হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেখতে অবিকল ফুলকপির মতো কিন্তু রঙটা গাঢ় সবুজ। শীতকালীন এই সবজির নাম ব্রোকলি। দেশে ব্রোকলির চাষ খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি। সেই হিসেবে হবিগঞ্জেও ব্রোকলির চাষ একেবারে নতুন।
কিন্তু নতুন এই সবজি চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক আব্দুস ছালাম। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে। চলতি মৌসুমে নিজের প্রায় ২০ শতক জমিতে ব্রোকলি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। তার এই সাফল্য দেখে অনেকেই ব্রোকলি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন, ‘২০ শতক জমিতে ব্রোকলি চাষে আমার ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে আমি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করিনি। পোকা দমনে ব্যবহার করেছি ফেরোমন ফাঁদ। চমৎকার কাজ করেছে এটি। আর ভালো ফলনের জন্য শুকনো গোবর ও কিছু পরিমাণ সার প্রয়োগ করেছি নিয়মিত। এতেই ব্রোকলির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ থাকবে আমার।’
ওই এলাকার কৃষক তৌহিদ মিয়া জানান, অচেনা এই সবজি এলাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই ব্রোকলির এখানে চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী মৌসুমে জমিতেও ব্রোকলি চাষ করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।
চুনারুঘাট উপজেলার গোপালপুরের বাসিন্দা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ফারুক আহমেদ জানান, অফিসের দায়িত্ব পালনের পর তিনি নিজের সবজি নার্সারীতে কাজ করেন। তার নার্সারী থেকে কৃষক আব্দুস ছালাম ব্রোকলির চারা ক্রয় করে ২০ শতক জমিতে রোপণ করেন। তিনি বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
ফারুক আহমেদ আরও জানান, তার কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে আব্দুস ছালাম ছাড়াও ব্রোকলি চাষ করেছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষক। তারাও ব্রোকলি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এতে তিনি বেশ আনন্দিত।
উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীমুল হক শামীম বলেন, মনের ইচ্ছে ও শ্রম থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা পাওয়া যায়। কৃষক আব্দুস ছালাম তার অন্যতম উদাহরণ। তার সাফল্য এখন এলাকার অনেক কৃষককে উৎসাহিত করছে। আগামী মৌসুমে অনেক কৃষকই ব্রোকলি চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। চাইছেন পরামর্শ। অফিস থেকে তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবদুল আউয়াল জানান, ব্রোকলি খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। ব্রোকলির শুধু কুঁড়ি অংশটি খেতে পারেন। আবার চাইলে নরম ডাঁটা অংশটুকু রাখতে পারেন। ডাঁটাতেও পুষ্টি আছে। ব্রোকলি রান্নার পাশাপাশি সালাদ ও মাংসের সঙ্গে রোস্ট করে খাওয়া যায়।
এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধী, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, বয়স ঠেকায় ও ত্বক সুন্দর করে।
তাই হবিগঞ্জের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এটি দারুণ ভূমিকার রাখবে। এলাকার কৃষক যেন সহজে এই ফসল ফলাতে পারে তার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবাইকে সহায়তা করা হচ্ছে।