ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন প্রিয় বাকের ভাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাকের নামে এক মাস্তানের ফাঁসি দেন আদালত। সেদিন কেঁদেছিল পুরো দেশ। এমনকি ওই পর্ব বাতিলের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক মিছিল-সমাবেশও হয়েছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি নাটকের চরিত্রের জন্য এতো আলোচনা ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র বাকের। পরোপকারী স্বভাবের কারণে এলাকার লোকজনের কাছে ‘বাকের ভাই’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

হুমায়ুন আহমেদের রচনায় পরিচালিত ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর কালজয়ী বাকের ভাই চরিত্র রূপায়নকারী অভিনেতা এবং সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৭৪তম জন্মদিন আজ। একাধারে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বশেষ একজন আদর্শ পিতা ও একজন আদর্শ স্বামী তিনি।

আসাদুজ্জামান নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও মাতার নাম আমিনা বেগম। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে তার পরিবার।

আসাদুজ্জামান নূর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে কাজ করার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অধীনে একটি ছাপাখানায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত দূতাবাসের প্রেস রিলেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড এ (বর্তমানে এশিয়াটিক থ্র্রি সিক্সটি) জেনারেল ম্যানেজার পদে কাজ করেন।

১৯৭২ সাল থেকে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থেকে বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গনের বিকাশের ধারায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত দলের ১৫টি নাটকে ৬০০ বারেরও বেশী অভিনয় করেছেন তিনি। নির্দেশনা দিয়েছেন দু’টি নাটক, যার ভেতর একটি দেওয়ান গাজীর কিসসা যা কিনা প্রায় তিন শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়ে সর্বোচ্চ প্রদর্শিত মঞ্চ নাটকের রেকর্ড গড়েছে।

আসাদুজ্জামান নূর ১১০ টিরও বেশী টিভি নাটক, সিরিজ নাটকে অভিনয় করেছেন। রেডিওতে প্রচারিত তার নাটকের সংখ্যা ৫০ এরও অধিক। তিনি মঞ্চের জন্য ব্রেখটেরে নাটকের বাংলা অনুবাদ, রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাসের টিভি নাট্যরুপ এবং টিভির জন্য একটি মৌলিক নাটক রচনা করেছেন। ‘এ মোর অহংকার’ ও ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ তার পুস্তাকাকারে প্রকাশিত নাটক।

নিজস্ব পরিচালনায় তিনি ৫০টিরও বেশী বিজ্ঞাপনচিত্র ও ভিডিও ছবি নির্মাণ করেন। এর পাশাপাশি একজন স্বনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী তিনি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাষ্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ রাশিয়া মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরর দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করবার পর ১২ই জানুয়ারি নবগঠিত মন্ত্রীসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

এ অভিনেতার জন্মদিন নিয়ে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রপাড়ায় দারুণ আগ্রহ। তার ভক্তরাও এদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তবে নিজে কখনো বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি।

জন্মদিন নিয়ে গণমাধ্যমে একবার এই কিংবদন্তি বলেছিলেন, আমি কখনো ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করিনি। কারণ আমি চাই না আমার জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপন করা হোক। অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবেই কাটুক না জন্মদিনের দিনটি। ছোটবেলাতেও আমার জন্মদিন কখনো বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো না। সেদিন বাড়িতে হয়তো মা একটু বেশি রান্না করতেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শুভ জন্মদিন প্রিয় বাকের ভাই

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাকের নামে এক মাস্তানের ফাঁসি দেন আদালত। সেদিন কেঁদেছিল পুরো দেশ। এমনকি ওই পর্ব বাতিলের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক মিছিল-সমাবেশও হয়েছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি নাটকের চরিত্রের জন্য এতো আলোচনা ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র বাকের। পরোপকারী স্বভাবের কারণে এলাকার লোকজনের কাছে ‘বাকের ভাই’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

হুমায়ুন আহমেদের রচনায় পরিচালিত ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর কালজয়ী বাকের ভাই চরিত্র রূপায়নকারী অভিনেতা এবং সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৭৪তম জন্মদিন আজ। একাধারে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বশেষ একজন আদর্শ পিতা ও একজন আদর্শ স্বামী তিনি।

আসাদুজ্জামান নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও মাতার নাম আমিনা বেগম। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে তার পরিবার।

আসাদুজ্জামান নূর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে কাজ করার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অধীনে একটি ছাপাখানায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত দূতাবাসের প্রেস রিলেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড এ (বর্তমানে এশিয়াটিক থ্র্রি সিক্সটি) জেনারেল ম্যানেজার পদে কাজ করেন।

১৯৭২ সাল থেকে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থেকে বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গনের বিকাশের ধারায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত দলের ১৫টি নাটকে ৬০০ বারেরও বেশী অভিনয় করেছেন তিনি। নির্দেশনা দিয়েছেন দু’টি নাটক, যার ভেতর একটি দেওয়ান গাজীর কিসসা যা কিনা প্রায় তিন শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়ে সর্বোচ্চ প্রদর্শিত মঞ্চ নাটকের রেকর্ড গড়েছে।

আসাদুজ্জামান নূর ১১০ টিরও বেশী টিভি নাটক, সিরিজ নাটকে অভিনয় করেছেন। রেডিওতে প্রচারিত তার নাটকের সংখ্যা ৫০ এরও অধিক। তিনি মঞ্চের জন্য ব্রেখটেরে নাটকের বাংলা অনুবাদ, রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাসের টিভি নাট্যরুপ এবং টিভির জন্য একটি মৌলিক নাটক রচনা করেছেন। ‘এ মোর অহংকার’ ও ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ তার পুস্তাকাকারে প্রকাশিত নাটক।

নিজস্ব পরিচালনায় তিনি ৫০টিরও বেশী বিজ্ঞাপনচিত্র ও ভিডিও ছবি নির্মাণ করেন। এর পাশাপাশি একজন স্বনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী তিনি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাষ্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ রাশিয়া মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরর দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করবার পর ১২ই জানুয়ারি নবগঠিত মন্ত্রীসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

এ অভিনেতার জন্মদিন নিয়ে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রপাড়ায় দারুণ আগ্রহ। তার ভক্তরাও এদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তবে নিজে কখনো বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি।

জন্মদিন নিয়ে গণমাধ্যমে একবার এই কিংবদন্তি বলেছিলেন, আমি কখনো ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করিনি। কারণ আমি চাই না আমার জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপন করা হোক। অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবেই কাটুক না জন্মদিনের দিনটি। ছোটবেলাতেও আমার জন্মদিন কখনো বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো না। সেদিন বাড়িতে হয়তো মা একটু বেশি রান্না করতেন।