ঢাকা ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাদেক বাচ্চুকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খল অভিনেতা ও ডাক বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সাদেক বাচ্চু। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। সেই মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিনেতার স্ত্রী শাহনাজ।

সাদেক বাচ্চুর সংসারে স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ের নাম মেহজাবীন। তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছেন। ছোট মেয়ে নওশিন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবচেয়ে ছোট ছেলে সোয়ালেহিন। সে সবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

অভিনেতার তিন সন্তানের কেউই উপার্জনক্ষম নয়। কাজেই তাদের নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ পড়েছেন মাঝদরিয়ায়। সাদেক বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ বলেন, ‘আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের উনি সামলে রেখেছিলেন। তার হুট করে চলে যাওয়ায় আমরা দিশেহারা। এখন কি করব কিছুই ভাবতে পারছি না। অন্য কোনো আয়ের তো উপায় নেই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শাহনাজ। তিনি জানান, ‘ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কিছু টাকা সঞ্চিত ছিল। ২০১৩ সালে সাদেক বাচ্চুর ব্রেনস্ট্রোক হয়। তাকে ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ওই সময় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। ফলে পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে ওনার অভিনয়ের টাকায় আমাদের সংসার চলছিল।’

স্বামী সাদেক বাচ্চু খুবই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন জানিয়ে শাহনাজ বলেন, তিনি পারলে কাউকে সহযোগিতা করতেন। কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন হয়নি। সর্বশেষ ওনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণ করেছি। সে সময় আমার ভাই পাশে দাঁড়িয়েছে। সহযোগিতাও করেছে।’

তিনি বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। আমার বাবাও মারা গেছেন। আমার মায়েরও বয়স হয়েছে। একমাত্র থাকার জায়গা ছাড়া আমাদের কোনো জায়গা নেই। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে সহায়তার আশা করব সেই উপায় নেই। এখন তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কমে গেছে। তাই সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই সময়ে সহায়তা আশা করতে পারি না।’

অভিনেতা ও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রশংসা করে শাহনাজ বলেন, ‘দুঃসময়ে জায়েদ ছেলেটি আমাদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। করোনার সময় কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু সে পাশে থেকে সাদেক বাচ্চুর জানাজা, দাফনসহ সব কাজে সহায়তা করেছে।’

গত ৬ সেপ্টেম্বর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাদেক বাচ্চু। সেখানে তার করোনা টেস্ট করানো হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে কোভিড বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদেক বাচ্চুকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খল অভিনেতা ও ডাক বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সাদেক বাচ্চু। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। সেই মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিনেতার স্ত্রী শাহনাজ।

সাদেক বাচ্চুর সংসারে স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ের নাম মেহজাবীন। তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছেন। ছোট মেয়ে নওশিন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবচেয়ে ছোট ছেলে সোয়ালেহিন। সে সবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

অভিনেতার তিন সন্তানের কেউই উপার্জনক্ষম নয়। কাজেই তাদের নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ পড়েছেন মাঝদরিয়ায়। সাদেক বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ বলেন, ‘আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের উনি সামলে রেখেছিলেন। তার হুট করে চলে যাওয়ায় আমরা দিশেহারা। এখন কি করব কিছুই ভাবতে পারছি না। অন্য কোনো আয়ের তো উপায় নেই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শাহনাজ। তিনি জানান, ‘ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কিছু টাকা সঞ্চিত ছিল। ২০১৩ সালে সাদেক বাচ্চুর ব্রেনস্ট্রোক হয়। তাকে ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ওই সময় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। ফলে পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে ওনার অভিনয়ের টাকায় আমাদের সংসার চলছিল।’

স্বামী সাদেক বাচ্চু খুবই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন জানিয়ে শাহনাজ বলেন, তিনি পারলে কাউকে সহযোগিতা করতেন। কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন হয়নি। সর্বশেষ ওনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণ করেছি। সে সময় আমার ভাই পাশে দাঁড়িয়েছে। সহযোগিতাও করেছে।’

তিনি বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। আমার বাবাও মারা গেছেন। আমার মায়েরও বয়স হয়েছে। একমাত্র থাকার জায়গা ছাড়া আমাদের কোনো জায়গা নেই। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে সহায়তার আশা করব সেই উপায় নেই। এখন তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কমে গেছে। তাই সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই সময়ে সহায়তা আশা করতে পারি না।’

অভিনেতা ও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রশংসা করে শাহনাজ বলেন, ‘দুঃসময়ে জায়েদ ছেলেটি আমাদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। করোনার সময় কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু সে পাশে থেকে সাদেক বাচ্চুর জানাজা, দাফনসহ সব কাজে সহায়তা করেছে।’

গত ৬ সেপ্টেম্বর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাদেক বাচ্চু। সেখানে তার করোনা টেস্ট করানো হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে কোভিড বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান।