হাওর বার্তা ডেস্কঃ সোনাঝরা এই ফুলের নাম সোনালু। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ-সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। আবার ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ।
সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি বৈজ্ঞানিক নাম কাঁশিয়া। সোনালী রঙের ফুলবিশিষ্ট বৃক্ষ। উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসে ফেবশিয় গোত্রের এ বৃক্ষের ফল লম্বাটে। সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই ‘সোনালু’ নামে নামকরণ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও এর নাম অমলতাস। ইংরেজি ভাষায় একে বলা হয় সোনার স্নান ফুল।
নরসিংদী জেলার সবক’টি উপজেলায়ই এই সোনালু গাছটি একসময় অনেকর চোখে পরতো। দেখে দেখে আবেগি হয়ে উঠতো মন। সময়ের বিবর্তনে গাছটি এখন আর কেউ রোপন করেনা। তবে বন বাদারে এই বৃক্ষটি তার ফলের বীজ থেকেই প্রকৃতিক নিয়মে জোপ জঙ্গলে জন্মাতো। নির্বিচারে কর্তণের ফলে এই বৃক্ষটি বিলুপ্তির পথে।
আগামী প্রজন্ম হয়তো বলতেই পারবেনা এই ফুলের কথা। শৈশবে স্কুলে যাওয়ার পথে এই গাছের লম্বা ফল যাকে বান্দরলাঠি বলা হতো সে গুলো গাছ হতে পেরে অনেকেই খেলায় মেকে উঠতো। পাকা ফল গুলো খেতে মিষ্টি লাগতো।
রাস্তার পাশেই প্রচুর সোনালু বৃক্ষ নিজ সৌন্দর্য নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো। স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা মিলে গাছ হতে ফুল নিয়ে একজন আরেক জন সহপাঠীকে দিয়ে অনেক আনন্দ হতো। আজ তা কেবলই স্মৃতি। বৃক্ষটি খুব কমই দেখা মেলে।
সোনালু ফুল দেখতে খুবই মনোহর্ষক। সৌন্দয্যের এক নন্দিত নকঁশী করা এক সোনালী ক্লিওগ্রাফি। গ্রীষ্ম রাঙানো এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তার নামের বাহার- সোনারু, সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
থোকা থোকা সোনালু ফুল যখন চৈত্র-বৈশাখে ডাল পল্লবিত করে ফুটে তখন মনে হয় বৃক্ষটি ডাল ভেঙ্গে পড়বে। নুয়ে ফুলেল এই সোনালি শাখাগুলো যেন পথিককে ডেকে বলে, মধু মালতি ডাকি আয় মধুর সুর ঝংকারে মানুষ্য মননে এক অনন্য জাগরনে ভরে তোলে।
এই সোনালুবৃক্ষেটি একটি ঔষধি ভেজষগুণ সমৃদ্ধ লতানো গাছ। এর ফুল কান্ড ডাল এবং ফল সবকিছুই কবিরাজি বা আয়ুর্ব্যাদিক ওসধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। দেশজ ভাবে বাংলাদেশের বহু মানুষ এই বৃক্ষ খুঁজে তার বান্দর লড়ি এনে সিদ্ধ করে কাশের জন্য সেবন করে। তাছাড়া কৃমিনাশক ও লিভারের মহৌষধি তো বটেই।