ঢাকা ০৮:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক দাও, হে আল্লাহ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
  • ২৬৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় আমরা পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখার সৌভাগ্য পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।

বিশ্বময় মহামারি করোনাকালীন সময়ে মাহে রমজানের রহমতের দশকের প্রথম রোজা সুস্থতার সঙ্গে রাখতে পেরে আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

আল্লাহপাকের কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে, মহামারি করোনা থেকে রক্ষা করে মুসলিম উম্মাহ যেন সুস্থতার সঙ্গে পবিত্র এই দিনগুলো অনেক বেশি ইবাদত আর পুণ্যকর্মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারে।

আমরা জানি, ইসলামের সব কর্মের ভিত্তি নিয়তের ওপর রাখা হয়েছে। নিয়ত অনুযায়ী প্রত্যেককে তার কর্মফল প্রদান করা হয়।

যেহেতু আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন তাই কে কোন নিয়তে পুণ্যকর্ম করেন তা কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন। এজন্যই তিনি তার বান্দার নিয়ত অনুযায়ী পুরস্কার দিয়ে থাকেন।

অনেকে এমন আছেন যারা রমজানের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করেছিলেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারছেন না কিন্তু তারা যেহেতু রোজা রাখার নিয়ত করেছিলেন তাই তাদের জন্যও আল্লাহর দরবারে এর প্রতিদান রয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন- ইন্নামাল আমালু বিননিয়াত অর্থাৎ- মানুষের কর্মের ফল নিয়ত এবং ইচ্ছার ওপর হয়ে থাকে। (বোখারি)

এজন্য কোন ইবাদত-বন্দেগি শুরু করার আগেও ইসলামে সঠিক-নিয়ত ও নেক ইচ্ছার শর্ত রয়েছে। যখন কোনো মুসলমান কোনো বিশেষ-ইবাদতের নিয়ত করে আর তা আদায় করে, তখন তার সেই ইবাদত প্রকৃত অর্থে আদায় হবে।

রোজা সম্পর্কেও বলা হয়েছে, এরজন্য নিয়ত করা জরুরী। সবচেয়ে উত্তম হলো, রোজার জন্য মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ইচ্ছা ও নিয়ত করে ঘুমানো।

এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে- হজরত হুযায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে-ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত না করে, তার রোজা রাখা পূর্ণ হয় না’ (তিরমিজি-আবওয়াবুস সাওম)।

রোজার নিয়তের জন্য কোনো অর্থবোধক শব্দ পাঠ করা জরুরী নয়। নিয়ত সেই ইচ্ছারই নাম, যার জন্য সে কোনো খাদ্য ও পানীয় ছেড়ে দিচ্ছে। রোজার নিয়তের জন্য আলাদা কোনো দোয়া হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া যায় না।

তবে একটি বাক্য প্রচলিত আছে, যা পাঠ করাতে কোন অসুবিধা নেই, তা আমরা নিয়ত হিসেবে পাঠ করতে পারি যেমন- ‘ওয়া বি সাওমে গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামজানা’ অর্থাৎ কাল সকালে রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করছি।

যদি নিজভাষায় বা শব্দেও নিয়্ত করে, তবেও কোনো অসুবিধা নেই। হজরত ইমাম মালেক (রহ.), হজরত ইমাম শাফী (রহ.) ও হজরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এর মতে রমজানের রোজার নিয়ত রাতে করা জরুরী।

কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.), সুফিয়ান সাওরী (রহ.), ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মোহাম্মদ (রহ.) এর মতে রমজান মাসে রাতে রোজার নিয়ত জরুরী নয়।

কেননা, রোজার নিয়ত করার উদ্দেশ্য এই যে, যেন নির্ধারণ করা যায়, কোন রোজা, নফল না ফরজ। আর রমজানের রোজা রাখার হুকুম দিয়ে আল্লাহতায়ালা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এই জন্য রাতে তার নিয়ত করা জরুরী নয়।

আমাদের উচিৎ হবে রমজানের রোজা রাখার পূর্বে নিয়ত করে নেয়া আর আল্লাহতায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করা যে, হে আল্লাহ! আগামীকাল তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি রোজা রাখবো, তুমি আমাকে সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক দান কর।

আমরা যদি পরিশুদ্ধ অন্তরে রোজার নিয়ত করে রোজা রাখি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের রোজা গ্রহণ করবেন।

দয়াময় প্রভুর কাছে আমাদের সকাতর প্রার্থনা, হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে সুস্থতার সঙ্গে রমজানের দিনগুলো বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাঝে কাটানোর তাওফিক দাও। রমজানের কল্যাণে বিশ্বকে কর মহামারি করোনামুক্ত, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক দাও, হে আল্লাহ

আপডেট টাইম : ০৯:১৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় আমরা পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখার সৌভাগ্য পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।

বিশ্বময় মহামারি করোনাকালীন সময়ে মাহে রমজানের রহমতের দশকের প্রথম রোজা সুস্থতার সঙ্গে রাখতে পেরে আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

আল্লাহপাকের কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে, মহামারি করোনা থেকে রক্ষা করে মুসলিম উম্মাহ যেন সুস্থতার সঙ্গে পবিত্র এই দিনগুলো অনেক বেশি ইবাদত আর পুণ্যকর্মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারে।

আমরা জানি, ইসলামের সব কর্মের ভিত্তি নিয়তের ওপর রাখা হয়েছে। নিয়ত অনুযায়ী প্রত্যেককে তার কর্মফল প্রদান করা হয়।

যেহেতু আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন তাই কে কোন নিয়তে পুণ্যকর্ম করেন তা কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন। এজন্যই তিনি তার বান্দার নিয়ত অনুযায়ী পুরস্কার দিয়ে থাকেন।

অনেকে এমন আছেন যারা রমজানের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করেছিলেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারছেন না কিন্তু তারা যেহেতু রোজা রাখার নিয়ত করেছিলেন তাই তাদের জন্যও আল্লাহর দরবারে এর প্রতিদান রয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন- ইন্নামাল আমালু বিননিয়াত অর্থাৎ- মানুষের কর্মের ফল নিয়ত এবং ইচ্ছার ওপর হয়ে থাকে। (বোখারি)

এজন্য কোন ইবাদত-বন্দেগি শুরু করার আগেও ইসলামে সঠিক-নিয়ত ও নেক ইচ্ছার শর্ত রয়েছে। যখন কোনো মুসলমান কোনো বিশেষ-ইবাদতের নিয়ত করে আর তা আদায় করে, তখন তার সেই ইবাদত প্রকৃত অর্থে আদায় হবে।

রোজা সম্পর্কেও বলা হয়েছে, এরজন্য নিয়ত করা জরুরী। সবচেয়ে উত্তম হলো, রোজার জন্য মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ইচ্ছা ও নিয়ত করে ঘুমানো।

এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে- হজরত হুযায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে-ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত না করে, তার রোজা রাখা পূর্ণ হয় না’ (তিরমিজি-আবওয়াবুস সাওম)।

রোজার নিয়তের জন্য কোনো অর্থবোধক শব্দ পাঠ করা জরুরী নয়। নিয়ত সেই ইচ্ছারই নাম, যার জন্য সে কোনো খাদ্য ও পানীয় ছেড়ে দিচ্ছে। রোজার নিয়তের জন্য আলাদা কোনো দোয়া হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া যায় না।

তবে একটি বাক্য প্রচলিত আছে, যা পাঠ করাতে কোন অসুবিধা নেই, তা আমরা নিয়ত হিসেবে পাঠ করতে পারি যেমন- ‘ওয়া বি সাওমে গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামজানা’ অর্থাৎ কাল সকালে রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করছি।

যদি নিজভাষায় বা শব্দেও নিয়্ত করে, তবেও কোনো অসুবিধা নেই। হজরত ইমাম মালেক (রহ.), হজরত ইমাম শাফী (রহ.) ও হজরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এর মতে রমজানের রোজার নিয়ত রাতে করা জরুরী।

কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.), সুফিয়ান সাওরী (রহ.), ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মোহাম্মদ (রহ.) এর মতে রমজান মাসে রাতে রোজার নিয়ত জরুরী নয়।

কেননা, রোজার নিয়ত করার উদ্দেশ্য এই যে, যেন নির্ধারণ করা যায়, কোন রোজা, নফল না ফরজ। আর রমজানের রোজা রাখার হুকুম দিয়ে আল্লাহতায়ালা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এই জন্য রাতে তার নিয়ত করা জরুরী নয়।

আমাদের উচিৎ হবে রমজানের রোজা রাখার পূর্বে নিয়ত করে নেয়া আর আল্লাহতায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করা যে, হে আল্লাহ! আগামীকাল তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি রোজা রাখবো, তুমি আমাকে সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক দান কর।

আমরা যদি পরিশুদ্ধ অন্তরে রোজার নিয়ত করে রোজা রাখি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের রোজা গ্রহণ করবেন।

দয়াময় প্রভুর কাছে আমাদের সকাতর প্রার্থনা, হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে সুস্থতার সঙ্গে রমজানের দিনগুলো বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাঝে কাটানোর তাওফিক দাও। রমজানের কল্যাণে বিশ্বকে কর মহামারি করোনামুক্ত, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com