হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নে নিমকপুরুরা গ্রাম সংলগ্ন একটি মাছের খামারে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন মাহতাব উদ্দিন মাতু (৬০)। সেই খামারের মালিকপক্ষ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ফিশারির নৌকায় লাশ তুলে ইউনিয়নের দশকাহনিয়া গ্রামের কাছে রেল লাইনের পশ্চিমপাশে ফেলে আসে তারা। মাদক ব্যবসা ও মাদকের আড্ডায় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।
গত ৪ ডিসেম্বর নৈশপ্রহরী মাহতাব উদ্দিন মাতু মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে।
প্রায় দুই মাস (৫৩ দিন) পর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই।
কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম জানান, এ ঘটনায় পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চান্দপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মো. আবদুল লতিফের ছেলে ফরহাদ (২৫) মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিম আক্তারের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি দিয়েছেন।
এতে তিনিসহ সাত-আটজন ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন।
পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম আরো জানান, নিহত মাতু মিয়ার ছেলে নূর উদ্দিন বাদী হয়ে ৫ ডিসেম্বর কটিয়াদী থানায় আজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় কিশোরগঞ্জ পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় পিবিআই এর এসআই সুমন মিয়াকে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুমন মিয়া জানান, পিবিআই গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ভোররাত ৪টার দিকে প্রথমে ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে। এর আধ ঘন্টা পর গ্রেপ্তার করা হয় খামারের আরেক মালিক ফালু মিয়ার ছেলে শহিদুজ্জামান সেলিম (৪৪) কে।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) তাদের দুজনকে আদালতে পাঠানোর পর ফরহাদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি দেন।
তার দেয়া তথ্যে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে খেলু মিয়ার ছেলে রইস উদ্দিন ওরফে লাইসু (৩৫) কে পিবিআই গ্রেপ্তার করে।
এর আগে কটিয়াদী থানা পুলিশ মাাছের খামারের দুই অংশীদার আব্দুর রহমান ও বোরহানকে গ্রেপ্তার করে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, নৈশপ্রহরী মাছের খামারে যে মাদকের ব্যবসা ও মাদকের আড্ডা হতো, এগুলো জানতেন।
প্রায়ই তিনি মালিকপক্ষের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতেন। মূলত এ কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চান্দপুর ইউনিয়নের নিমকপুরুরা গ্রামের মাছের খামারটির মূল মালিক শহিদুজ্জামান সেলিম, আবদুর রহমান, মুজিবুর ও জসিম। তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন অংশীদার রয়েছে। তাদের খামারে কাজ করতেন মাহতাব উদ্দিন মাতু মিয়া।
পিবিআই জানায়, ৩ ডিসেম্বর রাতে ওই নৈশপ্রহরী ফিশারিতে পাহারা দেওয়ার জন্য গেলে তাকে সেখানকার একটি টিনসেড ঘরে নিয়ে যায়। ওই ঘরে থাকা সাত-আটজন তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।