ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইজিবাইক ছিনতাই করতে গিয়ে চালক বদন খন্দকারকে হত্যা করা হয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ২১৭ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হওয়ার পরদিন গত ২৩ সেপ্টেম্বর চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার (৩৫) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার কিংবা ইজিবাইকটি উদ্ধার করা যায়নি।

গত ১৮ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত পিবিআই এর হাতে ন্যাস্ত করা হয়। পিবিআই এর তদন্তে চার মাস পর অবশেষে মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

এছাড়া নিহত ইজিবাইক চালক বদন খন্দকারের মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত মো. লিটন মিয়া (২২) নামে ইজিবাইক ও বিভাটেক ছিনতাই চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়েছে।

মো. লিটন মিয়া ভৈরব উপজেলার ছনছড়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে।

অন্যদিকে নিহত ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারচর উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামের মো. আব্দুল হান্নান খন্দকারের ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে তার ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়।

পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে বদন খন্দকারের স্বজনরা গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা মো. আব্দুল হান্নান খন্দকার ভৈরব থানায় মামলা দায়েরের পর ১৮ অক্টোবর পিবিআই কিশোরগঞ্জ মামলাটি গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া।

পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া নিহত বদন খন্দকারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বদন খন্দকারের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার উদ্ধার করেন এবং এর সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভৈরবের শম্ভুপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত চক্রের সদস্য মো. লিটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন।

মো. লিটন মিয়াকে পরদিন শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আদালতে পাঠানোর পর সে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

ইজিবাইক ও বিভাটেক ছিনতাই চক্রের এই সদস্য স্বীকারোক্তিতে জানায়, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য তারা চার বন্ধু লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল পরস্পর বন্ধু। তাদের একটি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি/ছিনতাইয়ের সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি/ছিনতাই করে আসছে।

মামলার তদারককারী অফিসার পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার বিষয়ে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

পরবর্তীতে গত ১৮ অক্টোবর মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণের পর নিরবচ্ছিন্ন তদন্তে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হয়।

পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর শিবপুর বাজারে পুরি বিক্রির টং দোকানে বসে লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল একটি অটোরিকশা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ভৈরব দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড যায়। সেখান থেকে ১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বদন খন্দকারের ইজিবাইক নিয়ে কালিকাপ্রসাদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

কালিকাপ্রসাদ এলাকার ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলে রব্বানী প্রস্রাবের কথা বলে ইজিবাইক থামায়। তখন তারা রাস্তার পাশে নিয়ে গিয়ে রশি দিয়ে বদন খন্দকারের হাত বেঁধে ফেলে। তারপর লোহার টুকরো দিয়ে নাকে-মুখে আঘাত করে এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে বদন খন্দকারকে হত্যার পর চক্রটি ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইজিবাইক ছিনতাই করতে গিয়ে চালক বদন খন্দকারকে হত্যা করা হয়

আপডেট টাইম : ০৮:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হওয়ার পরদিন গত ২৩ সেপ্টেম্বর চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার (৩৫) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার কিংবা ইজিবাইকটি উদ্ধার করা যায়নি।

গত ১৮ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত পিবিআই এর হাতে ন্যাস্ত করা হয়। পিবিআই এর তদন্তে চার মাস পর অবশেষে মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

এছাড়া নিহত ইজিবাইক চালক বদন খন্দকারের মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত মো. লিটন মিয়া (২২) নামে ইজিবাইক ও বিভাটেক ছিনতাই চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়েছে।

মো. লিটন মিয়া ভৈরব উপজেলার ছনছড়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে।

অন্যদিকে নিহত ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারচর উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামের মো. আব্দুল হান্নান খন্দকারের ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকার গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে তার ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়।

পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে বদন খন্দকারের স্বজনরা গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা মো. আব্দুল হান্নান খন্দকার ভৈরব থানায় মামলা দায়েরের পর ১৮ অক্টোবর পিবিআই কিশোরগঞ্জ মামলাটি গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া।

পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া নিহত বদন খন্দকারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বদন খন্দকারের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার উদ্ধার করেন এবং এর সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভৈরবের শম্ভুপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত চক্রের সদস্য মো. লিটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন।

মো. লিটন মিয়াকে পরদিন শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আদালতে পাঠানোর পর সে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

ইজিবাইক ও বিভাটেক ছিনতাই চক্রের এই সদস্য স্বীকারোক্তিতে জানায়, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য তারা চার বন্ধু লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল পরস্পর বন্ধু। তাদের একটি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি/ছিনতাইয়ের সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা-বিভারটেক চুরি/ছিনতাই করে আসছে।

মামলার তদারককারী অফিসার পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইজিবাইক চালক মো. সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার বিষয়ে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

পরবর্তীতে গত ১৮ অক্টোবর মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণের পর নিরবচ্ছিন্ন তদন্তে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হয়।

পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর শিবপুর বাজারে পুরি বিক্রির টং দোকানে বসে লিটন মিয়া, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল একটি অটোরিকশা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ভৈরব দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড যায়। সেখান থেকে ১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বদন খন্দকারের ইজিবাইক নিয়ে কালিকাপ্রসাদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

কালিকাপ্রসাদ এলাকার ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলে রব্বানী প্রস্রাবের কথা বলে ইজিবাইক থামায়। তখন তারা রাস্তার পাশে নিয়ে গিয়ে রশি দিয়ে বদন খন্দকারের হাত বেঁধে ফেলে। তারপর লোহার টুকরো দিয়ে নাকে-মুখে আঘাত করে এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে বদন খন্দকারকে হত্যার পর চক্রটি ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়।