ঢাকা ০৫:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামের মেঠো পথ এখন শূন্য দেশীয় প্রজাতির পাখি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০
  • ২৩৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোনো এক সময় ভোলার গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে এখন আর চিরচেনা সেই পাখি দেখা যায়না। পাখিদের কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখি শূন্য হতে চলছে।

বন-জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরুপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। দূরবীণ ব্যবহার করেও দুস্কর হয়ে পড়েছে পাখির দেখা।

বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বাচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

রহমত উল্লাহ নামে একজন বৃদ্ধা বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেত ভোর হয়েছে। পাখির কলকাকলীই বলে দিতো এখন সকাল, শুরু হতো দৈনেন্দিন কর্মব্যস্থতা। কিন্তু এখন যেন সেই পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন আর গাছ গাছালিতে পাখির ডাক নেই।

কয়েকজন বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, কোকিল, ময়না, শালিক, চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপ-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করে। এই পাখির কিচির-মিছির শীষ দেওয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না।

সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোঁখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, বক, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়েনা। তাই পাখি প্রিয় অনেক শৌখিন মানুষকে বাড়ির খাচায় বন্ধি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।

ভোলা সদর উপজেলার পাখি পালক মো. তৈয়ব পালোয়ান বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না, তা ছাড়া শিকারীদের দৌরাত্মের কারণে পাখি শূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোঃ মোমেন মিঞা বলেন, বণাঞ্চলে নির্বচারে পাখি শিকার হচ্ছে। বন উজার করে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। তাছাড়াও ফসলে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পাখির বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পাখি।

এখনি পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সচেতন মহল মনে করছেন, নদী ভাঙ্গণের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, তাছাড়া জনসংখ্যা প্রভবেও কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ গাছ কেটে বন উজার করে পাখিদের আবাস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না।

একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন বলেন, বেশী মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি।

তিনি আরো বলেন, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, উপকূলের বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা মিলবে না।

এম শরীফ আহমেদ

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গ্রামের মেঠো পথ এখন শূন্য দেশীয় প্রজাতির পাখি

আপডেট টাইম : ১১:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোনো এক সময় ভোলার গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে এখন আর চিরচেনা সেই পাখি দেখা যায়না। পাখিদের কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখি শূন্য হতে চলছে।

বন-জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরুপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। দূরবীণ ব্যবহার করেও দুস্কর হয়ে পড়েছে পাখির দেখা।

বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বাচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

রহমত উল্লাহ নামে একজন বৃদ্ধা বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেত ভোর হয়েছে। পাখির কলকাকলীই বলে দিতো এখন সকাল, শুরু হতো দৈনেন্দিন কর্মব্যস্থতা। কিন্তু এখন যেন সেই পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন আর গাছ গাছালিতে পাখির ডাক নেই।

কয়েকজন বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, কোকিল, ময়না, শালিক, চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপ-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করে। এই পাখির কিচির-মিছির শীষ দেওয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না।

সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোঁখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, বক, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়েনা। তাই পাখি প্রিয় অনেক শৌখিন মানুষকে বাড়ির খাচায় বন্ধি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।

ভোলা সদর উপজেলার পাখি পালক মো. তৈয়ব পালোয়ান বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না, তা ছাড়া শিকারীদের দৌরাত্মের কারণে পাখি শূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোঃ মোমেন মিঞা বলেন, বণাঞ্চলে নির্বচারে পাখি শিকার হচ্ছে। বন উজার করে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। তাছাড়াও ফসলে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পাখির বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পাখি।

এখনি পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সচেতন মহল মনে করছেন, নদী ভাঙ্গণের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, তাছাড়া জনসংখ্যা প্রভবেও কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ গাছ কেটে বন উজার করে পাখিদের আবাস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না।

একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন বলেন, বেশী মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি।

তিনি আরো বলেন, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, উপকূলের বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা মিলবে না।

এম শরীফ আহমেদ

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবী।