ঢাকা ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলছে রস সংগ্রহের প্রস্ততি যশোরের যশ খেজুরের রস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
  • ২৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ। খেজুর গাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। যশোরের যশ খেজুরের রস। শীতের আগমনী বার্তায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ পরিস্কার করা। ডালপালা কেটে পরিস্কার করার পর দফায় দফায় চাচ দেয়া হচ্ছে। বসানো হচ্ছে কঞ্চির নলি। যা দিয়ে খেজুর গাছ থেকে বেয়ে আসবে সুমিষ্ট রস। মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে গাছ থেকে সংগ্রহ হবে রস। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু সরকারিভাবে কখনোই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদা পুরণ ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানি করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামের গাছি ময়না মন্ডল জানালেন, আমরা এখন গাছ পরিস্কার করছি। এরপরই কাটা শুরু হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্ততি চলছে। গাছিরা ধারালো দা হাতে ছুটছেন খেজুর গাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেধে পাখির মতো ঝুলে গাছি দা দিয়ে গাছ কেটে তাতে মাটির ভাড় ঝুলানো হয়।
এরপরই রস থেকে গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে-এর জুড়ি নেই। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর প্রতিবছরই বাড়ছে। রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় গুড় ও পাটালি নিয়ে। বিশেষত্ব হচ্ছে যত শীত তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয় খেজুরের রস। ঠকঠকে শীতের গুড় ও পাটালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অসময়ে হাজারো চেষ্টা করেও শীত মৌসুমের আসল গুড় পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও তা হবে ভেজাল কিংবা চিনি মিশানো। তাই শীত মৌসুমে সবাই খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি সংগ্রহের অপেক্ষা করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে খেজুর গাছীদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। তাদের খুশি ম্লান হয়ে যায় যখন রস, গুড় ও পাটালির উপযুক্ত মূল্য না পায়। তাছাড়া খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে গেছে। আগের মতো বিরাট লাভজনক না হলেও মৌসুমী গাছীরা নতুন এক গতি সৃষ্টি করে থাকে। এবারও তার ব্যতয় ঘটছে না। তবে আগে প্রতিটি গ্রামে প্রায় বাড়িতে গুড় তৈরির রমরমা অবস্থা ছিল। এবার একেবারেই কম। কোন কোন গ্রামে খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গাছ থাকলেও গাছি নেই। অথচ খেজুরের গুড় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। যা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারি কোন পৃষ্টপোষকতা নেই।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযত্ম অবহেলায় ও সম্পুর্ণ বিনা খরচে বেড়ে ওঠা ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীত মৌসুমে মানুষের রসনা তৃপ্তির যোগান দিয়ে আসছে। এর জন্য বাড়তি খরচ কিংবা আবাদি জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়ক পথ, রেলপথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানো সম্ভব। তাতে উম্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতির এক নতুন দ্বার।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চলছে রস সংগ্রহের প্রস্ততি যশোরের যশ খেজুরের রস

আপডেট টাইম : ১১:১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ। খেজুর গাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। যশোরের যশ খেজুরের রস। শীতের আগমনী বার্তায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ পরিস্কার করা। ডালপালা কেটে পরিস্কার করার পর দফায় দফায় চাচ দেয়া হচ্ছে। বসানো হচ্ছে কঞ্চির নলি। যা দিয়ে খেজুর গাছ থেকে বেয়ে আসবে সুমিষ্ট রস। মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে গাছ থেকে সংগ্রহ হবে রস। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু সরকারিভাবে কখনোই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদা পুরণ ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানি করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামের গাছি ময়না মন্ডল জানালেন, আমরা এখন গাছ পরিস্কার করছি। এরপরই কাটা শুরু হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্ততি চলছে। গাছিরা ধারালো দা হাতে ছুটছেন খেজুর গাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেধে পাখির মতো ঝুলে গাছি দা দিয়ে গাছ কেটে তাতে মাটির ভাড় ঝুলানো হয়।
এরপরই রস থেকে গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে-এর জুড়ি নেই। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর প্রতিবছরই বাড়ছে। রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় গুড় ও পাটালি নিয়ে। বিশেষত্ব হচ্ছে যত শীত তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয় খেজুরের রস। ঠকঠকে শীতের গুড় ও পাটালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অসময়ে হাজারো চেষ্টা করেও শীত মৌসুমের আসল গুড় পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও তা হবে ভেজাল কিংবা চিনি মিশানো। তাই শীত মৌসুমে সবাই খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি সংগ্রহের অপেক্ষা করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে খেজুর গাছীদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। তাদের খুশি ম্লান হয়ে যায় যখন রস, গুড় ও পাটালির উপযুক্ত মূল্য না পায়। তাছাড়া খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে গেছে। আগের মতো বিরাট লাভজনক না হলেও মৌসুমী গাছীরা নতুন এক গতি সৃষ্টি করে থাকে। এবারও তার ব্যতয় ঘটছে না। তবে আগে প্রতিটি গ্রামে প্রায় বাড়িতে গুড় তৈরির রমরমা অবস্থা ছিল। এবার একেবারেই কম। কোন কোন গ্রামে খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গাছ থাকলেও গাছি নেই। অথচ খেজুরের গুড় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। যা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারি কোন পৃষ্টপোষকতা নেই।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযত্ম অবহেলায় ও সম্পুর্ণ বিনা খরচে বেড়ে ওঠা ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীত মৌসুমে মানুষের রসনা তৃপ্তির যোগান দিয়ে আসছে। এর জন্য বাড়তি খরচ কিংবা আবাদি জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়ক পথ, রেলপথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানো সম্ভব। তাতে উম্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতির এক নতুন দ্বার।