ঢাকা ০৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মহান শিক্ষা দিবস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ‘মহান শিক্ষা দিবস’। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সঙ্কোচনমূলক শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন।

১৯৬২ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে দিবসটি পালিত হয়। দিবসের শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির অংশ হিসাবে শিক্ষা অধিকার চত্বরে শিক্ষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন।

স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শরীফ কমিশন নামে খ্যাত এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে গিয়েছিল।

প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থবরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

আইয়ুব সরকার এই প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। শরীফ কমিশনের শিক্ষা সংকোচন নীতি কাঠামোতে শিক্ষাকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। ৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে বলে প্রস্তাব করা হয়।

উচ্চশিক্ষা ধনিক শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য পাস নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা ৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর। এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল।

রিপোর্টের শেষ পর্যায়ে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আইয়ুবের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব দাবির ভিত্তিতে জুলাই-আগস্ট মাস জুড় আন্দোলন চলতে থাকে। এ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

এ দিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হন। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে- এ গুজব শুনে মিছিল দ্রুত নবাবপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্টের সামনে পুলিশ এতে বাধা দেয়। তবে মিছিলকারীরা সংঘাতে না গিয়ে আবদুল গনি রোডে অগ্রসর হয়। তখন পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। এতে তিনজন নিহত হন। ওই দিন সারাদেশে মিছিলে পুলিশ গুলি করে। টঙ্গীতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিকেরও হত্যার খবর পাওয়া যায়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আজ মহান শিক্ষা দিবস

আপডেট টাইম : ০৩:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ‘মহান শিক্ষা দিবস’। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সঙ্কোচনমূলক শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন।

১৯৬২ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে দিবসটি পালিত হয়। দিবসের শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির অংশ হিসাবে শিক্ষা অধিকার চত্বরে শিক্ষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন।

স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শরীফ কমিশন নামে খ্যাত এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে গিয়েছিল।

প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থবরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

আইয়ুব সরকার এই প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। শরীফ কমিশনের শিক্ষা সংকোচন নীতি কাঠামোতে শিক্ষাকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। ৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে বলে প্রস্তাব করা হয়।

উচ্চশিক্ষা ধনিক শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য পাস নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা ৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর। এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল।

রিপোর্টের শেষ পর্যায়ে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আইয়ুবের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব দাবির ভিত্তিতে জুলাই-আগস্ট মাস জুড় আন্দোলন চলতে থাকে। এ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

এ দিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হন। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে- এ গুজব শুনে মিছিল দ্রুত নবাবপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্টের সামনে পুলিশ এতে বাধা দেয়। তবে মিছিলকারীরা সংঘাতে না গিয়ে আবদুল গনি রোডে অগ্রসর হয়। তখন পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। এতে তিনজন নিহত হন। ওই দিন সারাদেশে মিছিলে পুলিশ গুলি করে। টঙ্গীতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিকেরও হত্যার খবর পাওয়া যায়