ঢাকা ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর পর দুনিয়ায় ফেরার আকুতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০
  • ১৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ থেকে ১০০ বছর পর। ক্যালেন্ডারের পাতায় যখন ২১২০ সাল। আমাদের প্রায় সবার দেহ তখন মাটির নিচে। অস্তিত্ব তখন রুহের জগতে।

ফেলে যাওয়া আমাদের সুন্দর বাড়িটা হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করছে, পছন্দের কাপড়গুলো ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে, শখের গাড়িটি হয়তো অন্য কেউ চালাচ্ছে।

আর আমায়? খুব কমজনই স্মরণে রেখেছে। কেউ বা ভাবেও না। হাতে সময় নেই তাদের, যাদের জন্য সব করতে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছিলাম!

আচ্ছা, ব্যস্ততার এই জীবনে আপনি আপনার দাদার দাদাকে কতবার স্মরণ করেন? আপনার দাদির দাদির কথা কখনো কি আপনার মনে পড়ে?

পৃথিবীর বুকে আজকের এই বেঁচে থাকা, এত হৈচৈ, এত মায়াকান্না—এভাবেই চলছে। গত হওয়া অসংখ্য প্রজন্মকে টপকে আমরা এই জীবন লাভ করেছি, তেমনি ভবিষ্যতে অসংখ্য প্রজন্মের ভিড়ে হারিয়ে যাবে এই জীবন।

যত প্রজন্ম আসছে আর যাচ্ছে, দুনিয়াকে বিদায় জানানোর, দায়িত্ব-ক্ষমতা অন্যের হাতে অর্পণ করার, কিংবা কারো ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে যাওয়ার আগে খুব কম মানুষ সময় পায় ফেলে যাওয়া জীবন একটু ফিরে দেখার। বাস্তবতা হচ্ছে, এই জীবন আমাদের কল্পনার চেয়েও ছোট।

২১২০ সালে কবরে শুয়ে আমরা প্রায় সবাই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারব, সত্যিই দুনিয়াটা কতই না তুচ্ছ ছিল!

একে ঘিরে দেখা স্বপ্নগুলো কতই না নগণ্য ছিল! ২১২০ সালে আমরা অনেকেই চাইব—ইস, যদি জীবনটা মহৎ কিছুতে উৎসর্গ করতে পারতাম! ইসলামের জন্য, নেক আমল সংগ্রহের জন্য আরো কিছু করতে পারতাম! মৃত্যুর পরও যে কাজগুলো আমাদের উপকার করে যেত, সেগুলোর পেছনে যদি আরো সময় উৎসর্গ করতে পারতাম! ইস!

শুধু ইস আর ইস!!

যারা ইসলামের আলোকে জীবন পরিচালিত করেনি, তারা চিৎকার করে কথাগুলো বলবে, কিন্তু কোনো ফল বয়ে আনবে না। তাদের হাহাকার কোরআন এভাবে তুলে ধরেছে :

‘…হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করতাম।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৬)

‘…হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে বিরাট সফল হতে পারতাম।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৩)

‘হায়! আমি যদি ওকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৮)

‘…হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি আগে করিনি। (বরং জবাব মিলবে) না, এটা হওয়ার নয়। এটা তো তার একটি বাক্যমাত্র, যা সে বলবেই। তাদের সামনে বারজাখ থাকবে উত্থান দিন পর্যন্ত।’ (সুরা : মুমিনুন, ৯৯-১০০)

মৃত্যুর পর অনেকেই আফসোসে নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এই বলে, ‘হায়! আমি যদি রাসুলের পথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)

কিন্তু সেই সময়ের আফসোস কোনো কাজে আসবে না।

আসুন, মৃত্যুর ফেরেশতা আসার আগেই আমরা সংশোধিত হয়ে যাই! পাপে ভরা জীবনটা পাল্টে ফেলি! নিজেকে বদলে ফেলি! নিজেকে শুধরে নিই!

অবশেষে এই একটি হাদিস উল্লেখ করে শেষ করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের পানিতে তার একটি আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনল। সে দেখুক, তার আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৮; তিরমিজি, হাদিস : ২৩২৩)

হে আল্লাহ! আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মৃত্যুর পর দুনিয়ায় ফেরার আকুতি

আপডেট টাইম : ০৯:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ থেকে ১০০ বছর পর। ক্যালেন্ডারের পাতায় যখন ২১২০ সাল। আমাদের প্রায় সবার দেহ তখন মাটির নিচে। অস্তিত্ব তখন রুহের জগতে।

ফেলে যাওয়া আমাদের সুন্দর বাড়িটা হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করছে, পছন্দের কাপড়গুলো ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে, শখের গাড়িটি হয়তো অন্য কেউ চালাচ্ছে।

আর আমায়? খুব কমজনই স্মরণে রেখেছে। কেউ বা ভাবেও না। হাতে সময় নেই তাদের, যাদের জন্য সব করতে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছিলাম!

আচ্ছা, ব্যস্ততার এই জীবনে আপনি আপনার দাদার দাদাকে কতবার স্মরণ করেন? আপনার দাদির দাদির কথা কখনো কি আপনার মনে পড়ে?

পৃথিবীর বুকে আজকের এই বেঁচে থাকা, এত হৈচৈ, এত মায়াকান্না—এভাবেই চলছে। গত হওয়া অসংখ্য প্রজন্মকে টপকে আমরা এই জীবন লাভ করেছি, তেমনি ভবিষ্যতে অসংখ্য প্রজন্মের ভিড়ে হারিয়ে যাবে এই জীবন।

যত প্রজন্ম আসছে আর যাচ্ছে, দুনিয়াকে বিদায় জানানোর, দায়িত্ব-ক্ষমতা অন্যের হাতে অর্পণ করার, কিংবা কারো ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে যাওয়ার আগে খুব কম মানুষ সময় পায় ফেলে যাওয়া জীবন একটু ফিরে দেখার। বাস্তবতা হচ্ছে, এই জীবন আমাদের কল্পনার চেয়েও ছোট।

২১২০ সালে কবরে শুয়ে আমরা প্রায় সবাই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারব, সত্যিই দুনিয়াটা কতই না তুচ্ছ ছিল!

একে ঘিরে দেখা স্বপ্নগুলো কতই না নগণ্য ছিল! ২১২০ সালে আমরা অনেকেই চাইব—ইস, যদি জীবনটা মহৎ কিছুতে উৎসর্গ করতে পারতাম! ইসলামের জন্য, নেক আমল সংগ্রহের জন্য আরো কিছু করতে পারতাম! মৃত্যুর পরও যে কাজগুলো আমাদের উপকার করে যেত, সেগুলোর পেছনে যদি আরো সময় উৎসর্গ করতে পারতাম! ইস!

শুধু ইস আর ইস!!

যারা ইসলামের আলোকে জীবন পরিচালিত করেনি, তারা চিৎকার করে কথাগুলো বলবে, কিন্তু কোনো ফল বয়ে আনবে না। তাদের হাহাকার কোরআন এভাবে তুলে ধরেছে :

‘…হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করতাম।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৬)

‘…হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে বিরাট সফল হতে পারতাম।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৩)

‘হায়! আমি যদি ওকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৮)

‘…হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি আগে করিনি। (বরং জবাব মিলবে) না, এটা হওয়ার নয়। এটা তো তার একটি বাক্যমাত্র, যা সে বলবেই। তাদের সামনে বারজাখ থাকবে উত্থান দিন পর্যন্ত।’ (সুরা : মুমিনুন, ৯৯-১০০)

মৃত্যুর পর অনেকেই আফসোসে নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এই বলে, ‘হায়! আমি যদি রাসুলের পথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)

কিন্তু সেই সময়ের আফসোস কোনো কাজে আসবে না।

আসুন, মৃত্যুর ফেরেশতা আসার আগেই আমরা সংশোধিত হয়ে যাই! পাপে ভরা জীবনটা পাল্টে ফেলি! নিজেকে বদলে ফেলি! নিজেকে শুধরে নিই!

অবশেষে এই একটি হাদিস উল্লেখ করে শেষ করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের পানিতে তার একটি আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনল। সে দেখুক, তার আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৮; তিরমিজি, হাদিস : ২৩২৩)

হে আল্লাহ! আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।