হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিয়ে জীবনযাপন করছেন। এই ব্যথা প্রতিদিনকার কাজকে কঠিন করে তোলে। পেইনকিলার খেলে ব্যথা কমে যায়, কিন্তু এর সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। গবেষকদের মতে, দীর্ঘসময় পেইনকিলার ব্যবহার করলে কিডনি ও লিভারে সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় ওষুধ খেতেই হবে এমনকোনো কথা নেই। কিছু নন-ফার্মাকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টেও ব্যথার লাগাম টেনে ধরা যায়। এখানে ওষুধ ছাড়াই ব্যথা কমানোর উপায় দেয়া হলো।
* ভিটামিন ডি: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে ও ঘুমের মান বাড়াতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ২০১৭ সালে জার্নাল অব এন্ডোক্রাইনোলজিতে প্রকাশিত রিভিউ অনুসারে- ব্রাজিলের গবেষকরা দেখেছেন যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট কেবল ঘুমের সমস্যাই প্রশমিত করেনি, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতেও সহায়ক হয়েছে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে ঘুমের সঙ্গে ব্যথার কী সম্পর্ক? ঘুমের অভাবে প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়, যার ফলে ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতাও বাড়ে। প্রতিদিন কিছুসময় রোদে কাটালে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করে নেবে। এছাড়া ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন ও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পারেন।
* মেডিটেরানিয়ান ডায়েট: ডা. বোনাকদার বলেন, ‘প্রমাণ রয়েছে যে রক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাতে হাঁটুর বাতব্যথা কমেছে। যারা মেডিটেরানিয়ান ডায়েট অনুসরণে রক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাদের ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা কমেছে।’ মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে ফল ও শাকসবজি তথা আঁশ সমৃদ্ধ খাবার থাকে বলে রক্ত শর্করা দ্রুত বাড়ে না। ২০১৭ সালে পেইন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রদাহ প্রশমনকারী খাবার খেলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমে যায়, বিশেষ করে শরীর স্থূল হলে। এটা হলো ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের পরিচালিত গবেষণা। প্রদাহ কমাতে চাইলে নিঃসন্দেহে মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।
* কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি: অবান্তর চিন্তাভাবনায় ব্যথা উদ্দীপ্ত হয়। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) হলো এক ধরনের সাইকোথেরাপিউটিক ট্রিটমেন্ট- যা মানুষকে নেতিবাচক, বিরক্তিকর ও বিধ্বংসী চিন্তাভাবনা, আবেগ ও আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। সিবিটিতে ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনার প্যাটার্ন শনাক্তকরণ ও পরিবর্তনের মাধ্যমে রিলাক্সে থাকার উপায় শেখানো হয়। ডা. বোনাকদার বলেন, ‘সিবিটি ও অন্যান্য সাইকোথেরাপিউটিক ট্রিটমেন্ট মস্তিষ্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতেও সহায়ক হতে পারে।’
* হলুদ: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগলে হলুদের ব্যবহার বাড়াতে পারেন। ডা. বোনাকদারের মতে, ‘হলুদে একটি প্রদাহ প্রশমনকারী উপাদান (কারকুমিন নামক রঞ্জক, যা হলুদকে হলুদ রঙের করেছে) রয়েছে। এটা প্রদাহ ও ব্যথা উপশম করতে পারে। এর স্বপক্ষে প্রমাণও রয়েছে।’ ২০১৬ সালে জার্নাল অব মেডিসিনাল ফুডে প্রকাশিত মেটা-অ্যানালাইসিসে বলা হয়েছে, বাতরোগের চিকিৎসায় হলুদের কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্মুদির মতো খাবারে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টারমেরিক সাপ্লিমেন্টও সেবন করতে পারেন।