১৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের কাঠিয়াওয়াড়া অঞ্চলে এক বিশেষ প্রজাতির আমকে মহারাণী বলা যায়। যার আসল নাম নূরজাহান।

মূলত গুজরাট সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলায় কাঠিয়াওয়াড়া অঞ্চলে ফলন হয় নূরজাহানের। তবে এর আদি নিবাস আফগানিস্তান।

প্রতিটা আমের ওজন কমবেশি আড়াই থেকে তিন কিলোর মতো। যার দাম ভারতের বাজারেই পড়ে হাজার থেকে ১২শ রুপি। তবে নূরজাহানের দাম ওজনে নির্ধারণ হয় না। প্রতিটির আমের দাম ঠিক হয় সাইজের উপর। নূরজাহানের বাজারের চলতি নাম মহারাণী। তবে ভারতের নিরিখে আমের মহারাণীর বসতভিটে মধ্যপ্রদেশ হলেও আমের রাজার বসতভিটে পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদে। নাম কোহিতুর।

 

তথ্যমতে, এখনও পর্যন্ত সম্ভবত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। নাম, দাম, স্বাদ, গন্ধ-সবেতেই রাজকীয়ভাব বহন করে কোহিতুর। টাকা থাকলেও সহজলভ্য নয় কোহিতুর। অ্যান্টিক গহনা বা আসবাবের মতো এই আমের নিলাম হয়। এক একটির আমের দাম ওঠে ১৫০০ রুপির বেশি। ওজন ১৪০ গ্রাম থেকে দুই কিলোর মধ্যে। এর কয়েকটি প্রজাতি আছে। যেগুলোর দাম ৪শ থেকে ৫শ রুপির মতন। তবে নবাবী কোহিতুরের সবচেয়ে বেশি দাম।

সাধরণত বাংলাবাসী আম মাত্রই খবর রাখেন ল্যাংড়া, হিমসাগর, তোতাপুরী, গোলাপ খাসের, বড়জর অ্যালফানসো। কিন্তু এই নবাবী আমলের আমটির তেমন একটা প্রচার নেই বলে খুব এটা নজরে পড়ে না আমআদমির। হাতেগোনা কিছু আমপ্রেমী কোহিতুরের খোঁজ খবর রাখেন।  রাজ্যে একমাত্র মুর্শিদাবাদে কোহিতুরের দেখা মিললেও এর আদি নিবাস জাপান। শোনা যায়, আঠারোশ শতকে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এই গাছ জাপান থেকে সংগ্রহ করে লাগিয়েছিলেন নিজেদের নবাবী বাগানে। শুধু তাই নয় এই আমের দেখভালের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিলেন কর্মচারীরা। পরে এই আম গাছের দেখভালের জন্য তাদের মাইনে করে রেখেছিলেন।

একমাত্র আম সৌখিন নবাবের জন্য কহিতুর কেটে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হত। এছাড়া এ স্বাদের ভাগ মিলত নবারের খাসলোক এবং বিশেষ অতিথি আপ্যায়নে। এরপর আঁটিগুলি নষ্ট করে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ ছিল নবাবের। কোহিতুরের আঁটি নষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল, এই বিশেষ প্রজাতির গাছের উপর একচেটিয়া নবাবী অধিকার কায়েম রাখা। অন্য কোথাও এই গাছ যাতে কেউ লাগাতে না পারে।

ইতিহাস বলছে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও ছিলেন আমপ্রেমী। তার আমলেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রজাতির আম গাছের চারা সংগ্রহ করে এনে সেগুলিকে মুর্শিদাবাদে নবাবী বাগানে রাখা হতো। তবে কোহিতুর ছিল এই নবাব বংশের খাস সম্পদ। মুর্শিদাবাদের আম চাষিদের মতে, ৩০০ বছরের নবাবী কোহিতুর আমের ফলন এখন আর তেমনটা হয় না। সেই গাছের সংখ্যাও হাতে গোনা। বছর দুয়েক আগের হিসেব অনুযায়ী গোটা মুর্শিদাবাদে এই দুষ্প্রাপ্য নবাবী আম গাছের সংখ্যা ২৫-৩০টা।

কলকাতার আমপ্রেমীদের মতে, হিরের দুনিয়ায় যেমন কোহিনুর, তেমন আমে কোহিতুর। বর্তমানে কলকাতার হাতেগোনা দু’একটা বড় ফল ব্যবসায়ীর ঝুড়িতে তুলোর মোড়কে অতি যত্নে নজরটানে নবাবী কোহিতুরের। লটারির মতন আজও জুটে যায় কোনো কোনো ভাগ্যবানের কপালে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলার সম্পদ হিসেবে রসগোল্লার পর কোহিতুরের জিআই ট্যাগ লাগানোর উদ্যোগী হয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম আজও মেলে বাংলার শেষ নবাবের দরবারে

আপডেট টাইম : ০৯:৪৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের কাঠিয়াওয়াড়া অঞ্চলে এক বিশেষ প্রজাতির আমকে মহারাণী বলা যায়। যার আসল নাম নূরজাহান।

মূলত গুজরাট সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলায় কাঠিয়াওয়াড়া অঞ্চলে ফলন হয় নূরজাহানের। তবে এর আদি নিবাস আফগানিস্তান।

প্রতিটা আমের ওজন কমবেশি আড়াই থেকে তিন কিলোর মতো। যার দাম ভারতের বাজারেই পড়ে হাজার থেকে ১২শ রুপি। তবে নূরজাহানের দাম ওজনে নির্ধারণ হয় না। প্রতিটির আমের দাম ঠিক হয় সাইজের উপর। নূরজাহানের বাজারের চলতি নাম মহারাণী। তবে ভারতের নিরিখে আমের মহারাণীর বসতভিটে মধ্যপ্রদেশ হলেও আমের রাজার বসতভিটে পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদে। নাম কোহিতুর।

 

তথ্যমতে, এখনও পর্যন্ত সম্ভবত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। নাম, দাম, স্বাদ, গন্ধ-সবেতেই রাজকীয়ভাব বহন করে কোহিতুর। টাকা থাকলেও সহজলভ্য নয় কোহিতুর। অ্যান্টিক গহনা বা আসবাবের মতো এই আমের নিলাম হয়। এক একটির আমের দাম ওঠে ১৫০০ রুপির বেশি। ওজন ১৪০ গ্রাম থেকে দুই কিলোর মধ্যে। এর কয়েকটি প্রজাতি আছে। যেগুলোর দাম ৪শ থেকে ৫শ রুপির মতন। তবে নবাবী কোহিতুরের সবচেয়ে বেশি দাম।

সাধরণত বাংলাবাসী আম মাত্রই খবর রাখেন ল্যাংড়া, হিমসাগর, তোতাপুরী, গোলাপ খাসের, বড়জর অ্যালফানসো। কিন্তু এই নবাবী আমলের আমটির তেমন একটা প্রচার নেই বলে খুব এটা নজরে পড়ে না আমআদমির। হাতেগোনা কিছু আমপ্রেমী কোহিতুরের খোঁজ খবর রাখেন।  রাজ্যে একমাত্র মুর্শিদাবাদে কোহিতুরের দেখা মিললেও এর আদি নিবাস জাপান। শোনা যায়, আঠারোশ শতকে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এই গাছ জাপান থেকে সংগ্রহ করে লাগিয়েছিলেন নিজেদের নবাবী বাগানে। শুধু তাই নয় এই আমের দেখভালের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিলেন কর্মচারীরা। পরে এই আম গাছের দেখভালের জন্য তাদের মাইনে করে রেখেছিলেন।

একমাত্র আম সৌখিন নবাবের জন্য কহিতুর কেটে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হত। এছাড়া এ স্বাদের ভাগ মিলত নবারের খাসলোক এবং বিশেষ অতিথি আপ্যায়নে। এরপর আঁটিগুলি নষ্ট করে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ ছিল নবাবের। কোহিতুরের আঁটি নষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল, এই বিশেষ প্রজাতির গাছের উপর একচেটিয়া নবাবী অধিকার কায়েম রাখা। অন্য কোথাও এই গাছ যাতে কেউ লাগাতে না পারে।

ইতিহাস বলছে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও ছিলেন আমপ্রেমী। তার আমলেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রজাতির আম গাছের চারা সংগ্রহ করে এনে সেগুলিকে মুর্শিদাবাদে নবাবী বাগানে রাখা হতো। তবে কোহিতুর ছিল এই নবাব বংশের খাস সম্পদ। মুর্শিদাবাদের আম চাষিদের মতে, ৩০০ বছরের নবাবী কোহিতুর আমের ফলন এখন আর তেমনটা হয় না। সেই গাছের সংখ্যাও হাতে গোনা। বছর দুয়েক আগের হিসেব অনুযায়ী গোটা মুর্শিদাবাদে এই দুষ্প্রাপ্য নবাবী আম গাছের সংখ্যা ২৫-৩০টা।

কলকাতার আমপ্রেমীদের মতে, হিরের দুনিয়ায় যেমন কোহিনুর, তেমন আমে কোহিতুর। বর্তমানে কলকাতার হাতেগোনা দু’একটা বড় ফল ব্যবসায়ীর ঝুড়িতে তুলোর মোড়কে অতি যত্নে নজরটানে নবাবী কোহিতুরের। লটারির মতন আজও জুটে যায় কোনো কোনো ভাগ্যবানের কপালে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলার সম্পদ হিসেবে রসগোল্লার পর কোহিতুরের জিআই ট্যাগ লাগানোর উদ্যোগী হয়েছেন।