হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের শরীরে লিভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য লিভারকে সুস্থ রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের জীবনযাপনে ত্রুটি থাকলে লিভার সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। লিভারকে সুস্থ রাখতে চাইলে কিছু খাবারের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি কিছু খাবারকে উপেক্ষা করতে হবে। এখানে লিভারের সুস্থতায় কী খাবেন, কী খাবেন না তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
লিভারের সুস্থতায় যা খাবেন না
* চর্বিযুক্ত খাবার: লিভারকে সুস্থ রাখার ডায়েটে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ ও বার্গারের মতো চর্বিযুক্ত খাবার স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়। লিভারে সমস্যা থাকলে এসব খাবার খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে খেলে লিভারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সময়ের আবর্তনে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে লিভারে সিরোসিস নামক স্কার তৈরি হতে পারে। তাই লিভারে সমস্যা থাকুক কিংবা না থাকুক, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
* চিনিযুক্ত খাবার: বেশি পরিমাণে চিনি খেলে পরিণামে লিভারকে ভুগতে হতে পারে। বিশেষ করে লিভারে রোগ থাকলে চিনিযুক্ত খাবার অবশ্যই সীমিত করতে হবে অথবা এড়িয়ে চলতে হবে। লিভার চিনিকে চর্বিতে রূপান্তর করে। তাই বেশি চিনি খেলে লিভার বেশি চর্বি তৈরি করবে। এটা দীর্ঘসময় পর ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত করতে পারে। মাঝেমধ্যে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
* মদ জাতীয় পানীয়: অতিরিক্ত মদপানে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সময় পরিক্রমায় মাদকাসক্ত লোকের লিভারে সিরোসিস হতে পারে। এমনকি মাঝেমধ্যে মদপানও ক্ষতিকারক হতে পারে। বৈশ্বিক গবেষণা মতে, এই ধরনের পানীয় পানের নিরাপদ মাত্রা নেই। তাই লিভারকে রক্ষার্থে মদপানের অভ্যাস ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করুন।
* প্যাকেটজাত স্ন্যাকস: প্যাকেটজাত স্ন্যাকস হলো তুমুল জনপ্রিয় খাবার। এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো, এটা যে লিভারের ক্ষতি করে তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। সাধারণত চিপস ও বেকড ফুডসের মতো প্যাকেটজাত স্ন্যাকসে প্রচুর চিনি, লবণ ও চর্বি থাকে। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন- আপেল ও বাদাম।
লিভারের সুস্থতায় যা খাবেন
* ওটমিল: যেসব খাবারে প্রচুর আঁশ রয়েছে তা লিভারকে সর্বোত্তম কাজ করতে সহায়তা করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখার প্রয়াসে ওটমিলের মতো আঁশ সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে দিন শুরু করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ওটমিল খেলে ওজন ও পেটের চর্বি কমে। এটা হলো লিভারের রোগ প্রতিরোধের একটি ভালো উপায়।
* কফি: যারা কফি ছাড়া চলতে পারেন না তাদের জন্য সুখবর রয়েছে। কফি পানে লিভার উপকৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কফি পান করলে অ্যালকোহল বা অস্বাস্থ্যকর খাবার জনিত ক্ষতি থেকে লিভার রক্ষা পেতে পারে। কফি পানে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিও কমতে পারে।
* গ্রিন টি: গ্রিন টি পান করলে প্রচুর ক্যাটেচিনস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন। গবেষণা ধারণা দিয়েছে যে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিছু ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, যেখানে লিভার ক্যানসারও রয়েছে। নিজে চা বানিয়ে গরম অবস্থায় পান করলে বেশি ক্যাটেচিন পাবেন। রেডি-টু-ড্রিংক গ্রিন টি বা ঠান্ডা চায়ে ক্যাটেচিন কম থাকে।
* আমন্ড বাদাম: বাদামে (বিশেষ করে আমন্ড বাদামে) প্রচুর ভিটামিন ই পাওয়া যায়। গবেষণা বলছে, ভিটামিন ই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। আমন্ড বাদাম হার্টের জন্যও ভালো। তাই প্রতিদিন স্ন্যাকস হিসেবে একমুঠো আমন্ড বাদাম খেতে পারেন।
* পালংশাক: সবুজ শাকে গ্লুটাথিয়োন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তাই লিভারের কার্যক্রমে বিঘ্নতা প্রতিরোধে গ্লুটাথিয়োন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। গ্লুটাথিয়োনের একটি ভালো উৎস হলো পালংশাক। এছাড়া ঢেঁড়স ও শতমূলীতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি পাওয়া যায়।
* ব্লুবেরি: ব্লুবেরি লিভারের স্বাস্থ্যে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। এই ফলের পলিফেনলস লিভারের সমস্যা তথা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ প্রতিরোধ করতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরল ও স্থূল শরীরের মানুষদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। তারা ঝুঁকি কমাতে পলিফেনলস সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, যেমন- জলপাই, ডার্ক চকলেট, প্লাম ও ব্লুবেরি।