ঢাকা ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হৃদরোগের পাশাপাশি বাতরোগও সারাবে ঘোড়ানিম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৬:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিম আর ঘোড়ানিমের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। ঘোড়ানিমের স্নিগ্ধ ফুল, পাতা ও চমৎকার ডালপালা অনেকটাই আলাদা নিম গাছ থেকে। অনেকেই ভুল করে এই গাছকে আসল নিম মনে করেন। তবে নাম প্রায় একই হলেও দুই নিমের মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক। প্রকৃত নিম ঘনবদ্ধ পাতা ও অজস্র ডালপালায় বেশ ঝোপালো থাকে। সে তুলনায় ঘোড়ানিম স্বল্পপাতা ও ডালপালায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত। তবে ফুলের ক্ষেত্রে ঘোড়ানিমই রাজসিক। এ গাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো গুচ্ছবদ্ধ হলদেটে ফলগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। তখন খুব সহজেই গাছটি আলাদা করে চেনা যায়।

এ গাছ ওষুধি গুণসম্পন্ন। হৃদরোগ, মাথাব্যথা, কৃমি ও বাতরোগে এ গাছের পাতা, বাকল ও ফল অত্যন্ত কার্যকর। ভারতের পাঞ্জাবে বাত রোগে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে ঘোড়ানিমের বীজ ব্যবহৃত হয়।

এ গাছ থেকে তৈরি নিম তেল ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে অত্যন্ত কার্যকর। ফল ইন্ডিয়ান গ্রে হর্নবিল পাখির প্রিয় খাবার। কাঠ দারুমূল্যযুক্ত। বিশেষত, ক্রীড়াসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার্য।|

প্রচলিত ইংরেজি নাম পার্সিয়ান লাইলাক, হোয়াইট সেডার, চায়নাবেরি ইত্যাদি। স্থানীয় অন্যান্য নামের মধ্যে বকাইন, গোরানিম, কাউয়ানিম, মহানিম, পুমা, পোয়া ইত্যাদি অন্যতম।

দেশের উত্তর জনপদে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অন্যান্য পার্ক-উদ্যানেও সহজলভ্য এই গাছ। বনানী রেলক্রসিং লাগোয়া রেলপথের ধারে একসারি গাছ আছে।

কাঠ উন্নতমানের হওয়ায় বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮৩০ সালের দিকে আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবে উত্তর আমেরিকার ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় পৌঁছায়।

মূলত নিমের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যে আত্মিক যোগ আছে, ঘোড়ানিমের সঙ্গে ঠিক সেভাবে নয়। আমাদের দেশে নিমটাই সহজলভ্য, ঘোড়ানিম মাত্র তিন দশক আগে থেকে লোকালয়ে লাগানো শুরু হয়েছে।

এখানে সাধারণত সুদর্শন পুষ্পবৃক্ষ হিসেবেই চাষ। ফুলের সৌন্দর্য নজরকাড়া এবং অনেকটা উপেক্ষিতও বটে। ফুল ঝরেপড়ার পর ফলের নান্দনিকতাও দারুণ উপভোগ্য।

৮ থেকে ১২ মিটার উঁচু পত্রমোচী গাছ, মাথা ছড়ানো। বাকল ধূসরাভ-বাদামি, কাণ্ডে লম্বা ফাটাফাটা দাগ। যৌপত্র, দুই থেকে তিন পক্ষল, ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রিকা ৬ সেন্টিমিটার লম্বা।

বসন্তে নিষ্পত্র ডালে ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাঁটায় ছোট ছোট নীলচে বেগুনি বা বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে, পাপড়ি পাঁচ থেকে ছয়টি, মাঝখানে পুংকেশরের একটি গাঢ়-বেগুনি নল।

বসন্তের পুষ্পোদ্যানে এই ফুল অনেকটাই ব্যতিক্রম। পরিপক্ক ফল হলুদাভ-বাদামি, ডিম্বাকার, দেড় সেন্টিমিটার লম্বা। বীজ মসৃণ, চার থেকে পাঁচটি। বংশবৃদ্ধি বীজের মাধ্যমে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হৃদরোগের পাশাপাশি বাতরোগও সারাবে ঘোড়ানিম

আপডেট টাইম : ০৩:২৬:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিম আর ঘোড়ানিমের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। ঘোড়ানিমের স্নিগ্ধ ফুল, পাতা ও চমৎকার ডালপালা অনেকটাই আলাদা নিম গাছ থেকে। অনেকেই ভুল করে এই গাছকে আসল নিম মনে করেন। তবে নাম প্রায় একই হলেও দুই নিমের মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক। প্রকৃত নিম ঘনবদ্ধ পাতা ও অজস্র ডালপালায় বেশ ঝোপালো থাকে। সে তুলনায় ঘোড়ানিম স্বল্পপাতা ও ডালপালায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত। তবে ফুলের ক্ষেত্রে ঘোড়ানিমই রাজসিক। এ গাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো গুচ্ছবদ্ধ হলদেটে ফলগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। তখন খুব সহজেই গাছটি আলাদা করে চেনা যায়।

এ গাছ ওষুধি গুণসম্পন্ন। হৃদরোগ, মাথাব্যথা, কৃমি ও বাতরোগে এ গাছের পাতা, বাকল ও ফল অত্যন্ত কার্যকর। ভারতের পাঞ্জাবে বাত রোগে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে ঘোড়ানিমের বীজ ব্যবহৃত হয়।

এ গাছ থেকে তৈরি নিম তেল ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে অত্যন্ত কার্যকর। ফল ইন্ডিয়ান গ্রে হর্নবিল পাখির প্রিয় খাবার। কাঠ দারুমূল্যযুক্ত। বিশেষত, ক্রীড়াসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার্য।|

প্রচলিত ইংরেজি নাম পার্সিয়ান লাইলাক, হোয়াইট সেডার, চায়নাবেরি ইত্যাদি। স্থানীয় অন্যান্য নামের মধ্যে বকাইন, গোরানিম, কাউয়ানিম, মহানিম, পুমা, পোয়া ইত্যাদি অন্যতম।

দেশের উত্তর জনপদে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অন্যান্য পার্ক-উদ্যানেও সহজলভ্য এই গাছ। বনানী রেলক্রসিং লাগোয়া রেলপথের ধারে একসারি গাছ আছে।

কাঠ উন্নতমানের হওয়ায় বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮৩০ সালের দিকে আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবে উত্তর আমেরিকার ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় পৌঁছায়।

মূলত নিমের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যে আত্মিক যোগ আছে, ঘোড়ানিমের সঙ্গে ঠিক সেভাবে নয়। আমাদের দেশে নিমটাই সহজলভ্য, ঘোড়ানিম মাত্র তিন দশক আগে থেকে লোকালয়ে লাগানো শুরু হয়েছে।

এখানে সাধারণত সুদর্শন পুষ্পবৃক্ষ হিসেবেই চাষ। ফুলের সৌন্দর্য নজরকাড়া এবং অনেকটা উপেক্ষিতও বটে। ফুল ঝরেপড়ার পর ফলের নান্দনিকতাও দারুণ উপভোগ্য।

৮ থেকে ১২ মিটার উঁচু পত্রমোচী গাছ, মাথা ছড়ানো। বাকল ধূসরাভ-বাদামি, কাণ্ডে লম্বা ফাটাফাটা দাগ। যৌপত্র, দুই থেকে তিন পক্ষল, ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রিকা ৬ সেন্টিমিটার লম্বা।

বসন্তে নিষ্পত্র ডালে ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাঁটায় ছোট ছোট নীলচে বেগুনি বা বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে, পাপড়ি পাঁচ থেকে ছয়টি, মাঝখানে পুংকেশরের একটি গাঢ়-বেগুনি নল।

বসন্তের পুষ্পোদ্যানে এই ফুল অনেকটাই ব্যতিক্রম। পরিপক্ক ফল হলুদাভ-বাদামি, ডিম্বাকার, দেড় সেন্টিমিটার লম্বা। বীজ মসৃণ, চার থেকে পাঁচটি। বংশবৃদ্ধি বীজের মাধ্যমে।