হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে হাতির পিঠে চড়ে গিয়ে রাজকীয় বাল্যবিয়ে করার ঘটনা ঘঠেছে। দিনে দুপুরে উপজেলার খরিবাড়ী বাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় উৎসুক জনতা হাতি দেখে যতটা না বিস্মিত তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে হাতির পিঠে বরের সাজে থাকা সম্রাটকে দেখে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই ছবি তোলে ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে। পরে জানা গেল কনের বয়স ১৭, দশম শ্রেণির ছাত্রী। এলাকায় বাল্য বিয়ে হচ্ছে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার খবরে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে সেরে বিয়ে বাড়ি থেকে সটকে পড়ে বর ও কনে পক্ষ।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কনে ওই গ্রামের দুলাল মিয়ার মেয়ে আদুরী আক্তার (১৭)।
হাতির পিঠে আসা বরের নাম সম্রাট। সে নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইউনিয়নের বদ্ধু খানের ছেলে।
ভাঙামোড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বাবু বাল্যবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার বিকালে বর সম্রাট হাতির পিঠে চড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের ঠকটারি এলাকা থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী গ্রামে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাতির পিঠে বরকে দেখে উৎসুক জনতা ভীড় করতে থাকে।
পরে স্থানীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে হাতির পিঠে চরে বর সম্রাট মূলত বাল্যবিয়ে করতে যাচ্ছে। বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবুর নজরে আসলে তিনি মহল্লাদার (গ্রাম পুলিশ) সফিকুলকে পাঠিয়ে বাল্যবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন।
পরে চেয়ারম্যান বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ আসার খবরে বর ও কনে পক্ষ দ্রুত বিয়ে বাড়ী ত্যাগ করে। তবে তার আগে বিয়ে সম্পন্ন হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
কনের দুলাভাই হাফিজুল ইসলাম জানান, ‘ফুলবাড়ীর বড়ভিটা কলেজ মাঠে আয়োজিত স্থানীয় একটি সার্কাসের হাতি ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া করে তার পিঠে চড়ে বিয়ে করতে আসে সম্রাট। কনে দশম শ্রেণির ছাত্রী। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় পুলিশ আসার খবরে সবাই বাড়ি থেকে সরে পড়ে।’ পুলিশ আসছে জানিয়ে এরপর নিজেও সরে পড়েন কনের দুলাভাই হাফিজুল।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে কাউকে না পেয়ে ফিরে যায়। এসময় তারা বিয়ে বাড়িতে ফেলে যাওয়া খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
প্রতিবেশি মানিক মিয়া (৪৫) ও আমিনুল ইসলাম (৪২) জানান, জীবনে এই প্রথম দেখলাম আমার এলাকায় হাতির পিঠে চড়ে বর বিয়ে করতে এসেছে। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় বর কনেকে হাতির পিঠে চড়ে বাড়ীতে নিয়ে যেতে পারলো না। পুলিশের ভয়ে রাতের অন্ধকারে সটকে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান, বাল্য বিয়ে হচ্ছে এমন খবরে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। কিন্তু পুলিশ গিয়ে বিয়ে বাড়িতে কাউকে পায়নি। তবে জানতে পেরেছি পুলিশ যাওয়ার অগেই বিয়ে সম্পন্ন করে উভয় পক্ষ সটকে পড়েছে।