হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিপথেরিয়া রোগের নাম অনেকেই শুনেছেন। তবে এর ব্যাপারে তেমন একটা জানা নেই অনেকেরই। পোলিও, রুবেলা, কলেরা প্রভৃতি রোগের মত ডিপথেরিয়াও কিন্তু ভয়ঙ্কর একটি ব্যাধি। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এমন একটি ভয়াবহ রোগ, যা অন্যান্য বয়সের লোকদের থেকে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা দেয় এবং সহজেই একজনের কাছ থেকে অন্য জনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। মূলত ১-১২ বছর বয়সী শিশুদের ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে ১-৫ বছরের বাচ্চাদের এটি বেশি প্রভাবিত করে। এই সংক্রমণের ফলে নাক, গলা, হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র এবং কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই শিশুদের সঠিক সময় ডিপথেরিয়ার টিকা না দিলে পরবর্তীকালে এই রোগের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শিশু জন্মের দেড় মাস, আড়াই মাস ও সাড়ে তিন মাসে ডিপথেরিয়ার টিকা দেয়া হয়। তবে বর্তমান মহামারির সংক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে। হু এবং ইউনিসেফ-এর যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১২৯টি দেশের মধ্যে কম করে ৬৮টি দেশে টিকা দেয়ার কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে।
ফলে বিশেষজ্ঞদের একাংশই মনে করছেন, আমাদের দেশে ডিপথেরিয়াসহ শিশুদের ভয়াবহ অসুখগুলো পুনরায় ফিরতে পারে। তবে ডিপথেরিয়া কী, কেন হয়, লক্ষণ এবং প্রতিকার জেনে রাখুন-
ডিপথেরিয়া কী?
ডিপথেরিয়া হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ব্যাধি। করিনিব্যাকটিরিয়াম ডিপথেরি নামে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ থেকে এই রোগ হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এই মারাত্মক রোগ গলা ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। গলার পিছন দিকটা পুরু আস্তরণ দ্বারা ঢেকে যায়, ফলে খাবার খেতে ও গিলতে সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। এই রোগে হৃদপিণ্ড, কিডনি ও মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
ডিপথেরিয়ার লক্ষণ
এই রোগের লক্ষণ সাধারণত ৪-৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ পেতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। লক্ষণগুলো হল –
> ঠান্ডা লাগা, জ্বর, গলায় প্রচন্ড ব্যাথা ও কাশি
> মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা
> খাবার গিলতে সমস্যা, কথা বলার মধ্যে জড়তা
> নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা
> প্রচন্ড মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি বা মাঝে মাঝে রক্তপাত হওয়া
> ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি বা কালশিটে পড়ে যাওয়া
> টনসিলে ধূসর বর্ণের পর্দার জন্ম নেয়া
> ঘাড়ের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
রোগের ঝুঁকি
> রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
> সময়মতো টিকা না নিলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
> অস্বাস্থ্যকর ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
> সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
> বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের নির্ণয় করা হয়।
> গলার ভেতরে হওয়া ধূসর বর্ণের আস্তরণের পরীক্ষার মাধ্যমে।
> এছাড়াও সেরোলোজিক্যাল, রক্ত পরীক্ষা, ডিপথেরিয়ার অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যান্টি-টক্সিন ব্যবহার করা হয়। তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টি-টক্সিন এর মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে ডিপথেরিয়ার জীবাণু মেরে ফেলা হয়। আপনার কি ঘনঘন হাত ধোওয়ার অভ্যাস আছে? এই ভয়ানক রোগে আক্রান্ত নন তো! এই ওষুধগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে টিউবের সাহায্য নেয়া হয় এবং ফ্লুইডস বাই আইভি করা হয়। এছাড়াও রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম ও সুষম খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়।
প্রতিকারের উপায়
> সঠিক সময়ে শিশুদের টিকা গ্রহণ করাতে হবে। ডিপথেরিয়ার টিকাকে বলে ডিটিএপি। এই টিকাটি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের দিতে হবে।
> এই টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে ১০ বছর পর্যন্ত। তাই ১০ বছর বয়সের পর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পুনরায় এই টিকা নিতে হবে।
> স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের থাকার চেষ্টা করুন।
> রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন খাবার খাওয়া চালিয়ে যান।
সূত্র: বোল্ডস্কাই