হাওর বার্তা ডেস্কঃ দ্বিতীয় দিনের মতো আজও (সোমবার) বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি চলেছে। সকাল নয়টা থেকে একযোগে সারাদেশে টিকা দেয়া হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসাবে গতকাল বাংলাদেশের সহস্রাধিক হাসপাতালে টিকা দেয়া শুরু হয়। জনগণ যাতে টিকার ওপর আস্থা রাখতে পারে সেজন্য প্রথম দিন মন্ত্রিসভার সদস্য-সহ রাষ্ট্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করেন।
এছাড়াও ডাক্তার-নার্সসহ সম্মুখসারির কর্মী এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের এই টিকা দেয়া হয়। গতকাল টিকা দেয়া সবাই সুস্থ আছেন। টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় দিন বেশ কয়েকটি হাসপাতালে প্রথম দিনের তুলনায় আজ টিকা নেয়ায় বেশি আগ্রহ দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। মানুষ টিকা নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেককে টিকা নেয়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার টিকা নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। টিকা নেয়ার পর ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে আতিউর রহমান সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানান।
ফেসবুকের স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকা নিলাম। কোনো ব্যথা নেই। নেই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এতো তাড়াতাড়ি টিকা দিতে পেরে আমি খুবই আশ্বস্ত হলাম। আমরা টিকাদানের এই কর্মসূচিটি সবাই মিলে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবো আশা করছি। আর তা করার মাধ্যমেই সমাজে ও অর্থনীতিতে ভরসার পরিবেশ তৈরি হবে। শেষ পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই আস্থার ভাবটাই বড়ো কথা। এটা নিশ্চিত করা গেলেই আমাদের অর্থনীতি আরো চাঙা হবে। সেই কামনাই করছি। আসুন সবাই টিকা নেই এবং ভরসার পরিবেশকে আরও বিস্তৃত করি।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে টিকা নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। টিকা নেয়ার পর তিনি ভোটারদেরকেও তা নেয়ার অনুরোধ জানান। সিইসি বলেন, ‘আসলেই উৎসবমুখর পরিবেশ। আমার খুব ভালো লেগেছে। টিকা নিয়ে কোনো রকমের সমস্যা ফেস করিনি। আধাঘণ্টা অবজারভেশনে ছিলাম। আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি অনুরোধ করবো আমার ভোটারদেরকে, আপনারা প্রত্যেকে স্বাচ্ছন্দে নিজ নিজ এলাকায় এই টিকা গ্রহণ করুন।’
দ্বিতীয় দিনের মতো দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পরপর সাতসকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে সস্ত্রীক টিকা নিয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
প্রথম ডোজের টিকা নেয়ার পর নিয়মমতো উপমন্ত্রী এবং তার স্ত্রীকে হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তবে তারা পুরোপুরি সুস্থ আছেন। কোনো ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে জানা গেছে।
টিকা নেয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় উপমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, সস্ত্রীক করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করলাম। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করায়।
সকালের দিকে বিএসএমএমইউতে করোনা প্রতিরোধের প্রথম ডোজের টিকা নেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
গতকাল রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। রাজধানীর মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ভ্যাকসিন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওইদিন সর্বমোট ৩১ হাজার ১৬০ জন করোনার টিকা গ্রহণ করেন।
এদের মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি, সরকারের একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, একাধিক সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারাও ছিলেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংসদ সদস্যরাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা গ্রহণ করেন।
দেশব্যাপী চলা টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করছে মোট দুই হাজার ৪০০টি দল। ঢাকার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির স্টোর থেকে টিকার ডোজ কোল্ড বক্সে সংরক্ষণ করে ৬৪টি জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেয়া হয়। তার আগে টিকা সংরক্ষণ, টিকা দেয়া, টিকা কেন্দ্র পরিচালনা, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ সব বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
গত মাসেই ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত ব্রিটেনের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৭০ লাখ ডোজের চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশের কেনা, বাকি ২০ লাখ উপহার হিসেবে পাওয়া।
ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যেন প্রথম চালানের টিকা যারা নেবেন, তাদের সবার দুই ডোজ সম্পন্ন করা যায়।
তবে প্রতি মাসে ভারত থেকে ৫০ লাখ করে জুন মাসের মধ্যে আরো আড়াই কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে।