ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার আয়েবা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন যাঁরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৯:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০১৫
  • ৬৩৮ বার

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ছয়জন বাংলাদেশিকে ২০১৫ সালের আয়েবা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আগামী ৩০ ও ৩১ মে অনুষ্ঠিতব্য অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) দ্বিতীয় গ্র্যান্ড কনভেনশনে তাঁদের এই বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে। প্যারিসে অবস্থিত আয়েবা সদর দপ্তর থেকে গত ২১ মে বৃহস্পতিবার জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়েছে। যাঁরা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন তারা হলেন; কূটনীতি ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে ব্রাসেলসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান, কমিউনিটির উন্নয়নে ফ্রান্সে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে বার্মিংহামের কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব তোজাম্মেল টনি হক, মূলধারার রাজনীতিতে লন্ডনের হাউজ অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য আমস্টারডাম প্রবাসী মাঈদ ফারুক, কমিউনিটির উন্নয়নে প্যারিস বন্ধুখ্যাত প্রয়াত শহিদুল আলম মানিক (মরণোত্তর) ও শিল্প-সংস্কৃতিতে মিলানপ্রবাসী ফাইবার অ্যান্ড টেক্সটাইল আর্টিস্ট শফিকুল কবির চন্দন।তোজাম্মেল টনি হক
পেশাদার কূটনীতিক ইসমাত জাহান গত প্রায় ছয় বছর ধরে ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। কূটনীতিক হিসেবে ৩৩ বছরের ক্যারিয়ার তাঁর। মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁর কূটনীতিতেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ইউরোপের বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানী খাত আরএমজি তথা তৈরি পোশাক শিল্প। ২০০৯ সালে ব্রাসেলসে যোগ দেওয়ার আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসমাত জাহান বাংলাদেশের সবচেয়ে সিনিয়র নারী কূটনীতিক হিসেবে সুপরিচিত। জাতিসংঘের Committee on the Elimination of Discrimination Against Women (সিডও) সদস্য পদে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেন তিনি। ইসমাত জাহানের জন্ম ১৯৬০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসিতেও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ফেলো ইসমাত জাহান নেদারল্যান্ডসে (২০০৫-২০০৭) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও বৈদেশিক বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মঞ্জিলা পলা উদ্দিনষাটের দশক থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের অধিবাসী তোজাম্মেল টনি হক। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় চল্লিশের দশকে। পড়াশোনার শুরু নওগাঁতেই, স্কুল-কলেজ শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। স্কুল জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৫২ সালে তিনি স্কুলের ছাত্র থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল-ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। পরে পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব দ্য স্টুডেন্টস অব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই প্রথম কোনো বাঙালি ছাত্রনেতা যিনি ওই পদের অধিকারী হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুব বিরোধী রাজনীতির কা​রণে কারাবরণ করেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কানাডায় পাড়ি জমাবার পর আর দেশে ফেরা হয়নি তাঁর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সত্তর ও আশির দশকে ইংল্যান্ডে ছিল বর্ণবিদ্বেষের এক বিষাক্ত পরিবেশ, যেখানে অভিবাসী সংখ্যালঘুরা ছিল অসহায়। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করলে তোজাম্মেল হক টনি হক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮-১৯৯০ ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন শেষে প্যারিসেই যোগ দেন ইউনেসকোর সদর দপ্তরে। ইউনেসকোর মহাপরিচালকের সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনের সময় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষা ও কমিউনিটির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে রাজশাহী জেলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি বিলেতের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে আসেন তিনি। নর্থ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকেই তিনি বিলেতের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে জড়াতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে ইয়ুথ অ্যান্ড কমিউনিটি ওয়ার্কারের সঙ্গে যুক্ত হন। টাওয়ার হ্যামলেটস সোশ্যাল সার্ভিসের একজন কর্মী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি। আশির দশকেরই শেষের দিকে মঞ্জিলা পলা উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটস উইমেন্স হেলথ প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি নিউহাম সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে লেবার পার্টি থেকে ১৯৯০ সালে তিনি দ্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর সফলতার সঙ্গে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিলেতের মাটিতে এশিয়ান মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাগোনারী নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা তাঁকে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ লর্ডসকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম নারী হিসেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পরীক্ষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।মাঈদ ফারুক
একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাঈদ ফারুক। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ১৯৭৮ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঈদ ফারুকের জন্ম ১৯৫৪ সালে সিলেটে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেননি, চার নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সাবসেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো হিসেবে কুকিতল ক্যাম্প থেকে দুঃসাহসী সব অভিযান পরিচালনা করেন। চারিদিকে ছোট ছোট টিলার আবর্তে কুকিতল ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক। ডেমোলিশন গ্রুপের অন্যতম সেরা তরুণ কমান্ডো হিসেবে হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতির অনেক সফল অপারেশনে অংশ নেন মাঈদ ফারুক। রাজনৈতিক কারণে স্বাধীনতার মাত্র সাত বছরের মাথায় প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদায় জানাতে হয় তাঁকে। টানা তিন যুগের বেশি প্রবাস জীবনেও ছিলেন বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের সাথি। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বাগ্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। সিলেট অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারেও অবদান আছে তাঁর। মৌলভি বাজারের জুড়ী উপজেলায় মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন তৈয়বুন্নেসা খানম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। যেখানে অধ্যয়নরত আছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বছরের পর বছর নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রাণপুরুষ মাঈদ ফারুক। একাধারে তিনি আমস্টারডামের একজন সফল ব্যবসায়ী। ডাচ-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নেও বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি।
আয়েবার প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন প্রয়াত শহিদুল আলম মানিক। ২০১২ সালে গ্রিসের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আয়েবা কনভেনশনের অন্যতম সংগঠক তিনি। জন্ম ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের ফেনী জেলায়। ১৯৮৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস ছিল তাঁর প্যারিসে। শহিদুল আলম মানিক ফ্রান্সের হাজার হাজার বাংলাদেশিদের কাছে প্যারিস বন্ধু হিসেবে শুধু সুপরিচিতই ছিলেন না, প্রবাসী মেহনতী জনতার সবচেয়ে কাছের এই মানুষটির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। তিনি একাধারে ছিলেন শহিদুল আলম মানিকফ্রান্সের একুশে উদ্‌যাপন পরিষদের নন্দিত আহ্বায়ক ও প্যারিসে বাংলাদেশ মসজিদের সফল প্রতিষ্ঠাতা। এখানকার বাংলা স্কুলেরও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। সর্বোপরি ফ্রান্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে আজীবন নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন শহিদুল আলম মানিক। প্রাণের সংগঠন আয়েবা প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তির আগেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাঁর অকাল মৃত্যুতে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। বন্ধুবৎসল, সদালাপী ও নিরহংকারী শহিদুল আলম মানিক তাঁর কর্মগুণে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন প্রবাসীদের হৃদয়ের গভীরে। ইউরোপের যে কোনো দেশের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে নেতৃত্বের উজ্জ্বল আদর্শ তিনি।শফিকুল কবির চন্দন
বুননশিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের বাস ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের নরসিংদীতে জন্ম প্রবাসী এই গুণী শিল্পীর। আপন মনে ছবি আঁকেন তিনি, তবে তা রং-তুলি দিয়ে নয়। ছবি বুনেন তিনি তাঁতে বাহারি তন্তু দিয়ে। পশম-রেশম, শন, উল, খড়-বিচালি, হোগলা, চামড়া, বাঁশ, লতা, পাতা, কাগজ, পাট, সুতো তথা তন্তু দিয়ে মনের রঙে তন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন প্রখর মেধাবী শফিকুল কবির চন্দন। ছাত্রজীবনেই তাঁর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল এশিয়ান আর্ট বিয়েন্নাল এবং ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পরবর্তী ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে ফাইবার আর্টসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে ঢাকার চারুকলাতেই শিক্ষকতা করেন কয়েক বছর। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চারুকলায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ট্যাপেস্ট্রি প্রদর্শনী হয় শিল্পী চন্দনের একক শিল্পকর্ম দিয়ে। ১৯৯৯ সালে কোলকাতায়ও প্রথম একক ফাইবার আর্ট প্রদর্শনীর কৃতিত্ব তাঁরই। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের শিল্পকর্মের বেশ কটি’টি একক প্রদর্শনী দারুণ সমাদৃত হয়েছে ইতিমধ্যে। নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত শিল্প কর্মশালায়ও মেধাবী এই বাংলাদেশি শিল্পীকে ইউরোপীয় কালচারাল আর্ট ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। মিলানেই সপরিবারে বসবাস করেন পেশাদার এই সার্বক্ষণিক শিল্পী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার আয়েবা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন যাঁরা

আপডেট টাইম : ০৪:১৯:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০১৫

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ছয়জন বাংলাদেশিকে ২০১৫ সালের আয়েবা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আগামী ৩০ ও ৩১ মে অনুষ্ঠিতব্য অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) দ্বিতীয় গ্র্যান্ড কনভেনশনে তাঁদের এই বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে। প্যারিসে অবস্থিত আয়েবা সদর দপ্তর থেকে গত ২১ মে বৃহস্পতিবার জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়েছে। যাঁরা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন তারা হলেন; কূটনীতি ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে ব্রাসেলসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান, কমিউনিটির উন্নয়নে ফ্রান্সে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে বার্মিংহামের কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব তোজাম্মেল টনি হক, মূলধারার রাজনীতিতে লন্ডনের হাউজ অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য আমস্টারডাম প্রবাসী মাঈদ ফারুক, কমিউনিটির উন্নয়নে প্যারিস বন্ধুখ্যাত প্রয়াত শহিদুল আলম মানিক (মরণোত্তর) ও শিল্প-সংস্কৃতিতে মিলানপ্রবাসী ফাইবার অ্যান্ড টেক্সটাইল আর্টিস্ট শফিকুল কবির চন্দন।তোজাম্মেল টনি হক
পেশাদার কূটনীতিক ইসমাত জাহান গত প্রায় ছয় বছর ধরে ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। কূটনীতিক হিসেবে ৩৩ বছরের ক্যারিয়ার তাঁর। মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁর কূটনীতিতেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ইউরোপের বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানী খাত আরএমজি তথা তৈরি পোশাক শিল্প। ২০০৯ সালে ব্রাসেলসে যোগ দেওয়ার আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসমাত জাহান বাংলাদেশের সবচেয়ে সিনিয়র নারী কূটনীতিক হিসেবে সুপরিচিত। জাতিসংঘের Committee on the Elimination of Discrimination Against Women (সিডও) সদস্য পদে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেন তিনি। ইসমাত জাহানের জন্ম ১৯৬০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসিতেও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ফেলো ইসমাত জাহান নেদারল্যান্ডসে (২০০৫-২০০৭) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও বৈদেশিক বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মঞ্জিলা পলা উদ্দিনষাটের দশক থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের অধিবাসী তোজাম্মেল টনি হক। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় চল্লিশের দশকে। পড়াশোনার শুরু নওগাঁতেই, স্কুল-কলেজ শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। স্কুল জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৫২ সালে তিনি স্কুলের ছাত্র থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল-ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। পরে পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব দ্য স্টুডেন্টস অব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই প্রথম কোনো বাঙালি ছাত্রনেতা যিনি ওই পদের অধিকারী হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুব বিরোধী রাজনীতির কা​রণে কারাবরণ করেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কানাডায় পাড়ি জমাবার পর আর দেশে ফেরা হয়নি তাঁর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সত্তর ও আশির দশকে ইংল্যান্ডে ছিল বর্ণবিদ্বেষের এক বিষাক্ত পরিবেশ, যেখানে অভিবাসী সংখ্যালঘুরা ছিল অসহায়। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করলে তোজাম্মেল হক টনি হক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮-১৯৯০ ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন শেষে প্যারিসেই যোগ দেন ইউনেসকোর সদর দপ্তরে। ইউনেসকোর মহাপরিচালকের সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনের সময় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষা ও কমিউনিটির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে রাজশাহী জেলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি বিলেতের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে আসেন তিনি। নর্থ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকেই তিনি বিলেতের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে জড়াতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে ইয়ুথ অ্যান্ড কমিউনিটি ওয়ার্কারের সঙ্গে যুক্ত হন। টাওয়ার হ্যামলেটস সোশ্যাল সার্ভিসের একজন কর্মী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি। আশির দশকেরই শেষের দিকে মঞ্জিলা পলা উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটস উইমেন্স হেলথ প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি নিউহাম সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে লেবার পার্টি থেকে ১৯৯০ সালে তিনি দ্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর সফলতার সঙ্গে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিলেতের মাটিতে এশিয়ান মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাগোনারী নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা তাঁকে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ লর্ডসকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম নারী হিসেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পরীক্ষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।মাঈদ ফারুক
একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাঈদ ফারুক। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ১৯৭৮ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঈদ ফারুকের জন্ম ১৯৫৪ সালে সিলেটে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেননি, চার নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সাবসেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো হিসেবে কুকিতল ক্যাম্প থেকে দুঃসাহসী সব অভিযান পরিচালনা করেন। চারিদিকে ছোট ছোট টিলার আবর্তে কুকিতল ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক। ডেমোলিশন গ্রুপের অন্যতম সেরা তরুণ কমান্ডো হিসেবে হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতির অনেক সফল অপারেশনে অংশ নেন মাঈদ ফারুক। রাজনৈতিক কারণে স্বাধীনতার মাত্র সাত বছরের মাথায় প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদায় জানাতে হয় তাঁকে। টানা তিন যুগের বেশি প্রবাস জীবনেও ছিলেন বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের সাথি। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বাগ্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। সিলেট অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারেও অবদান আছে তাঁর। মৌলভি বাজারের জুড়ী উপজেলায় মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন তৈয়বুন্নেসা খানম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। যেখানে অধ্যয়নরত আছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বছরের পর বছর নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রাণপুরুষ মাঈদ ফারুক। একাধারে তিনি আমস্টারডামের একজন সফল ব্যবসায়ী। ডাচ-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নেও বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি।
আয়েবার প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন প্রয়াত শহিদুল আলম মানিক। ২০১২ সালে গ্রিসের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আয়েবা কনভেনশনের অন্যতম সংগঠক তিনি। জন্ম ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের ফেনী জেলায়। ১৯৮৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস ছিল তাঁর প্যারিসে। শহিদুল আলম মানিক ফ্রান্সের হাজার হাজার বাংলাদেশিদের কাছে প্যারিস বন্ধু হিসেবে শুধু সুপরিচিতই ছিলেন না, প্রবাসী মেহনতী জনতার সবচেয়ে কাছের এই মানুষটির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। তিনি একাধারে ছিলেন শহিদুল আলম মানিকফ্রান্সের একুশে উদ্‌যাপন পরিষদের নন্দিত আহ্বায়ক ও প্যারিসে বাংলাদেশ মসজিদের সফল প্রতিষ্ঠাতা। এখানকার বাংলা স্কুলেরও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। সর্বোপরি ফ্রান্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে আজীবন নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন শহিদুল আলম মানিক। প্রাণের সংগঠন আয়েবা প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তির আগেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাঁর অকাল মৃত্যুতে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। বন্ধুবৎসল, সদালাপী ও নিরহংকারী শহিদুল আলম মানিক তাঁর কর্মগুণে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন প্রবাসীদের হৃদয়ের গভীরে। ইউরোপের যে কোনো দেশের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে নেতৃত্বের উজ্জ্বল আদর্শ তিনি।শফিকুল কবির চন্দন
বুননশিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের বাস ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের নরসিংদীতে জন্ম প্রবাসী এই গুণী শিল্পীর। আপন মনে ছবি আঁকেন তিনি, তবে তা রং-তুলি দিয়ে নয়। ছবি বুনেন তিনি তাঁতে বাহারি তন্তু দিয়ে। পশম-রেশম, শন, উল, খড়-বিচালি, হোগলা, চামড়া, বাঁশ, লতা, পাতা, কাগজ, পাট, সুতো তথা তন্তু দিয়ে মনের রঙে তন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন প্রখর মেধাবী শফিকুল কবির চন্দন। ছাত্রজীবনেই তাঁর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল এশিয়ান আর্ট বিয়েন্নাল এবং ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পরবর্তী ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে ফাইবার আর্টসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে ঢাকার চারুকলাতেই শিক্ষকতা করেন কয়েক বছর। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চারুকলায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ট্যাপেস্ট্রি প্রদর্শনী হয় শিল্পী চন্দনের একক শিল্পকর্ম দিয়ে। ১৯৯৯ সালে কোলকাতায়ও প্রথম একক ফাইবার আর্ট প্রদর্শনীর কৃতিত্ব তাঁরই। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের শিল্পকর্মের বেশ কটি’টি একক প্রদর্শনী দারুণ সমাদৃত হয়েছে ইতিমধ্যে। নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত শিল্প কর্মশালায়ও মেধাবী এই বাংলাদেশি শিল্পীকে ইউরোপীয় কালচারাল আর্ট ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। মিলানেই সপরিবারে বসবাস করেন পেশাদার এই সার্বক্ষণিক শিল্পী।