ছেড়া লুঙ্গি গামছা পরা লোকগুলি স্বাধীনতা অর্জনে গর্বময় ভুমিকা রেখেছিলো

গোলসান আরা বেগমঃ সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না, ছেঁড়া লুঙ্গি ও গামছা পরা লোকগুলোই বাংলাদেশের  স্বাধীনতা অর্জনে গর্বময় ভুমিকা রেখেছিলো। অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে,জয় বাংলা স্লোগানকে বুকে ধারন করে মুক্তযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলো।গাঁয়ের কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি,জেলে, শ্রমিক, নিম্ন আয়ের জনগণ, লবণ লংকায় যারা ছিলো বেঁচে, ইত্যাদি স্তরের লোকেরা একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধে  ঝঁপিয়ে পড়েছিলো দলে বলে। তারা মরে যাবে, না বেঁচে থাকবে তা ভাবেনি।
তাঁরা বেশীর ভাগ অশিক্ষিত ছিলো,কেন যুদ্ধ হচ্ছে, এর ভবিষৎ ফলাফল কি হতে পারে। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপায় কি হবে। রোগে শোকে, পেটের আহার কে দিবে, বাড়ী ঘরের নিরাপত্তা, সুরক্ষা কে করবে এ সব কিচ্ছু ভাবার সময় পায়নি। দা, লাটি,বল্লম দিয়ে কি অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করে পারবে বেঁচে থাকতে।এই প্রশ্নটিও মনে দানা বাঁধেনি।
স্বাধীনতার মানে, ছয় দফার মর্মার্থ,যুদ্ধের রণকৌশল, ইত্যাদি বিষয়ে পরিস্কার ধারনা ছিলো না। স্বাধীনতা পেলে তাদের আয় উন্নতি,জীবন মানের পরিবর্তন কি হবে? যুদ্ধে মারা গেলে কার বেশী ক্ষতি হবে? লুঙ্গি গামছা পড়া জনগণ আগে পিছে কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধে যায়নি। হুজুগে মাতাল বাঙালি, এ ওর সাথে বা অন্যকারো কাঁধে হাত রেখেই যুদ্ধে গিয়েছিলো। মাটি ও মানুষের প্রতি ছিলো গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। বঙ্গবন্ধুর কথায় ও আহবানে জীবন দিতে ছিলো প্রস্তুত। যে ত্রিশ লক্ষ মানুষ একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধে  শহিদ হয়েছে,সঠিক তথ্য উদঘাটন করলে দেখা যাবে,তার অধিকাংশই ছিলো লুঙ্গি গামছা পরা লোক।
স্বাধীনতার পর এরা কোন পদক পায়নি।পায়নি বড় কোন চাকুরি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বা সার্টিফিকেটও বহু জন সংগ্রহ করতে পারেনি।কারণ তখন এর মর্যাদা তারা বুঝেনি বা বুঝার মত বুদ্ধি মেধা ছিলো না। অথচ বহু ধান্ধাবাজকে দেখেছি  মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরীতে প্রমোশন, এক্সটেনশান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে। এমন কি অমুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরাও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
শহরের সেই নামী দামী,হেভি ওয়েট, পাওয়ারপুল  নেতারা ভারতে গিয়েছিলো কি না সন্দেহ রয়েছে। বরং দেশের ভেতরে থেকে ওরা করেছে নানা ফন্দি ফিকির। লুটপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। বহুজন রাজাকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পশ্চিমা শত্রুদের সহায়তা করেছে। তারা আজোও মুজিব কোট পরে উচু গলায় কথা বলছে,করছে লুটপাট,দেশের সর্বনাশ।
কেউ উদাহারণ টেনে বলতে পারবে না,সেই ছেড়া গামছা পড়া মুক্তিযোদ্ধারা চূল পরিমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরুধী কাজ করছে।বরং না খেয়ে,রুগে, শোকে ধুকে ধুকে মরছে। এদের মহান ত্যাগের কথা আমরা সবাই জানি,কিন্তু মূল্যায়ন করার মত মানসিক প্রস্তুতি আমাদের নেই। আমরা কেউ তো হত দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মান দেখিয়ে প্রধান অতিথির চেয়ারে বসাই না। বরং খোঁজে বেড়াই বড় বড় স্বনাম ধন্য রুই কাতলা।। স্যার স্যার করতে করতে গলা শুকিয়ে ফেলি।।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে  অত্যান্ত ভালোবাসতেন। সেই অজপাড়া গাঁ থেকে ওঠে আসা জাতির পিতা, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু চাইতেন শোষণ মুক্ত সামাজিক জীবন। দারিদ্র্যতা বিমোচনে, সাধারন মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে, আদর্শের রাজনীতি করে গেছেন।  একারণেই তৃণমুল পর্যায়ের মানুষ তাকে বেশী ভালোবাসতো। ৭ মার্চের অমর কাব্য নামক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলে।নয় মাস যুদ্ধ করে বাঙালিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপর দিয়েছে।
৭ মার্চের সেই জন সভার উপস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সেখানেও ছেড়া লুঙ্গি ও গামছা পরার লোকাজনের অংশ গ্রহন ছিলো সংখ্যা গড়িষ্ট। আমাদের ভেবে দেখা দরকার তাদের জন্য কি করেছি বা করণীয় কি । এখনও সময় আছে, তাদের কথা ভাবা দরকার। কিছু দিন পর তো সব মুক্তিযোদ্ধারা একে একে না ফেরার দেশে ছলে যাবেন।আগামী প্রজন্মের কাছে তারা ভাস্কর্য হয়ে বেঁচে থাকবে। দেশের যে কোন ক্রাইসিসে “মুক্তিযোদ্ধের হাতিয়ার গর্জে ওঠুক আরেক বার ” এই স্লোগানটি উচ্চারণ করার জন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা খোঁজে পাওয়া যাবে না। তারপরও হে সূর্য সন্তান, তোমাদেরকে জানাই নত শিরে শ্রদ্ধা সালাম।
দেরী করে হলেও আমাদের শম্ভ্রম হারানো বিরাঙ্গনা নারীরা পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কিন্তু যুদ্ধশিশুদের কি অপরাধ ছিলো তারা কেন মূলায়িত হয়নি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জন্তির কালেও কেউ তাদের স্মরণ করেনি। প্রায় সময়ে সংবাদ মাধ্যমে দেখি – বিদেশ দেথে ছুটে আসে যুদ্ধশিশুরা তাদের পালিত বাবার কাছ থেকে,তাদেন মাতা পিতা বা জন্ম পরিচয় জানতে। না, তা উদ্ধার করতে পারে না,বরং ব্যর্থ মনে ফিরে যায়। ইতিহাসের কোন জায়গায় তাদের স্থান হবে? এরাও তো মুক্তিযোদ্ধের  গর্বময় অধ্যায়। হায় ইতিহাস ক্ষমা করো আমাদের, আমরা যারা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের আইডিকার্ড সার্চ দিলেই বের করা যাবে,আমাদের শ্রদ্ধের ছেড়া লুঙ্গি ও গামছা পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ফরজ কাজ হবে তাদের খোঁজে বার করে, আলাদা ভাবে সন্মানিত করা। আমার প্রস্তাবটি শুনে অনেকেই হয়তো ভাববেন পাগলের প্রলাপ। আমি বলবো না। একবার ভেবে দেখুন এরা জীবন বাজী রেখে অস্র হাতে তুলে না নিলে, স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারতেন কি না।
এখন পদবি,মন্ত্রীত্ব, চেয়ার,মর্যাদা নিয়ে করেন কাড়াকাড়ি,।,লুটপাট করে দেশটাকে রসাতলে পাঠিয়ে দিতে চান। দেশকে মনে করেন মগের মল্লুগ। এক বার ভাবেন না এই দিন দিন নয়। পার্শবর্তী রাষ্ট্র  মায়ান মারের দিকে চোখ ফেরান, রোহিঙ্গাদের জীবনের মর্যাদা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা না পেলে,আমাদেরও এমন জীবনের মোকামুখি হতে হতো। সেলুট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তোমাদের জন্য বাঙালি আজ স্বাধীন।
হাতে গুনে দেখুন  তো — যারা ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ করে খাচ্ছেন,দুর্নীতি,লুটপাঠ করছেন ও ঠোটে মুখে তৈল ঘি লাগিয় উ আ করছেন, তাদের কয়জন, মুক্তিযোদ্ধা,সত্যিকারের দেশ প্রেমিক। এ কারনেই তো হাইব্রিড নেতার জন্ম হয়েছে। কেউ কেউ ঘটায় দেশটিতে জঙ্গীবাদ,আগুন সন্ত্রাসের বিস্তৃতি । বতর্মান সরকারের সকল উন্নয়নকে দেখে বাঁকা চোখে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা কখনও দেশের বা দশের অমঙ্গল কামনা করতে পারে না। আসুন আমরা আরো দেশ সেবায় আন্তরিক হই কল্যাণের পথে এগিয়ে যাই। মুক্তিযোদ্ধাতের করি সন্মান।
লেখকঃ কবি,কলামিস্ট,উপদেস্টা সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ। 
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর