হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এখন পর্যটকদের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত হাওরের বিশাল জলরাশির বুক চিরে নির্মিত ৩৫ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়ক হয়ে ওঠেছে সৌন্দর্য্যরে এক দুর্নিবার আকর্ষণ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রত্যহ ছুটে আসছেন সৌন্দর্য্য আর ভ্রমণপিপাসুরা। হাজারো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত হাওরের একসময়ের অবহেলিত আর প্রত্যন্ত এই জনপদ।
বাংলাদেশের কোথাও হাওরের মাঝখানে এত দীর্ঘ সড়ক নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর স্বপ্নের সড়কটি দেখতে ছুটে আসছেন। সড়কের পাশে বসে বুকভরে নির্মল বাতাস নিচ্ছেন। সৌন্দর্য্য, বিনোদন আর প্রশান্তির এক অনন্য ঠিকানা হয়ে ওঠেছে হাওরের এই অলওয়েদার সড়ক।
কেবল হাওরের অলওয়েদার সড়কই নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ির পশ্চিমে তিন শতাধিক একর জায়গা নিয়ে মিনি ক্যান্টনমেন্টের প্রস্তাবিত নির্মাণাধীন জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতেও অনেক ভিআইপি প্রতিদিন মিঠামইনে আসছেন।
মিঠামইন বাজারের লঞ্চঘাটে স্পিটবোট, ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর লঞ্চের বহর লেগেই রয়েছে। সেখান থেকে পর্যটকরা পায়ে হেঁটে অলওয়েদার সড়ক ও রাষ্ট্রপতির বাড়ি পরিদর্শন করছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভীড় লেগেই রয়েছে সেখানে।
প্রশাসনিকভাবে রাস্তায় পর্যটকদের মোটরবাইক ও সড়কের পাশে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। তিন থানার পুলিশের নিরাপত্তায় রয়েছে অলওয়েদার সড়ক পর্যটন কেন্দ্র।
এরকম পরিস্থিতিতে ভিআইপিদের প্রটোকল দিতে হিমসিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। সচিব, যুগ্মসচিব থেকে শুরু করে বিচারবিভাগ সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ কেউ না কেউ প্রতি সপ্তাহে আসছেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় দেখা যায়।
এদিকে এখানকার এসব সৌন্দর্য উপভোগ করেতে আসা পর্যটকদের অনেকেই বেশ কিছু অভিযোগ করছেন। খাবারের হোটেলগুলোতে অত্যাধিক হারে খাবারের মূল্য গুণতে হয়। হোটেল মালিকরা ইচ্ছেমত মূল্য নির্ধারণ করে পকেট কাটেন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগও করা হচ্ছে।
তবে মিঠামইন সদর ইউপি চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতি পরিবারের সদস্য অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল পর্যটকদের ঘোরাফেরার জন্য অটোরিকশা ও সিএনজির ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
অনেক পর্যটক জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে হাওরের মধ্যে হোটেল-মোটেল তৈরি করার একান্ত প্রয়োজন। কারণ এখানে রাত্রিযাপন করার মত কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক পর্যটক পরিবার পরিজন নিয়ে এসে থাকার জায়গার অভাবে দিনব্যাপী ঘুরে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান।
সড়কের দু’পাশে সাতার কাটার জন্য বিশাল জায়গা রয়েছে। এখানে হোটেল-মোটেল হলে মানুষ আর সমুদ্রপাড়ে যাবে না।
এই অলওয়েদার সড়ক হাওরের সৌন্দর্য্যকে মোহনীয় করে তুলেছে। পাশেই অত্যাধুনিক মেরিন একাডেমি নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্টের পাশে ঘোড়াউত্রা নদী পুরাতন নদীতে হবে ক্যান্টনমেন্ট লেক।
মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান কিশোরগঞ্জ নিউজকে জানান, অলওয়েদার সড়ক হাওরের সৌন্দর্য্যকে বৃদ্ধি করেছে। প্রতিদিন কোন না কোন ভিআইপি আসছেন মহামান্যের বাড়ি ও অলওয়েদার সড়ক দেখতে। মাঝে মাঝে পুলিশের প্রটোকল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ইউএনও প্রভাংশু সোম মহান জানান, সরকারি দুটি ডাকবাংলো ছাড়া রাত্রিযাপন করার মত ভাল কোন হোটেল নেই। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে প্রচণ্ড ভীড় লক্ষ্য করা যায়। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই তিনি নিজ বাড়ি কামালপুর রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করে প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামে সামাজিক দূরত্ব মেনে এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সাথে কথা হলে তিনি কিশোরগঞ্জ নিউজকে বলেন, রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের সড়ক রক্ষা করার দায়িত্ব এ হাওর অঞ্চলের মানুষের। ইতোমধ্যে রাস্তার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ সড়কটি হওয়ার ফলে তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগসহ পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল নির্মাণ করতে আগ্রহী হয়েছে এ এলাকার কিছু ব্যবসায়ী। মানুষ এখন আর কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দর যেতে চায় না। হানিমুনের জন্য এটাই উপযুক্ত স্থান বলে আমি মনে করি।
পর্যায়ক্রমে পর্যটকদের জন্য আগামীতে আরো সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে জানিয়ে সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক হাওর তথা দেশের এ সম্পদকে রক্ষা করার জন্য সকলে প্রতি আহ্বান জানান।