মসজিদ হবে ইসলামি সংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুধু নামাজ নয়, এর পাশাপাশি ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র, ইমামদের প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরি, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণসহ আরো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে এক মসজিদ ভবনেই। এই মসজিদকে কেন্দ্র করেই হবে ইসলামি সাংস্কৃতিক চর্চা। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সারা দেশে এমন ৫৬০টি ‘মডেল মসজিদ’ নির্মাণ করছে সরকার। এরমধ্যে মুজিববর্ষে ১৭০টি মসজিদের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক মো. নজিবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধের প্রচার এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের ‘প্রকৃত মর্মবাণী’ প্রচারের লক্ষ্যেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশে প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশ্বের ইতিহাসে একসঙ্গে এত মসজিদ নির্মাণের ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানান তিনি। জেলা সদরের মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মানুষ ও উপজেলার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন।

সম্প্রতি রংপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই দুটি মসজিদের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। সিঁড়ি ও মেঝেতে টাইলস লাগানোর কাজ চলছে। এরপর সৌন্দর্যবর্ধন ও রঙের কাজ হবে। ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত এ মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজের জায়গা ছাড়াও ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র, ইমামদের প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরি, শিশুশিক্ষা, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। থাকছে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও দেশিবিদেশি পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা। এছাড়া গাড়ি পার্কিং সুবিধাও রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের ‘মডেল মসজিদ’-এর নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ফারুক আহমেদ ইত্তেফাককে জানান, আগামী মার্চেই এ মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ৯টি উপজেলা ও জেলা সদর মিলিয়ে সিরাজগঞ্জে মোট ১০টি মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে।

ইসলামি ফাউন্ডেশন রংপুর কার্যালয়ের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইসলামের প্রসারে সারা দেশে একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ অনেক বড় উদ্যোগ। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, এখানে নামাজের পাশাপাশি ইসলামি সংস্কৃতির চর্চা ও গবেষণার ফলে ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তি এবং অপব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে তিন ক্যাটাগরিতে এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে বিভাগীয় শহর ও জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলায় তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ-ক্যাটাগরিতে সিটি করপোরেশন এলাকায় ও ৬৪টি জেলা শহরে ৬৯টি, বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি ও সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে প্রতি বছর মডেল মসজিদগুলোর লাইব্রেরিতে একসঙ্গে ৩৪ হাজার পাঠক পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। এছাড়া প্রতি বছর ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ তৈরি হবেন, ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পাবে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবুর রহমান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আগামী এপ্রিলে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬০টি ও ডিসেম্বরে আরো ৬০টিসহ সর্বমোট ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। বাকি মসজিদগুলোর কাজ আগামী দুই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর