হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ এসেছে করোনা মহামারিকালে। এ পরিস্থিতিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। ফলে এবারও নববর্ষ পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে, ঘরের ভেতরে।
সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে চলে নানা উৎসব-আয়োজন। পহেলা বৈশাখ ভোরবেলায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান আমাদের বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বসে বৈশাখী মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চলে আরও নানা আয়োজন।
এসবের মাঝে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থাকে। কিন্তু এবার এসবের কিছুই হচ্ছে না। তবে মানুষ ঘরে থাকলেও তাদের অন্তরে থাকবে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার তাগিদ। অনেকে ঘরে বসেই বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় আত্মনিয়োগ করবেন। অন্তত আমরা তেমনটিই আশা করি। সবার ঘরে ঘরে উদযাপিত হোক নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষ একান্তই আমাদের জাতিসত্তার অংশ। বাঙালির জীবনে বছরে একবারই আসে এমন দিন। আমাদের বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উৎসব। তবে বর্তমানে এ উৎসব হয়ে উঠেছে কিছুটা শহরকেন্দ্রিক। অথচ গ্রামই এ দেশের প্রাণ। গ্রামের মানুষ, মূলত কৃষকরাই বাংলা দিনপঞ্জি অনুসরণ করে থাকেন। বাংলা ঋতুচক্র মেনে করেন চাষাবাদ। পহেলা বৈশাখের একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র থাকায় এ দিনটির একটি প্রতীকী তাৎপর্যও রয়েছে।
আমরা জানি, প্রতিক্রিয়াশীলরা গণতন্ত্র, প্রগতি, বাঙালি সংস্কৃতি-এ সবকিছুরই বিরুদ্ধে। দুই দশক আগে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা আমরা ভুলে যাইনি। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত নয়জন। আহত হয়েছিলেন অনেকে। নববর্ষ উদযাপনের মূল চেতনা এ ধরনের হামলাকারীসহ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জোরদার করে, প্রগতির পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আরও বিকশিত করেই অপশক্তিকে রুখতে হবে।
বাংলা সনের প্রবর্তন হয়েছিল খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতি বছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প।
এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা। তাই ব্যবসায়ীরা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। দুঃখজনক, এবার এসবের কিছুই হবে না বিদ্যমান বাস্তবতায়।
বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় আদিবাসী গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির নববর্ষও আসে প্রায় একই সময়ে। তবে এবার সর্বত্রই প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতি থাকায় সব উৎসবই উদযাপিত হবে সীমিত পরিসরে।
এর মধ্যেও আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নেব। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেব। সব রোগ-শোক-জরা-গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শুভ হোক ১৪২৮।