হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২ মাস বয়স নাগাদ শিশু মা ও অন্য পরিচিতজনদের চিনতে পেরে হাসে ও তাদের প্রতি আরও বেশি করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে। ফলে পিতা-মাতা ও শিশুর সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
শিশুকে ভালোবেসে মাতা-পিতা ভালোবাসা পাওয়ার দ্বিগুণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। পরবর্তী কয়েক মাসে শিশুর শারীরিক ক্ষমতা ও বুদ্ধিবৃত্তি অর্জনে চমকপ্রদ উন্নতি দেখা যায়। সাহায্যে শিশু ও মাতা-পিতারা ভুবনে অসামান্য ভাববিনিময়ের সুযোগ ঘটে।
দৈহিক বাড়ন
৩ থেকে ৪ মাস বয়সে শিশু গড়ে ২০ গ্রাম করে ওজনে বাড়ে। এ সময়ে শিশু গড়াগড়ি দিয়ে পিঠের দিক থেকে পেটের দিকে উল্টে যেতে পারে। তাছাড়া শরীরের মাঝ লাইন বরাবর রাখা যে কোনো বস্তু বা সামগ্রী দেখে ও দু’হাত বাড়িয়ে ধরতে চায়।
ঘাড় সোজা রাখতে সক্ষম হয়ে ওঠে সে, যার সাহায্যে যে কোনো জিনিসের প্রতি আগের তুলনায় ভালোভাবে তাকাতে পারে। সে চামচে করে খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তার চক্ষু ইন্দ্রিয় আরও বেশি পরিপক্বতা লাভ করে, যে কারণে তার দৃষ্টির গভীরতা বেড়ে যায়।
এ বয়সে একজন শিশু দৈনিক গড়ে ১৪-১৬ ঘণ্টা পর্যাপ্ত মুমায়। যার প্রায় ৯-১০ ঘণ্টা হচ্ছে রাতের বেলায়। ৬ মাস বয়সের প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু একনাগাড়ে ৬-৮ ঘণ্টার মতো ঘুম দিতে পারে।
বাহির পানে চোখ মেলেছি আমিত্বের উদ্ভব
এ বয়সে মনোদৈহিক বিকাশের ফল হিসাবে শিশুর আচরণে গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এমনকি চার মাসের একটি শিশু নিত্যনতুন দৃষ্টিতে তার সামনে ক্রমশ উন্মোচিত জগতকে আগ্রহের সঙ্গে দেখে ও অনুভব করে।
অন্যভাবে বলা যায়- ‘তা’ দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর মতো সমাজের বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাকে তৈরি করে দেয়। এখন বুকের দুধ পান করার সময় শিশু আর শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে না বরং মায়ের বাহুপাশ থেকে মাথাটি হেলিয়ে এনে বাইরের পানে দৃষ্টি মেলে।
নিজের শরীর সম্পর্কে কিছুটা জানতে পারে সে, নিজের হাত দুটি নিজে দেখে মুখ দিয়ে অনর্গল শব্দ করে, নিজেই নিজের কান, গাল স্পর্শ করে। এসবের দ্বারা তার মধ্যে কার্যকারণ বিষয়ে ধারণা জন্মে।
অঙ্গসঞ্চালনের সঙ্গে স্পর্শ ও দেখার মতো অনুভূতির যে সংযোগ ঘটে- এটি সে জেনে যায় এবং এভাবে তার মধ্যে আমিত্ববোধ জেগে ওঠে। কখনো কখনো কান্নার সঙ্গে মায়ের উপস্থিতিজনিত শব্দ, ঘ্রাণ ও ছোঁয়া সে অনুভব করে।
শিশুর আচার-আচরণ স্বাভাবিক মতো হচ্ছে কিনা বুঝবেন কেমনে শিশু এখন অধিক নিপুণতা ও সক্ষমতার সঙ্গে বহির্জগতে মনোনিবেশ করে থাকে।
এ বয়সেও শিশু মুখের ভাবের প্রায় যথাযথ পরিবর্তন এনে রাগ, উল্লাস, আগ্রহ, ভয়, বিরক্তি, বিস্ময় ভাব ইত্যাদি সব মৌলিক আবেগ প্রকাশে পারঙ্গম হয়ে ওঠে। হাসির তীব্রতা অনুযায়ী চোখের আয়তন একসঙ্গে বাড়ে-কমে, দুঠোঁটের সঞ্চালন একসঙ্গে ওঠানামা করে।
শিশু যখন অধীর চঞ্চল হয়ে ওঠে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে একবার উত্তেজনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়, কিছুক্ষণ সে অবস্থায় স্থির থাকে, অতঃপর আবারও চোরা চোখে ফিরে তাকায় এবং এভাবে খেলায় মেতে ওঠে।
এ সময়ে মাতা-পিতা চলে যাওয়ার ভান করলে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাদের কাছে পৌঁছুতে চায়, এভাবে তাদের সঙ্গ প্রার্থনা করে। কিন্তু এতে ব্যর্থ হলে রাগের সঙ্গে সে কান্না জুড়ে দেয়।
অন্যদিকে হতাশাগ্রস্ত পিতা-মাতার শিশুর আচরণ হয় ভিন্ন প্রকৃতির। সে পিতা-মাতার সঙ্গে ঐরূপ খেলার আনন্দে মেতে ওঠে না, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবভঙ্গি প্রদর্শন করে না।
এরূপ মা-বাবার সঙ্গে কম সময় সে কাটাতে চায়। তাদের প্রতি পুনঃপুনঃ আবেদন জানাতে কিংবা তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার ইচ্ছা তার থাকে না। পিতা-মাতার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে রাগ দেখানোর বদলে সে বিষণ্ন ও মলিন হয়ে বসে থাকে। তাই এ বয়সে শিশুর সঙ্গে মাতা-পিতার সার্বক্ষণিক দেখাদেখি শিশুর মনোজগতের বিকাশ সাধন করে, সামাজিক সম্পর্কের সূচনা ঘটায়।
মাতা-পিতার কি ভূমিকা
দৈহিক ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির জোরে এবং অসামান্য আবেদনের সঙ্গে ৩-৬ মাসের শিশুটি সংসার জীবনে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের স্থান দখল করে নেয়।
কখনো ঘরের পরিবেশ তার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। কিন্তু তার স্বভাবে বাইরের প্রতি আকর্ষণ বেশি হয়ে দেখা দেওয়াটা কোনো কোনো মাতা-পিতার কাছে ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
তারা তাদের সন্তান বুঝি আর তাদের আগের মতো ভালোবাসে না এরকম ভাবনায় তারা বিচলিত হয়ে পড়েন। যদিও বেশিরভাগ পিতা-মাতা শিশুর এমনতর আচরণ খুশি মনেই গ্রহণ করে থাকেন। শিশুকে ঘিরে এসব সুখানুভূতি পিতা-মাতা গোপন রাখেন না বরং তাদের সন্তানের সঙ্গে শব্দে ও ইঙ্গিতে যে ভাষা বিনিময়ে ঘটে থাকে, আনন্দ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তারা বিভিন্ন জনের কাছে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তা বর্ণনা করেন।
শিশুবিশেষজ্ঞ স্বয়ং, এ আনন্দদানের ভাগিদার হয়ে ওঠেন। কেননা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে এসব ঘটনা তার কাছে অত্যন্ত কাম্য। কিন্তু তা না হয়ে, এসব ভিজেটে মা-বাবা যদি ওরকম আনন্দ বার্তা বা স্বস্তির কোনো সংবাদ শোনান তবে তাকে খতিয়ে দেখতে হয় অন্য কিছু। সামাজিক কোনো সমস্যা, ঘরের অশান্তি, পিতা-মাতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো কি-না তা নির্ণয় করা অতীব জরুরি হয়ে ওঠে।