হাওর বার্তা ডেস্কঃ নওগাঁর শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পত্মীতলা উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সবুজে ভরে গেছে মাঠের ফসল। কিন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (কালবৈশাখী) হলে মাথায় হাত ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে আলাপচারিতায় চাষিরা জানান।
চাষিরা বর্তমানে দু-নয়ন ভরা স্বপ্ন নিয়ে দিন গুনছেন, সুষ্ঠুভাবে যেন মাঠের ফসল ঘরে তুলবেন- এই আশায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার নজিপুর পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে মোট ১৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বোরোর জাত গুলো হচ্ছে- হাইব্রিড: ধানি গোল্ড, তেজগোল্ড, হিরা-২ ও উফশী: ব্রিধান-২৮, ২৯, ৫০, ৫৮, ৫৯, ৬১, ৬৩, বিনা ধান-১৪, সম্পা কাটারি এবং জিরাশাইল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর নওগাঁ-২, রিজিয়ন পত্নীতলা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক চৌধুরী জানান, গভীর নলকূপের আওয়তায় সেচের পানি ব্যবহার করে চাষিরা সঠিক ও নিয়ম অনুসারে সেচ সুফল পাচ্ছেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এর নওগাঁ-২, রিজিয়ন পত্নীতলা জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইন্তেখাফ আলম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট ৪৩৯টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে।লো-লিপ পাম্প (এলএলপি) ১৭টি ও সৌর বিদ্যুৎচালিত ২৩টি চালু রয়েছে। যা নদীর পানি হতে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। ওই সেচ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো (ইরি) আবাদ করা হচ্ছে।
পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (কালবৈশাখী) না হলে, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, উচ্চ ফলনের প্রাপ্তির বিষয়ে চাষিদের নানাভাবে কৃষি তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করে আসছি আমরা। আগাম ধানের চারা রোপণ এলাকায় এক সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ধান কর্তন আরম্ভ হবে। তবে অর্ধমাসের মধ্যে উপজেলায় পুরোদমে ধান কর্তনের ধুম পড়ে যাবে।
আবদুল্লাহ হেল বাকী, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে: চলতি মৌসুমে ফসলি জমির মাঠগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে ইরি-বোরো ধান। ধানের সবুজ রঙে ভরে উঠেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ। গত মৌসুমে ধানের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৩০৫ হেক্টর।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ সঠিক সময়ে চারা লাগানো থেকে শুরু করে সেচ দেয়া ও সার-সংকট না থাকায় ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলে ধানের রোগ-বালাই অনেকটাই কমে যাবে এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। উপজেলায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করায় মাঠজুড়ে লক লক করছে ইরি-বোরো ধানের চারা। আর দেড় মাসের মধ্যে চলতি মৌসুমে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এদিকে কৃষাণ-কৃষাণীরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে গিয়েই দেখা যায় মৃদু হাওয়ায় সবুজ ধানের দোল।
উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বীরগ্রাম এলাকার কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, চলতি বছর আমি প্রায় দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছি। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে শুরু থেকেই কৃষকদের চাষাবাদে সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।