ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশেষ কিছু সময়ে সূর্যের রং লাল দেখানোর রহস্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অগাস্ট ২০২০
  • ২৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অন্ধকারকে দূরে ঠেলে পৃথিবীকে আলোকিত করে সূর্য। সূর্য ছাড়া পৃথিবী তার সৌন্দর্য পুরোপুরি প্রস্ফুটিত করতে সক্ষম নয়। সূর্যের নিজেরও রয়েছে অতুলনীয় সৌন্দর্য। নিশ্চয়ই জানেন, সূর্যের রং কমলা। তবে খেয়াল করে দেখেছেন কি, কোনো কোনো সময় সূর্যের রং লালও দেখায়।

আবহমান কাল ধরে এটাই সত্যি। সূর্য যখন ওঠে কিংবা অস্ত যায়, তখন কখনো কখনো তার রং লাল হয়। ওই লাল সূর্যের আভায় আকাশেও তখন অপূর্ব রক্তিম বা কমলা রং ধরে, কখনো বা তারমধ্যে বেগুনি আভা দেখা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কেন সময়ে সময়ে সূর্য এই লাল রং ধারণ করে। এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসম্পর্কে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময়টাতে নানা রংয়ের বিচ্ছুরণ আকাশকে অপূর্ব দৃশ্যময় করে তুলেছে। আকাশে এখন লাল সূর্য আর রংয়ের খেলা দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

আকাশে এমন অপরূপ দৃশ্যের একটা ব্যাখ্যা হল র‌্যালে স্ক্যাটারিং- পদার্থবিদ র‌্যালের নীতি অনুযায়ী বিচ্ছুরিত আলো ভেঙে ছড়িয়ে পড়া।

গ্রেনিচের রয়াল মিউজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্লুমার বলেন, এটা হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে সূর্যের আলো যখন প্রবাহিত হয়, তখন সেটা যেভাবে আমাদের চোখে ধরা দেয়।

বিষয়টা বুঝতে গেলে প্রথমে আলোর উপাদানটা জানতে হবে। আমরা চোখে যে আলো দেখি তাতে আমরা জানি সাতটা রং আছে- লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, গাঢ় নীল ও বেগুনি।

ব্লুমার বলেন, সূর্যের রঙের ক্ষেত্রে এই হেরফের ঘটে যখন সূর্যালোক ভেঙে ছড়িয়ে যায়। যখন আলোর কণাগুলো ভাঙে সেগুলো সমানভাবে ভাঙে না, ভাঙে এলোমেলোভাবে। আলোর মধ্যে প্রত্যেকটা রঙের ওয়েভলেংথ বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা, আর সেকারণেই তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী তাদের রঙের তীব্রতায় কম-বেশি হয়।

যেমন বেগুনি রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, আর লালের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। ফলে কোন রং কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তা নির্ধারণ করবে আমরা কীভাবে সেই রংগুলোর বিচ্ছুরণ প্রত্যক্ষ করব।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

এরপর আমাদের আবহাওয়া মণ্ডলের বিষয়টা বুঝতে হবে। যে আবহাওয়ামণ্ডল বা বায়ুমণ্ডলে রয়েছে নানাধরনের গ্যাসের স্তর, যার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেনও, যেটাতে আমরা শ্বাস নেই এবং যেটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।

সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তা বেঁকেচুরে এবং ভেঙে যায়, যেন একটা প্রিজম বা ত্রিভুজাকৃতি স্ফটিকের মধ্যে দিয়ে সেটা যাচ্ছে। এর কারণ বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাস রয়েছে, তার প্রতিটার ঘনত্ব আলাদা। এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে অন্যান্য যেসব কণা রয়েছে, সেগুলোর কারণে ভেঙে যাওয়া আলোর কণাগুলোর প্রতিফলন তৈরি হয়।

সূর্য যখন অস্ত যায় বা ওঠে, তখন সূর্য রশ্মি আবহাওয়া মণ্ডলের সবচেয়ে উপরের স্তরে একটা বিশেষ কোণ থেকে ধাক্কা মারে এবং সেখান থেকেই শুরু হয় সূর্যের আলোর “ম্যাজিক”। সূর্যরশ্মি এরপর যখন উপরের স্তর ভেদ করে ভেতরে ঢোকে, তখন সেই স্তর নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে শুষে নেয় না, বরং সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে প্রতিফলিত হয়।

ব্লুমার বলেন, সূর্য যখন দিগন্তের নিচের দিকে অবস্থান করে, তখন নীল আর সবুজ রং ভেঙে যায় এবং আমরা কমলা ও লাল রং-এর আভা দেখতে পাই।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

এর কারণ আলোর যে রংগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট (যেমন বেগুনি এবং নীল) সেগুলো বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো যেমন কমলা ও লালের চেয়ে বেশি ভেঙে যায়। এরফলে আকাশে নানা রঙের আলোর অসাধারণ বিচ্ছুরণ আমরা দেখি।

তবে আকাশ এত লাল দেখায় কেন?

হ্যাঁ, দেখে মনে হতে পারে সূর্যের কিছু পরিবর্তনে এমনটা ঘটছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এটা শুধু দেখার রকমফের। পৃথিবীর কোথায় আপনি আছেন, তার ওপর নির্ভর করবে সূর্যের কী রং আপনি কীভাবে আকাশে দেখবেন। যেখানে আপনি আছেন সেখানে বায়ুস্তরের অবস্থা অনুযায়ী সূর্যের আলো আকাশকে আলোকিত করবে।

ব্লুমার বলেন- ধূলোর মেঘ, ধোঁয়া এগুলোও আকাশের আলোর বিচ্ছুরণের ওপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

আপনি কোথায় আছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় না বাংলাদেশ বা ভারতে, নাকি চীনে বা অস্ট্রেলিয়ায় কিংবা আফ্রিকার কোথাও- অথবা লাল বালুর কাছাকাছি এমন কোনোখানে, তার ওপর নির্ভর করবে আলোর প্রতিফলন ঘটায় বায়ুমণ্ডলের যেসব কণা সেগুলো আপনার বায়ুমণ্ডলে কী পরিমাণে এবং কতটা সক্রিয় অবস্থায় আছে, আর পাশাপাশি আপনি যেখানে আছেন সেখানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কী। আর সেটার ওপরই নির্ভর করবে আকাশ আপনি কীভাবে দেখছেন।

আপনি এমনকি যদি মরুভূমি থেকে অনেক দূরেও থাকেন, তাহলেও আকাশের এই নাটকীয় রং আপনি দেখতে পাবেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায়ই সাহারা মরুভূমির বালুকণা আবহাওয়া মণ্ডলের উপরদিকের স্তরে উঠে সেখানে অবস্থান করে। সেখান থেকে ওই বালুকণার স্তর ইউরোপ এমনকি সাইবেরিয়া বা আমেরিকা পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে!

সূত্র: বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিশেষ কিছু সময়ে সূর্যের রং লাল দেখানোর রহস্য

আপডেট টাইম : ০৬:৩০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অন্ধকারকে দূরে ঠেলে পৃথিবীকে আলোকিত করে সূর্য। সূর্য ছাড়া পৃথিবী তার সৌন্দর্য পুরোপুরি প্রস্ফুটিত করতে সক্ষম নয়। সূর্যের নিজেরও রয়েছে অতুলনীয় সৌন্দর্য। নিশ্চয়ই জানেন, সূর্যের রং কমলা। তবে খেয়াল করে দেখেছেন কি, কোনো কোনো সময় সূর্যের রং লালও দেখায়।

আবহমান কাল ধরে এটাই সত্যি। সূর্য যখন ওঠে কিংবা অস্ত যায়, তখন কখনো কখনো তার রং লাল হয়। ওই লাল সূর্যের আভায় আকাশেও তখন অপূর্ব রক্তিম বা কমলা রং ধরে, কখনো বা তারমধ্যে বেগুনি আভা দেখা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কেন সময়ে সময়ে সূর্য এই লাল রং ধারণ করে। এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসম্পর্কে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময়টাতে নানা রংয়ের বিচ্ছুরণ আকাশকে অপূর্ব দৃশ্যময় করে তুলেছে। আকাশে এখন লাল সূর্য আর রংয়ের খেলা দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

আকাশে এমন অপরূপ দৃশ্যের একটা ব্যাখ্যা হল র‌্যালে স্ক্যাটারিং- পদার্থবিদ র‌্যালের নীতি অনুযায়ী বিচ্ছুরিত আলো ভেঙে ছড়িয়ে পড়া।

গ্রেনিচের রয়াল মিউজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্লুমার বলেন, এটা হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে সূর্যের আলো যখন প্রবাহিত হয়, তখন সেটা যেভাবে আমাদের চোখে ধরা দেয়।

বিষয়টা বুঝতে গেলে প্রথমে আলোর উপাদানটা জানতে হবে। আমরা চোখে যে আলো দেখি তাতে আমরা জানি সাতটা রং আছে- লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, গাঢ় নীল ও বেগুনি।

ব্লুমার বলেন, সূর্যের রঙের ক্ষেত্রে এই হেরফের ঘটে যখন সূর্যালোক ভেঙে ছড়িয়ে যায়। যখন আলোর কণাগুলো ভাঙে সেগুলো সমানভাবে ভাঙে না, ভাঙে এলোমেলোভাবে। আলোর মধ্যে প্রত্যেকটা রঙের ওয়েভলেংথ বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা, আর সেকারণেই তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী তাদের রঙের তীব্রতায় কম-বেশি হয়।

যেমন বেগুনি রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, আর লালের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। ফলে কোন রং কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তা নির্ধারণ করবে আমরা কীভাবে সেই রংগুলোর বিচ্ছুরণ প্রত্যক্ষ করব।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

এরপর আমাদের আবহাওয়া মণ্ডলের বিষয়টা বুঝতে হবে। যে আবহাওয়ামণ্ডল বা বায়ুমণ্ডলে রয়েছে নানাধরনের গ্যাসের স্তর, যার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেনও, যেটাতে আমরা শ্বাস নেই এবং যেটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।

সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তা বেঁকেচুরে এবং ভেঙে যায়, যেন একটা প্রিজম বা ত্রিভুজাকৃতি স্ফটিকের মধ্যে দিয়ে সেটা যাচ্ছে। এর কারণ বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাস রয়েছে, তার প্রতিটার ঘনত্ব আলাদা। এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে অন্যান্য যেসব কণা রয়েছে, সেগুলোর কারণে ভেঙে যাওয়া আলোর কণাগুলোর প্রতিফলন তৈরি হয়।

সূর্য যখন অস্ত যায় বা ওঠে, তখন সূর্য রশ্মি আবহাওয়া মণ্ডলের সবচেয়ে উপরের স্তরে একটা বিশেষ কোণ থেকে ধাক্কা মারে এবং সেখান থেকেই শুরু হয় সূর্যের আলোর “ম্যাজিক”। সূর্যরশ্মি এরপর যখন উপরের স্তর ভেদ করে ভেতরে ঢোকে, তখন সেই স্তর নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে শুষে নেয় না, বরং সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে প্রতিফলিত হয়।

ব্লুমার বলেন, সূর্য যখন দিগন্তের নিচের দিকে অবস্থান করে, তখন নীল আর সবুজ রং ভেঙে যায় এবং আমরা কমলা ও লাল রং-এর আভা দেখতে পাই।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

এর কারণ আলোর যে রংগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট (যেমন বেগুনি এবং নীল) সেগুলো বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো যেমন কমলা ও লালের চেয়ে বেশি ভেঙে যায়। এরফলে আকাশে নানা রঙের আলোর অসাধারণ বিচ্ছুরণ আমরা দেখি।

তবে আকাশ এত লাল দেখায় কেন?

হ্যাঁ, দেখে মনে হতে পারে সূর্যের কিছু পরিবর্তনে এমনটা ঘটছে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এটা শুধু দেখার রকমফের। পৃথিবীর কোথায় আপনি আছেন, তার ওপর নির্ভর করবে সূর্যের কী রং আপনি কীভাবে আকাশে দেখবেন। যেখানে আপনি আছেন সেখানে বায়ুস্তরের অবস্থা অনুযায়ী সূর্যের আলো আকাশকে আলোকিত করবে।

ব্লুমার বলেন- ধূলোর মেঘ, ধোঁয়া এগুলোও আকাশের আলোর বিচ্ছুরণের ওপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে।

সূর্যের লাল রং

সূর্যের লাল রং

আপনি কোথায় আছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় না বাংলাদেশ বা ভারতে, নাকি চীনে বা অস্ট্রেলিয়ায় কিংবা আফ্রিকার কোথাও- অথবা লাল বালুর কাছাকাছি এমন কোনোখানে, তার ওপর নির্ভর করবে আলোর প্রতিফলন ঘটায় বায়ুমণ্ডলের যেসব কণা সেগুলো আপনার বায়ুমণ্ডলে কী পরিমাণে এবং কতটা সক্রিয় অবস্থায় আছে, আর পাশাপাশি আপনি যেখানে আছেন সেখানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কী। আর সেটার ওপরই নির্ভর করবে আকাশ আপনি কীভাবে দেখছেন।

আপনি এমনকি যদি মরুভূমি থেকে অনেক দূরেও থাকেন, তাহলেও আকাশের এই নাটকীয় রং আপনি দেখতে পাবেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায়ই সাহারা মরুভূমির বালুকণা আবহাওয়া মণ্ডলের উপরদিকের স্তরে উঠে সেখানে অবস্থান করে। সেখান থেকে ওই বালুকণার স্তর ইউরোপ এমনকি সাইবেরিয়া বা আমেরিকা পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে!

সূত্র: বিবিসি