ঢাকা ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষের, ৫০ বছরেও হয়নি ব্রিজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৬৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটি ব্রিজের অভাবে চরাঞ্চলের ৩০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন ভারতীয় সীমানায় কুড়িগ্রাম জেলার ১১১বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট উপজেলা রাজিবপুর। রাজিবপুর সদর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে যোগাযোগের সংযোগ সড়ক থাকলেও কোদালকাটি ইউনিয়ন পুরোটাই সোনাভরি নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ চরাঞ্চলীয় নদীমাতৃক জনপদ যা অত্র উপজেলার মূল ভূখণ্ডের ২ তৃতীয়াংশ।

গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকাল ৩টার দিকে সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলীয় কোদালকাটি ইউনিয়নে চরসাজাই, বদরপুর, আনন্দ বাজার, পাখিউড়া, হাতিমারাসহ ছোট বড় প্রায় ২৫টি এবং রৌমারী উপজেলা যাদুরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, কয়েকটি হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কোদালকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ, হাবিবুর রহমান, জব্বার আলী বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম, বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলসহ শাক-সবজি দ্বারা ভরপুর যা আমরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজিবপুর, কর্তিমারী, রৌমারীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য সোনাভরি নদী পার হয়ে যেতে হয়।

ভুক্তভোগী এলাকার আ. রশিদ মাষ্টার, জয়নাল মাষ্টারসহ অনেকেই জানান, স্বাধীনতার প্রায় ৫০টি বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে, আমারা স্বাধীনতা ভোগ করতে পাচ্ছি না। দেশের সব স্থানেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে কিন্তু এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগে নাই। নির্বাচন এলেই অত্র অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিগণ উন্নয়নের নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন শেষে তাদের মাঠে দেখা যায় না। দুঃখের বিষয় শুধু ব্রিজের দাবি করেই গেলাম কিন্তু বাস্তবায়ন পেলাম না।

জনগণের দাবির মুখে খাজার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, ওখানে একটি ব্রিজের অতি প্রয়োজন। সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে সোনাভরি নদীর উপর খাজার ঘাটে একটি ব্রিজের দাবি জানানো হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।

শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, জীবন চালনার তাগিদে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনে এসব নিবৃত্ত চরবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পার হতে হচ্ছে সোনাভরি নদী। কোদালকাটি ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো নদী ভাঙ্গার কারণে ভিটেমাটি হাড়িয়ে চর থেকে চরাঞ্চলে পাড়ি জমাতে হয় বছরে অন্তত একাধিকবার। একটি ব্রিজের অভাবে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এ অঞ্চলের।

শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন নৌকা যোগে পার হয়ে কর্তিমারী স্কুলে যাই, উপজেলা শহরের অদূরে সোনাভরির একটি পয়েন্টে পারাপারের জন্য রয়েছে একটি খেয়াঘাট যা খাঁজার ঘাট নামে পরিচিত। মাত্র ৭০ মিটার প্রস্থের নদীটি অত্র এলাকার মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কর্মব্যস্ত অসহায় মানুষ গুলোর প্রাণের দাবি সোনাভরি নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা-দেশ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও, এসব অঞ্চলে আজও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। এসব অঞ্চলের রাস্তাঘাট গুলোর নেই কোনো সংস্কার। অনুপযোগী এসব রাস্তাঘাটে যানবাহন চালনায় মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। একটি ব্রিজের অভাবে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ব্রিজটি নির্মাণ হলে ইউনিয়নটির সাথে স্থলপথে উপজেলা সদরে যাওয়া যাবে।

কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি খাজার ঘাটে একটি ব্রিজের। সবচেয়ে বড় কষ্ট হয় কোনো গর্ভবতী মা এবং মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নিতে। একটি ব্রিজ হলে যাতায়াতের সমস্যা দুর হবে, আমার এলাকার মানুষ শান্তি পাবে।

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষের, ৫০ বছরেও হয়নি ব্রিজ

আপডেট টাইম : ০২:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটি ব্রিজের অভাবে চরাঞ্চলের ৩০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন ভারতীয় সীমানায় কুড়িগ্রাম জেলার ১১১বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট উপজেলা রাজিবপুর। রাজিবপুর সদর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে যোগাযোগের সংযোগ সড়ক থাকলেও কোদালকাটি ইউনিয়ন পুরোটাই সোনাভরি নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ চরাঞ্চলীয় নদীমাতৃক জনপদ যা অত্র উপজেলার মূল ভূখণ্ডের ২ তৃতীয়াংশ।

গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকাল ৩টার দিকে সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলীয় কোদালকাটি ইউনিয়নে চরসাজাই, বদরপুর, আনন্দ বাজার, পাখিউড়া, হাতিমারাসহ ছোট বড় প্রায় ২৫টি এবং রৌমারী উপজেলা যাদুরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, কয়েকটি হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কোদালকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ, হাবিবুর রহমান, জব্বার আলী বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম, বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলসহ শাক-সবজি দ্বারা ভরপুর যা আমরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজিবপুর, কর্তিমারী, রৌমারীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য সোনাভরি নদী পার হয়ে যেতে হয়।

ভুক্তভোগী এলাকার আ. রশিদ মাষ্টার, জয়নাল মাষ্টারসহ অনেকেই জানান, স্বাধীনতার প্রায় ৫০টি বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে, আমারা স্বাধীনতা ভোগ করতে পাচ্ছি না। দেশের সব স্থানেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে কিন্তু এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগে নাই। নির্বাচন এলেই অত্র অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিগণ উন্নয়নের নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন শেষে তাদের মাঠে দেখা যায় না। দুঃখের বিষয় শুধু ব্রিজের দাবি করেই গেলাম কিন্তু বাস্তবায়ন পেলাম না।

জনগণের দাবির মুখে খাজার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, ওখানে একটি ব্রিজের অতি প্রয়োজন। সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে সোনাভরি নদীর উপর খাজার ঘাটে একটি ব্রিজের দাবি জানানো হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।

শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, জীবন চালনার তাগিদে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনে এসব নিবৃত্ত চরবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পার হতে হচ্ছে সোনাভরি নদী। কোদালকাটি ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো নদী ভাঙ্গার কারণে ভিটেমাটি হাড়িয়ে চর থেকে চরাঞ্চলে পাড়ি জমাতে হয় বছরে অন্তত একাধিকবার। একটি ব্রিজের অভাবে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এ অঞ্চলের।

শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন নৌকা যোগে পার হয়ে কর্তিমারী স্কুলে যাই, উপজেলা শহরের অদূরে সোনাভরির একটি পয়েন্টে পারাপারের জন্য রয়েছে একটি খেয়াঘাট যা খাঁজার ঘাট নামে পরিচিত। মাত্র ৭০ মিটার প্রস্থের নদীটি অত্র এলাকার মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কর্মব্যস্ত অসহায় মানুষ গুলোর প্রাণের দাবি সোনাভরি নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা-দেশ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও, এসব অঞ্চলে আজও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। এসব অঞ্চলের রাস্তাঘাট গুলোর নেই কোনো সংস্কার। অনুপযোগী এসব রাস্তাঘাটে যানবাহন চালনায় মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। একটি ব্রিজের অভাবে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ব্রিজটি নির্মাণ হলে ইউনিয়নটির সাথে স্থলপথে উপজেলা সদরে যাওয়া যাবে।

কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি খাজার ঘাটে একটি ব্রিজের। সবচেয়ে বড় কষ্ট হয় কোনো গর্ভবতী মা এবং মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নিতে। একটি ব্রিজ হলে যাতায়াতের সমস্যা দুর হবে, আমার এলাকার মানুষ শান্তি পাবে।

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।