হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিন দিন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেড়েই চলেছে। বয়স ৪০ পেরুলেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। নারী- পুরুষ কোনো ভেদাভেদ নেই। যে কেউ এই সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে এটি আসলে বয়সজনিত সমস্যা। সাধারণ কোনো সমস্যা নয় এটি। প্রতি পাঁচজনের ভেতর একজন জানেই না যে, কি ভয়ংকর অসুখ নিয়ে সে বেঁচে আছে!
রক্তচাপের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস, দৃষ্টিহীনতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি নীরবে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে রক্তচাপ। হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর হয় রক্তচাপের কারণে। তাই শুরু থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এর জন্য মুঠো ভর্তি ওষুধ না খেয়ে সঙ্গে রাখুন ভেষজ উপাদান। এতে খুব সহজেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে ওষুধ ছাড়াই আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন-
মর্নিং ওয়াক মাস্ট
৪০০ টি সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সকালে হাঁটাহাঁটি এবং ব্যায়ামের ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ৯০ ভাগ। তবে অবশ্যই দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে আপনাকে। এর ফলে দেহে যে উপকার হয় তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ওষুধের সমতুল্য। শরীরচর্চার ফলে হৃদপিন্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অধিক অক্সিজেন ব্যবহার করে। ফলে রক্ত পরিশোধনের সময় এর উপর অধিক চাপ পড়ে না। প্রতিদিন আধা ঘন্টার জন্য হলেও কার্ডিও করুন, যা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে।
মেডিটেশন
আমরা যখন চাপে থাকি তখন আমাদের শরীর রক্তে কর্টিসল, এড্রেনালিনের মত স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনগুলো হৃদপিন্ডের গতি বাড়িয়ে তুলে, রক্তনালিকে সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন,ইয়োগা, তাই চি’র মতো কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম স্ট্রেস হরমোনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্ত চাপ কমায়।
শুরুটা করুন প্রতিদিন সকালে মাত্র পাঁচ মিনিট চর্চার মাধ্যমে, রাতেও ঘুমুতে যাবার সময় ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ার অভ্যাস করুন পাঁচ মিনিটের জন্য।
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
রক্তচাপ কমাতে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি বোঝাই খাদ্য তালিকা রাখুন। পটাসিয়াম আমাদের কিডনিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে সোডিয়াম নির্গমনে সহায়তা করে। অতিরিক্ত সোডিয়ামের নির্গমন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকলেট রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়
মিষ্টি খাবারে ফ্লেভানল থাকে যা রক্তের চাপ কমিয়ে রক্ত প্রবাহকে সচল রাখতে সাহায্য করে। অস্ট্রেলিয়ার এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত এবং ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
ডার্ক চকলেট কতখানি ‘ডার্ক’ হবে? সত্যি কথা বলতে বিশেষজ্ঞরা এখনো কোকো গ্রহণের আদর্শ পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেন নি। কিন্তু এর পরিমাণ যত বেশি হবে, ততই ভালো। অবশ্যই রক্ত চাপ কমানোর জন্য আপনাকে দিনভর চকলেট চিবোতে হবে ব্যাপারটা তা নয়। তবে হ্যাঁ যখনই একটু মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হবে তখন হাতটা ডার্ক চকলেটের দিকেই বাড়ানোর চেষ্টা করবেন।
কাজের চাপ কমান
ক্যালিফোর্নিয়ার ২৪ হাজার অধিবাসীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৪১ ঘন্টার ওপরে অফিস ডিউটি হাইপারটেনশানের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে ১৭ শতাংশ। এই গবেষণার প্রধান গবেষক হাইউ ইয়াং জানান, অত্যধিক কাজ মানুষকে শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে বিমুখ করে তোলে।
যদি একেবারেই দিনে এক্সারসাইজের সুযোগ না পান, তাহলে অন্তত অফিস থেকে এমন একটা সময় বের হোন যেন কিছুটা সময় জিমে ঘাম ঝরাতে পারেন বা বাড়ি গিয়ে নিজের জন্য স্বাস্থ্যকর কোনো রেসিপি তৈরী করতে পারেন। কম্পিউটারে একটা ‘রিমাইন্ডার’ দিয়ে রাখতে পারেন। কখন নীল স্ক্রিন বন্ধ করে বাড়ি যেতে হবে তা ভালভাবে মনে করিয়ে দেবে এই সংকেত।
সংগীতে মনযোগী হতে পারেন
ইতালির গবেষণা বলে, সুরের তালে রক্তচাপও নামে। রক্তচাপের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ২৯ জনকে গবেষকরা প্রতিদিন আধা ঘন্টা করে ক্ল্যাসিক্যাল, সেল্টিক বা ভারতীয় সংগীত উপভোগের জন্য বলেন। ছয় মাস পর দেখা গেল, তাদের রক্ত চাপ গড়ে ৪ মিমি পারদ পর্যন্ত নেমেছে।
এক গ্লাস দুধ
প্রাণিজ হোক বা সয়া- সে ইচ্ছে আপনার। খাবারে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এর বদলে যদি সয়া বা মিল্ক প্রোটিন সমৃদ্ধ (টফু বা লো ফ্যাট ডেইরি) কিছু যুক্ত করতে পারেন , তাহলে হাইপারটেনশানের রোগীরা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। দিনে অন্তত একগ্লাস দুধ খান।