ঢাকা ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসির বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৫৭৭ বার

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান করতে চার দিনের ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট গ্রহণের দিন, আগের দু’দিন ও পরের দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে থাকবে কোস্টগার্ড। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় ১৭ জন পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃংখলা বাহিনীর ১৯ জন সদস্য। ইসি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আরও জানা গেছে, এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকি করতে ৩ মার্চ থেকে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইসির এ পরিকল্পনা আগামী ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় আইনশৃংখলা-সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মূলত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, সেই আলোকে এবারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ওই নির্বাচনে সেনা ও নৌবাহিনী সীমিত পরিসরে মোতায়েন করা হলেও এবার তা ইসির পরিকল্পায় রাখা হয়নি। পাশাপাশি কমিয়ে আনা হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। ২০১১ সালে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় আইনশৃংখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েনের পরও সহিংসতা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। অথচ ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচন করার পরও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আগের ইউপি নির্বাচনের মতোই এবারের নির্বাচনে আইনশৃংখলা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। প্রার্থী, ভোটার ও রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা পেলে আশা করছি এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক (বড় স্কেলে) ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণে পৌরসভার মতো ইউপিতে এত সংখ্যক ফোর্স দেয়া সম্ভব হবে না।

ইসির পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আইনশৃংখলা-সংক্রান্ত বৈঠকে ৭টি এজেন্ডা থাকছে। সেগুলো হল : প্রাক-নির্বাচনী আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নির্বাচন-পূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ, সন্ত্রাসী, মাস্তান ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং তাদের দৌরাত্ম্য রোধে ব্যবস্থা নেয়া, নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা, আচরণবিধি সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সৃষ্টি, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা। ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এ ছাড়া আইনশৃংখলা বাহিনী, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সমস্যা ও মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এরপরই নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কারণে বৈঠকে স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক, গোয়েন্দা সংস্থা এসবির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, সব বিভাগীয় কমিশনার, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সার্বিক আইনশৃংখলা পরিকল্পনা : ইউপি নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তিশৃংখলা রক্ষার্থে প্রতি ধাপে ভোট গ্রহণের আগের দু’দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও পরের দিন মোট চার দিনের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে টিম মোতায়েন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল টিম হিসেবে ৪ হাজার ২৭৫টি ও প্রতি ৩টি ইউপির জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১ হাজার ৪২৫টি টিম মোতায়েন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। একই হারে মোতায়েন থাকবে বিজিবি। উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের প্রতিটি উপজেলায় দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে ভোট কেন্দ্রের বাহিরে র‌্যাব ও পুলিশের টিম নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে কার্যপত্রে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ছাড়াও সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন হলেও সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই ইসির।

ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা : ইউপি নির্বাচনে সাধারণ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৯ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ, অস্ত্রসহ আনসার একজন, এপিসি আনসার একজন এবং লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দু’জন অস্ত্রসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে এ সংখ্যক সদস্য মোতায়েন বাধ্যতামূলক। ভোট কেন্দ্রের গুরুত্ব অনুসারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে পুলিশ সুপার ফোর্সের সংখ্যা বাড়াতে পারবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরদিন অর্থাৎ ৩ মার্চ থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোট গ্রহণের আগের দু’দিন ও পরের দিন মোট চার দিনের জন্য প্রতি উপজেলায় তিনজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার প্রস্তাব করেছে ইসি। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে আইনশৃংখলা রক্ষায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা ওই চার দিন নির্বাচনী কিছু অপরাধের বিচার তাৎক্ষণিক করতে পারবেন।

ভোটের দিনের নিরাপত্তা : ভোটের দিন ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলের নির্দেশ দেয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনবোধে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের নির্দেশনা দেয়া হবে। ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার ফল ঘোষণা করার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মালামাল পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসির বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা

আপডেট টাইম : ১১:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান করতে চার দিনের ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট গ্রহণের দিন, আগের দু’দিন ও পরের দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে থাকবে কোস্টগার্ড। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় ১৭ জন পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃংখলা বাহিনীর ১৯ জন সদস্য। ইসি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আরও জানা গেছে, এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকি করতে ৩ মার্চ থেকে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইসির এ পরিকল্পনা আগামী ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় আইনশৃংখলা-সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মূলত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, সেই আলোকে এবারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ওই নির্বাচনে সেনা ও নৌবাহিনী সীমিত পরিসরে মোতায়েন করা হলেও এবার তা ইসির পরিকল্পায় রাখা হয়নি। পাশাপাশি কমিয়ে আনা হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। ২০১১ সালে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় আইনশৃংখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েনের পরও সহিংসতা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। অথচ ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচন করার পরও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আগের ইউপি নির্বাচনের মতোই এবারের নির্বাচনে আইনশৃংখলা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। প্রার্থী, ভোটার ও রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা পেলে আশা করছি এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক (বড় স্কেলে) ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণে পৌরসভার মতো ইউপিতে এত সংখ্যক ফোর্স দেয়া সম্ভব হবে না।

ইসির পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আইনশৃংখলা-সংক্রান্ত বৈঠকে ৭টি এজেন্ডা থাকছে। সেগুলো হল : প্রাক-নির্বাচনী আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নির্বাচন-পূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ, সন্ত্রাসী, মাস্তান ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং তাদের দৌরাত্ম্য রোধে ব্যবস্থা নেয়া, নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা, আচরণবিধি সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সৃষ্টি, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা। ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এ ছাড়া আইনশৃংখলা বাহিনী, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সমস্যা ও মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এরপরই নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কারণে বৈঠকে স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক, গোয়েন্দা সংস্থা এসবির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, সব বিভাগীয় কমিশনার, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সার্বিক আইনশৃংখলা পরিকল্পনা : ইউপি নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তিশৃংখলা রক্ষার্থে প্রতি ধাপে ভোট গ্রহণের আগের দু’দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও পরের দিন মোট চার দিনের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে টিম মোতায়েন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল টিম হিসেবে ৪ হাজার ২৭৫টি ও প্রতি ৩টি ইউপির জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১ হাজার ৪২৫টি টিম মোতায়েন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। একই হারে মোতায়েন থাকবে বিজিবি। উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের প্রতিটি উপজেলায় দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে ভোট কেন্দ্রের বাহিরে র‌্যাব ও পুলিশের টিম নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে কার্যপত্রে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ছাড়াও সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন হলেও সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই ইসির।

ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা : ইউপি নির্বাচনে সাধারণ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৯ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ, অস্ত্রসহ আনসার একজন, এপিসি আনসার একজন এবং লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দু’জন অস্ত্রসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে এ সংখ্যক সদস্য মোতায়েন বাধ্যতামূলক। ভোট কেন্দ্রের গুরুত্ব অনুসারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে পুলিশ সুপার ফোর্সের সংখ্যা বাড়াতে পারবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরদিন অর্থাৎ ৩ মার্চ থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোট গ্রহণের আগের দু’দিন ও পরের দিন মোট চার দিনের জন্য প্রতি উপজেলায় তিনজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার প্রস্তাব করেছে ইসি। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে আইনশৃংখলা রক্ষায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা ওই চার দিন নির্বাচনী কিছু অপরাধের বিচার তাৎক্ষণিক করতে পারবেন।

ভোটের দিনের নিরাপত্তা : ভোটের দিন ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলের নির্দেশ দেয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনবোধে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের নির্দেশনা দেয়া হবে। ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার ফল ঘোষণা করার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মালামাল পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে।