তবলিগ জামাতের সাথিদের সবচেয়ে বড় সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমা। এর প্রধান লক্ষ্য পথহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়া। মুসলমান সংখ্যায় অনেক, কিন্তু বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুশীলন করেন খুব কম লোকই। যারা ইসলামে থেকেও ইসলাম থেকে দূরে সরে আছেন, তাদের দীনের গণ্ডিতে নিয়ে আসতেই তবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠা। আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিত বান্দাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সাধারণ মুসলমানের মধ্যে দীনের স্পিরিট জাগাতেই প্রতি বছর ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ইজতেমার বয়ানগুলোর মূল বিষয়ই হলো, মুমিন বান্দার অন্তরে আখেরাতের ভাবনা জাগ্রত করা। পরিশীলিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনাচারে উদ্বুদ্ধ করা।
ইজতেমার ময়দান থেকে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেরিয়ে যান দীনের রাস্তায়। নিজেদের অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে দীন শেখেন, অন্যদের শেখান। এভাবে তবলিগের কার্যক্রম গোটা বিশ্বে বিস্তৃৃতি ঘটেছে। লাখ লাখ মুসলিম সারা বছর পৃথিবীর নানা প্রান্তে তবলিগের কাজে নিয়োজিত থাকেন। পথহারা অগণিত মানুষ তবলিগের সন্ধান পেয়ে জীবন সাজানোর সুযোগ লাভ করছে। মানুষকে সভ্য, শালীন ও মার্জিত করার পেছনে তবলিগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই ধর্মপ্রিয়। ধর্মের প্রতি বিশেষ এ অনুরাগের কারণেই বিশ্ব ইজতেমার মতো আন্তর্জাতিক একটি মুসলিম সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। দারিদ্র্যপীড়িত সমস্যাসংকুল একটি দেশের মানুষ আমরা। বিদেশে গিয়ে বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হওয়ার সামর্থ্য এ দেশের খুব বেশি লোকের নেই। কিন্তু প্রতিটি মানুষের মধ্যে আছে আবেগ, ভালোবাসা ও খোদাপ্রেমের আলো। বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় মহাসমাবেশের আয়োজক হিসেবে কবুল করেছেন বাংলাদেশকে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক হিসেবে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আজ বেশ উজ্জ্বল।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক হিসেবে বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি গুরুত্বসহকারে উপস্থাপিত হয়। ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিদেশি মেহমান যারা আসেন, তারাও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি সু-ধারণা নিয়ে যান। এদেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ, শৃঙ্খলাবোধ, আতিথেয়তা সবই তাদের মনে দাগ কেটে যায়। যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে আগে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, তারাও বিশ্ব ইজতেমায় এসে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের সন্ধান পান। ইজতেমার কারণে গোটা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের আদান-প্রদান ঘটে, ভাব-বিনিময় হয়। এর ফলে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবে যেমন লাভবান হয়, তেমনি লাভবান হয় অর্থনৈতিকভাবেও।