ঢাকা ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা চাই শিশুরা নিরাপদ থাকুক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৯ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যে কোনো ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতন, কোনো কিছু হলে সাথে সাথে যেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। মহামারির এ সময়ে স্কুল যেহেতু বন্ধ, বাচ্চাদের মুক্ত হওয়ায় খেলার সুযোগ দিতে প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের কাছাকাছি কোনো পার্ক বা মাঠে নিয়ে যেতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হন।

তিনি বলেন, এই শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে লেখাপড়ার পাশপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও তাদের সস্পৃক্ত করা জরুরি। আমরা চাই, আমাদের শিশুরা নিরাপদ থাকবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং মানুষের মতো মানুষ হবে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো রাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, রাসেলের খেলার সাথি ফুপাতো ভাই ১০ বছরের আরিফ, ফুপাতো ভাইয়ের ৪ বছরের ছেলে সুকান্ত, ১৩ বছরের ফুপাতো বোন এবং তাদের বাসার গৃহপরিচারিকার ছেলে ৫/৬ বছরের পটকার নির্মম হত্যাকান্ড স্মরণ করে বলেন, কোনো শিশুর অকাল মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক বা অন্য দেশেই হোক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, এ পৃথিবীটা শিশুদের জন্য নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, বাসযোগ্য স্থান হোক। যেখানে প্রতিটি শিশুর একটি ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ, কাজেই সঠিকভাবে তাদের মেধা ও জ্ঞানকে বিকাশের সুযোগ আমাদেরকেই করে দিতে হবে। সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর শিশুদের আকা নির্বাচিত ছবি নিয়ে আমরা এঁকেছি ১০০ মুজিব এবং নির্বাচিত লেখা নিয়ে আমরা লিখেছি ১০০ মুজিবসহ শিশুদের লেখা বইয়ের (২৫টি বইয়ের সিরিজ) মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনয়তন প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে একটা সমস্যা এখন দেখা দিয়েছে যে, স্কুল খোলা যাচ্ছে না এবং বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, সত্যিই সেটা খুব কষ্টের, কারণ ঘরের মধ্যে বসে থেকে কি করবে তারা। আমাদের দেশে তবুও কিছু কিছু যৌথ পরিবার রয়েছে। যৌথ পরিবারের শিশুদের খুব একটা কষ্ট হয় না, কারণ, নিজের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সমবয়সী অনেক পাওয়া যায়- তাদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলাধুলা করে, খুনসুটি করে, ঝগড়া করেও আবার একসাথে মিলে খেলাধুলাও করতে পারে। তাদের একটা সুন্দর পরিবেশ থাকে, কথা বলার একটা সুযোগ পায়। কিন্তু যেখানে একক বা ছোট্ট পরিবার বা একা শিশু তাদের জন্য সত্যিই খুব কষ্টকর, তারা কি করবে?

শেখ হাসিনা বলেন, এমন পরিবারের ক্ষেত্রে আমি সব বাবা-মা বা অভিভাবকদের বলব যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে তারা স্কুলে যেতে পারছে না, তাই আপনারা কাছাকাছি কোনো পার্কে নিয়ে যাবেন। সেখানে দিনে অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও ছোটাছুটি বা খেলাধুলা তারা করতে পারে- সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া দরকারি বলে আমি মনে করি। কারণ, তাদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক অবস্থার জন্য সবদিক থেকেই এটা খুব দরকার। স্বাস্থ্যসুরক্ষার নিয়ম মেনেই চলতে হবে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের একটু খেলাধুলা করা বা খোলা বাতাসে নিয়ে যাওয়া বা রোদে খেলতে দেয়াটা এ করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমি মনে করি। আমি চাই বাবা-মারা এ বিষয়টি অন্তত একটু দেখবেন। এ সময় সারাদেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃষ্টির পাশাপাশি করোনাকালীন অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম যাতে হয়, সেজন্য তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার সুবাদে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই লেখাপড়া যাতে নষ্ট না হয়- সেদিকে সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে। শিশুদের বিকাশে খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিকচর্চা যেমন জরুরি, কাজেই সেগুলো যেমন করতে হবে, তেমনি মনযোগ দিয়ে লেখাপড়াও করতে হবে। কারণ, শিক্ষা ছাড়া কখনই একটি দেশকে কিছু দেয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৯ মাসের মধ্যে জাতির পিতা আমাদের কে যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে। শুধু তাই নয়, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে তুলছিলেন। চারদিকে অভাব-অনটন অথচ এরমধ্যেও প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি সরকারিকরণ করে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ২১ বছর অবহেলিত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাসহ জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে। জাতির পিতার প্রণীত শিশু আইনের আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় শিশু শ্রমনীতি ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এবং শিশু আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা বলেন, সারাজীবন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটানোয় নিজেরা বাবার স্নেহ বঞ্চিত ছিলেন, যদিও শিশুদের জাতির পিতা অত্যন্ত পছন্দ করতেন। যে কারণে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনকে সরকার জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

প্রধানন্ত্রী বলেন, তার সরকার ঝরে পড়া রোধ করতে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারা যেন সমাজের কাছে অপাংক্তেয় না হয় সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, নানা সুযোগ-সুবিধা এমনকি খেলাধুলাতেও উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছে। বিশেষ অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জন্য এ পর্যন্ত তারা ২১টি স্বর্ণসহ ৭১টি পদক জয় করে এনেছে। প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশে সরকার একটি বিশেষ একাডেমি করে দিচ্ছে। সমাজের কেউ যেন বাদ না যায় সেজন্য আমরা তাদেরকে বিশেষ ভাতাও প্রদান করছি। এ সময় প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত ১ কোটি ৩০ লাখ শিশুকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং প্রতিমাসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়েদের কাছে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও আমরা এ টাকা পাঠানো বন্ধ করিনি। বৃত্তি-উপবৃত্তি আমরা অব্যাহত রেখেছি, যাতে তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নষ্ট না হয়ে যায়। বিনা পয়সায় আমরা পাঠ্যপুস্তক যেমন দিচ্ছি, তেমনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য দিচ্ছি ব্রেইল বই। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ও ব্রেইল ভার্সান প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে সাংস্কৃতিকচর্চা খেলাধুলার জন্য সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিচ্ছে। আজকের শিশুরা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সেজন্য মানসম্পন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তার সরকার বহুমুখি শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছাক। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলবে, সেটাই আমরা চাই। আজকের শিশুরা সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবে। কিছু সমস্যা আসবে। কিন্তু সেগুলোকে মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমরা চাই শিশুরা নিরাপদ থাকুক

আপডেট টাইম : ১০:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যে কোনো ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতন, কোনো কিছু হলে সাথে সাথে যেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। মহামারির এ সময়ে স্কুল যেহেতু বন্ধ, বাচ্চাদের মুক্ত হওয়ায় খেলার সুযোগ দিতে প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের কাছাকাছি কোনো পার্ক বা মাঠে নিয়ে যেতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হন।

তিনি বলেন, এই শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে লেখাপড়ার পাশপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও তাদের সস্পৃক্ত করা জরুরি। আমরা চাই, আমাদের শিশুরা নিরাপদ থাকবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং মানুষের মতো মানুষ হবে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো রাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, রাসেলের খেলার সাথি ফুপাতো ভাই ১০ বছরের আরিফ, ফুপাতো ভাইয়ের ৪ বছরের ছেলে সুকান্ত, ১৩ বছরের ফুপাতো বোন এবং তাদের বাসার গৃহপরিচারিকার ছেলে ৫/৬ বছরের পটকার নির্মম হত্যাকান্ড স্মরণ করে বলেন, কোনো শিশুর অকাল মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক বা অন্য দেশেই হোক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, এ পৃথিবীটা শিশুদের জন্য নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, বাসযোগ্য স্থান হোক। যেখানে প্রতিটি শিশুর একটি ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ, কাজেই সঠিকভাবে তাদের মেধা ও জ্ঞানকে বিকাশের সুযোগ আমাদেরকেই করে দিতে হবে। সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর শিশুদের আকা নির্বাচিত ছবি নিয়ে আমরা এঁকেছি ১০০ মুজিব এবং নির্বাচিত লেখা নিয়ে আমরা লিখেছি ১০০ মুজিবসহ শিশুদের লেখা বইয়ের (২৫টি বইয়ের সিরিজ) মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনয়তন প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে একটা সমস্যা এখন দেখা দিয়েছে যে, স্কুল খোলা যাচ্ছে না এবং বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, সত্যিই সেটা খুব কষ্টের, কারণ ঘরের মধ্যে বসে থেকে কি করবে তারা। আমাদের দেশে তবুও কিছু কিছু যৌথ পরিবার রয়েছে। যৌথ পরিবারের শিশুদের খুব একটা কষ্ট হয় না, কারণ, নিজের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সমবয়সী অনেক পাওয়া যায়- তাদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলাধুলা করে, খুনসুটি করে, ঝগড়া করেও আবার একসাথে মিলে খেলাধুলাও করতে পারে। তাদের একটা সুন্দর পরিবেশ থাকে, কথা বলার একটা সুযোগ পায়। কিন্তু যেখানে একক বা ছোট্ট পরিবার বা একা শিশু তাদের জন্য সত্যিই খুব কষ্টকর, তারা কি করবে?

শেখ হাসিনা বলেন, এমন পরিবারের ক্ষেত্রে আমি সব বাবা-মা বা অভিভাবকদের বলব যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে তারা স্কুলে যেতে পারছে না, তাই আপনারা কাছাকাছি কোনো পার্কে নিয়ে যাবেন। সেখানে দিনে অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও ছোটাছুটি বা খেলাধুলা তারা করতে পারে- সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া দরকারি বলে আমি মনে করি। কারণ, তাদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক অবস্থার জন্য সবদিক থেকেই এটা খুব দরকার। স্বাস্থ্যসুরক্ষার নিয়ম মেনেই চলতে হবে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের একটু খেলাধুলা করা বা খোলা বাতাসে নিয়ে যাওয়া বা রোদে খেলতে দেয়াটা এ করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমি মনে করি। আমি চাই বাবা-মারা এ বিষয়টি অন্তত একটু দেখবেন। এ সময় সারাদেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃষ্টির পাশাপাশি করোনাকালীন অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম যাতে হয়, সেজন্য তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার সুবাদে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই লেখাপড়া যাতে নষ্ট না হয়- সেদিকে সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে। শিশুদের বিকাশে খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিকচর্চা যেমন জরুরি, কাজেই সেগুলো যেমন করতে হবে, তেমনি মনযোগ দিয়ে লেখাপড়াও করতে হবে। কারণ, শিক্ষা ছাড়া কখনই একটি দেশকে কিছু দেয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৯ মাসের মধ্যে জাতির পিতা আমাদের কে যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে। শুধু তাই নয়, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে তুলছিলেন। চারদিকে অভাব-অনটন অথচ এরমধ্যেও প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি সরকারিকরণ করে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ২১ বছর অবহেলিত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাসহ জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে। জাতির পিতার প্রণীত শিশু আইনের আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় শিশু শ্রমনীতি ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এবং শিশু আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা বলেন, সারাজীবন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটানোয় নিজেরা বাবার স্নেহ বঞ্চিত ছিলেন, যদিও শিশুদের জাতির পিতা অত্যন্ত পছন্দ করতেন। যে কারণে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনকে সরকার জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

প্রধানন্ত্রী বলেন, তার সরকার ঝরে পড়া রোধ করতে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারা যেন সমাজের কাছে অপাংক্তেয় না হয় সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, নানা সুযোগ-সুবিধা এমনকি খেলাধুলাতেও উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছে। বিশেষ অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জন্য এ পর্যন্ত তারা ২১টি স্বর্ণসহ ৭১টি পদক জয় করে এনেছে। প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশে সরকার একটি বিশেষ একাডেমি করে দিচ্ছে। সমাজের কেউ যেন বাদ না যায় সেজন্য আমরা তাদেরকে বিশেষ ভাতাও প্রদান করছি। এ সময় প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত ১ কোটি ৩০ লাখ শিশুকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং প্রতিমাসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়েদের কাছে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও আমরা এ টাকা পাঠানো বন্ধ করিনি। বৃত্তি-উপবৃত্তি আমরা অব্যাহত রেখেছি, যাতে তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নষ্ট না হয়ে যায়। বিনা পয়সায় আমরা পাঠ্যপুস্তক যেমন দিচ্ছি, তেমনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য দিচ্ছি ব্রেইল বই। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ও ব্রেইল ভার্সান প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে সাংস্কৃতিকচর্চা খেলাধুলার জন্য সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিচ্ছে। আজকের শিশুরা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সেজন্য মানসম্পন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তার সরকার বহুমুখি শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছাক। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলবে, সেটাই আমরা চাই। আজকের শিশুরা সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবে। কিছু সমস্যা আসবে। কিন্তু সেগুলোকে মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।