হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাপানের সঙ্গে আরো একটি যৌথ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। রাজধানী কলম্বোতে একটি প্রধান বন্দরের এক অংশের উন্নয়ন কাজ নিয়ে জাপানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্য দিয়ে ৬ মাস সময়সীমার মধ্যে এমন দ্বিতীয় একটি বড় প্রকল্প থেকে বেরিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। সেখানে নিয়োজিত জাপানের রাষ্ট্রদূত আকিরা সুগিয়ামা এমন ঘোষণাকে একতরফা ও নিন্দনীয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সাক্ষাত করেছেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনের সঙ্গে। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপাপরেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে লাইট রেল ট্রানজিট প্রকল্প বাতিল করে দেয় শ্রীলঙ্কার মন্ত্রীপরিষদ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এসএনএ।
এতে আরো বলা হয়, কলম্বোতে ইস্ট কন্টেইনার টার্মিনাল (ইসিটি) নামের একটি শিপিং বন্দরের নির্মাণ জন্য শ্রীলঙ্কা, জাপান এবং ভারতের আদানি গ্রুপকে ডাকা হয়েছিল। এ নিয়ে চুক্তিতে প্রকল্পের শতকরা ৪৯ ভাগ শেয়ার দেয়ার কথা বলা হয় ভারত ও জাপানকে। এ বিষয়ে ২০১৯ সালে তখনকার জাতীয় নেতা মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবং রণিল বিক্রমেসিংঘের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এই চুক্তিটি শ্রীলঙ্কায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এর সমালোচনা করতে থাকেন শ্রম ইউনিয়ন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যরা। তারা যুক্তি দেখান যে, বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদেরাই কঠোরভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। পূর্বসূরির চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পের সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে আকস্মিকভাবে বন্দর কর্মীদের কাছে ঘোষণা দেন যে, শ্রীলঙ্কা পোর্ট অথরিটির অধীনে ইসিটি সম্পন্ন হবে শতভাগ জাতীয় পর্যায়ে।
তার এ ঘোষণায় ভারত এবং জাপান উভয় দেশই হতাশ। দিল্লি মনে করছে, এমন পরিবর্তিত অবস্থা কোনো আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে। দেশজুড়ে হাজার হাজার শ্রমিকদের বিক্ষোভের ফলে আন্তর্জাতিক এই চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় সরকারকে সমর্থন দেয় মূলত মধ্যবিত্ত, জাতীয়তাবাদী গ্রুপ এমনকি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বকারী বামপন্থি ন্যাশনাল ফ্রিডম ফ্রন্টের প্রেস সেক্রেটারি অনুরুদ্ধ রানাওয়ারানা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমাদের দশটি দলের অবস্থান হলো ইস্ট কন্টেইনার টার্মিনালের কোনো অংশ অন্য কোনো দেশকে দেয়া যাবে না। এর মালিকানা থাকবে শুধু বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেভাবে আকস্মিকভাবে চুক্তি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে তাকে কেউ সমর্থন করছে না। লঙ্কাদ্বীপা নামের দৈনিক পত্রিকা তার সম্পাদকীয়তে বলেছেন, স্থানীয় সম্পদ হিসেবে দেশের সুরক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ক নীতিতে আমরা ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন এবং জাতীয় শক্তির প্রতি শ্রদ্ধ জানাই। কিন্তু দেশ যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে যুক্ত হয় তাও দেশের মেনে নেয়া উচিত।
ভারতীয় মিডিয়ায় অভিযোগ আছে যে, শ্রীলঙ্কায় শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে পারে চীনের। ভারতের এই দাবিকে মিলিয়ে দেয়া হচ্ছে ইসিটির কাছে কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনাল (সিআইসিটি)র সঙ্গে। এটির শতকরা ৮৫ ভাগ মালিক চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোর্ল্ডিংস। তারাই এটি পরিচালনা করছে। এই একই প্রতিষ্ঠান হাম্বানতোতা বন্দরের শতকরা ৭০ ভাগ শেয়ারের মালিকানা অর্জন করেছে। উপরন্ত এ অঞ্চলের জলসীমায় এর আগে প্রবেশ করেছে চীনের সাবমেরিন। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের এমন সব দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।