হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি যেন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের দরপত্রে দুর্নীতি, সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতি, নির্মাণকাজে দুর্নীতি; এমনকি দুর্নীতির উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে এর মেয়াদ বাড়ানো হয় বলেও অভিযোগ আছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দুর্নীতিবাজদের লালসা থেকে মুক্ত থাকেনি প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে নেওয়া চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্পও।
গোপালগঞ্জে শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে পাঁচ বছর আগে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে পদে পদে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া কাজ হয় নিুমানের।
এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালকের লিখিত অভিযোগে এ প্রকল্পের কাজে বড় ধরনের ২৬টি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ত্রুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-প্রতিষ্ঠান নির্মাণসংক্রান্ত অনুমোদিত কোনো নকশাই প্রতিষ্ঠানপ্রধান বুঝে পাননি; হাসপাতাল ও প্রশাসনিক ভবনের ছাদের ভেতর দিয়ে পানি পড়ে; আরডিপিপি অনুযায়ী সোলার প্যানেল দেওয়া হয়নি; দেওয়ালের নিচে ইটের গাঁথুনি নেই; বিদ্যুতের কাজ অত্যন্ত নিুমানের হওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ইত্যাদি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে লিখিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
দুর্নীতি দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই আমরা মনে করি, দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির বিকল্প নেই। উদ্বেগের বিষয় হলো, বঙ্গমাতার নামের প্রকল্পটি হস্তান্তরের সময় দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ছয় প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এমন লঘুদণ্ডের পরও তাদের এক ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়।
বর্তমানে সেই নির্বাহী প্রকৌশলী নাকি ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ ‘অলংকৃত’ করছেন! এই যদি হয় দুর্নীতির সাজা, তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হবে কীভাবে? সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। মানুষ বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখতে চায়।
শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তদুপরি এটি বঙ্গমাতার নামের প্রতিষ্ঠান। কাজেই এ প্রকল্পের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা সরকারের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।