ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমৃদ্ধ হাওরের বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অগাস্ট ২০২০
  • ১৯১ বার
ড. নিয়াজ পাশাঃ সাগর হতে সায়র আর সায়র হতে হাওর শব্দটি উৎপত্তি বলে ভাষা বিজ্ঞানীদের ধারণা। আমার ধারণা-‘হা’=হাওয়া, বাতাস; আর ‘ওর’ = কাদা জলের সংমিশ্রণে এক ধরনের উর্বর পলিমাটি। হাওরের জলীয় আবহাওয়া, উর্বর পলি মাটি, ভেজা বাতাস, স্যাত স্যাতে পরিবেশ, হয়ত এ নামকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। হাওরাঞ্চল একটি চ্যাপ্টা বাটির মতো বেসিন বিশেষ। সমুদ্র সমতল হতে মাত্র ১০-১৫ ফুট উচুঁ; কোন কোন হাওরের গভীরতা সমুদ্র সমতলের নীচেও হয়।

ভারত হতে ৫৪টি নদী দিয়ে সারা দেশে, তার মধ্যে ২৪টি নদী নালা দিয়ে হাওরের মোট পানির ৬৭% পানি হাওরে প্রবেশ করে। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতি বছর হাওর বেসিন হতে গড়ে ১৫৯,০৮৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি সমুদ্রে পতিত হয়। কিন্ত একটি মাত্র নির্গমন পথ, ভৈরবের কাছে-মেঘনা নদীর উপর নির্মিত রেল এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর নীচ দিয়ে সরু পথে উজান হতে আগত এ বিশাল জলরাশি একসাথে ভাটিতে সরে যেতে না পেরে হাওরের নীচু ভূমিতে জমা হয়। তখন এটি বিশাল সমুদ্রের রুপ ধারণ করে। যত দিন উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকে, তত দিন পানিও জমা থাকে। বৃষ্টি কমার সাথে সাথে পানির পরিমাণও কমে আসে। প্রায় ৬-৭ মাস এখানে পানি থাকে। চলাচলে ‘বর্ষায় নাও, শুষ্কে দু’পাও’ এক মাত্র ভরসা। প্রায় সাড়ে আট হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহৎ মিঠা পানির একক ‘ওয়াটার বডি’। এটিও এক ধরনের সাময়িক জলাবদ্ধতা, যাতে মৃদু স্রোত থাকে। আর বর্ষা শেষে পানি সরে গিয়ে কিছু পানি হাওরের জলাশয়-বিল, ঝিল, নদী, নালা, খাল, ডোবার তলানী হিসেবে জমা হয়। সেই সাথে হাওরের মুক্ত জলাশয় চড়ে-বেড়ে উঠা সব মাছ ঐ সব বিল, ঝিল, নদী, পুকুরে আশ্রয় নেয়। ফলে এক একটি বিল মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হয়। অভয়াশ্রম সৃষ্টি ‘পাইল’ দেয়া চালু এবং কোন অবস্থায় শুকানো যাবে না ।
দেশের উত্তর-পূর্বাংশে ৭টি জেলার ৪৭টি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। সুনামগঞ্জে (৯৫), সিলেট (১০৫), হবিগঞ্জ (১৪), মৌল্ভীবাজার (৩), নেত্রকোণা (৫২), কিশোরগঞ্জ (৯৭) এবং ব্রাম্মণবাড়িয়ায় (৭টি) করে মোট ৩৭৩ টি হাওর আছে। বিভিন্ন কারণে হাওর নিজেই বিপিন্ন। আগের ৪১২ টি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ টি। হাওরাঞ্চলে প্রায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন লোক, যা দেশের মোট লোকের ১২%, বসবাস করে। ৩৭৩টি হাওরে ৩,০০০ টিরও অধিক জলমহাল আছে, এগুলোতে সারা বছর পানি থাকে, যার আয়তন ৮, ৬৯, ০০০ হেক্টর যা হাওরের মোট আয়তনের ৪৩%। তাছাড়া প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক জলাশয় আছে, যেগুলো শুষ্ক সময়ে শুকিয়ে যায়। প্রত্যেকটি জলাশয়ের সাথে নদী বা খালের সংযোগ ছিল। এ খাল, নদীগুলো ভরাট আর জলাশয় গুলো মুজে ‘মরা গাঙ্গে’ রুপান্তর হয়েছে। সাথে অযাযিত সম্পদ আহরণের হরি লুটপাটে শূন্যে পরিণত হয়েছে প্রকৃতির ‘রতœ ভান্ডার’। মৎস্য আইনের বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে জলাশয় লিজ দেয়া হয় তিন ও ছয় বছর মেয়াদি সময়ের জন্য। তদারকির অভাবে প্রায়শ আইন ভেঙ্গে মাছ ধরা হয়। অনেক সময় প্রশাসন, ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাবও জলমহাল ব্যবস্থাপণায় বিঘœ ঘটায়। এ হতে বিভিন্ন কায়দায় শুধু সম্পদ চুষে নেয়া হয়, বিনিয়োগ বা উন্নয়ন কার্যক্রম তেমন হয় না।

হাওর হচ্ছে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর; জলে সমতলে আর অন্তরাক্ষে প্রাণী বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, পরিপূর্ণ। ষড় ঋতুর লীলা ক্ষেত্র। একত্রে, একসাথে, ঋতুর-রুপ বৈচিত্র্য স্পষ্টভাবে আর কোথাও পাবেন না। হাওরাঞ্চল হতে বছরে প্রায় ৪.৩২ লাখ টন মাছ আহরণ করা হয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় হতে আহরিত মাছের ২০%। হাওর হতে ধরা মোট মাছের ৭৩.৭ % আসে জলমহাল/ফিশারিজ হতে। চাষাধীন পুকুর হতে ০.১১৪ মিলিয়ন টন যা, হাওরে উৎপাদিত মাছের মাত্র ২.৬৪%। শামুক, ঝিনুকে পাওয়া যেত বিভিন্ন রঙের এবং রকমের মুক্তা। হাওরাঞ্চলে দেশের মোট গবাদি পশুর ২২%, ২৪% হাঁস, ১৪৩ প্রজাতির দেশী মাছ, ১২ বীড়ঃরপ মাছ পাওয়া যায়, এর মধ্যে ৫৪ টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। ‘গোলা ভরা ধান’ আছে সত্য কিন্ত গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ হয়ত আর তেমনভাবে পাবেন না। অষ্টগ্রামের বিখ্যাত ‘পনির’ এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। মিঠা পানির কয়েক প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়।

মোট ২৫৭ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২৯ দেশীয় এবং ১২৮ প্রজাতির বিদেশী পাখি; ২৯ প্রজাতির স্তন্য প্রাণী; ৯ উভয়চর প্রাণী এবং ৪০ প্রজাতির সরিসৃপ আছে। নদী/জলাশয় কেন্দ্রিক পাখি, মাছ /শিকারি পাখি এবং ২,৯৬,০০০ হেক্টর বনভূমি আছে। আকন্ঠ জলে নিমগ্ন হিজল, তমাল, করচ, বাঁশ ঝাড়ে, নল খাগড়া বনে পাখি এবং মাছের আশ্রয়স্থল ছিল। লাকড়ির জন্য এগুলো কেটে সাফ, নিড়ানী দিয়ে মাটির আবরণ- দুর্বা ঘাষ ‘ছিল্লা’ এবং পানিতে ডুব দিয়ে জলজ উদ্ভিদ ‘তুইল্লা’ শেষ করে দিয়েছে। ৪৬০ প্রজাতির গাছ মিঠা পানিতে জন্মাতে পারে। হাওরের পানিতে আর্থিকভাবে মূল্যবান, ফলদ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। জিডিপি’ তে হাওরের অবদান ৬-৮%। এ যেন একটা ‘ দুধালা গাই ’। শুধু বিলিয়ে আনন্দ পায়।

হাওরবাসি মূলত কৃষিজীবী (৫৩.৬৭%), সারা বছর কোন কাজ করে না এমন লোকের পরিমাণ (২৮.৫%), ব্যবসায়ী (১২.৫২), অকৃষিজীবী (১২.১৩%), শ্রমজীবি (৬.৪১%), চাকুরী (৫.৬৫%), বিদেশী প্রেরিত টাকার উপর নির্ভরশীল (৩.৪১%), সার্বক্ষণিক মৎস্যজীবী (২.৫৯%), পরিবহনে (২.৩৯%) এবং সবচেয়ে কম ১.৩৩% মানুষ শিল্প কারখানায় কাজ করে। হাওরাঞ্চলে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর এবং বছরে ৫.২৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়। আগাম বন্যায় বছরে ক্ষতি ০.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর জমির ফসল, যার আর্থিক মূল্য ৩.৪৮ মিলিয়ন টাকা। এ ক্ষতি জাতীয় কৃষির প্রায় ৩%। হাওরে বছরে কৃষি জমি কমছে ০.৩৩%, জাতীয় ০.৭৪%। নদীগুলো খনন করে দেন, অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এ মাটি দিয়ে সমন্বিত গ্রাম সৃজন করা যেতে পারে। নতুন গ্রাম সৃজন ব্যয়বহুল, রক্ষা করা আরো কষ্টকর। হাওরাঞ্চলে মোট ১৫,৩৭৪টি গ্রামে ৩,২, ৪৩৯০ পরিবার রয়েছে, তাদের বসত ভিটার আয়তন ৩,০৩,১২০ হেক্টর, যা হাওরের মোট আয়তনের ১২% । উচু এসব গ্রাম তৈরিতে চারি পাশে খননকৃত ১০-১৫ লক্ষ পুকুর, ডোবা বা গাতা (গর্ত) আছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে এগুলো খনন করে মাছ, মুক্তা চাষ, সম্পূরক সেচ, গৃহস্থালী কাজে লাগানো সম্ভব। হাওরে ৩% লোক ভূমিহীন (জাতীয় ১৪%), কিন্ত ৮১% অকৃষিজীবীর কোন কৃষি জমি নাই। হাওর এলাকায় ৩৪% পরিবার প্রান্তিক কৃষক, ৫% পরিবার জাতীয় লেভেলের নীচে। ৫১% পরিবার ছোট পরিবার কৃষক (জাতীয় ৪৯.৫%) এবং ২৮% লোক অতি দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে ।

হাওরে পেশা বৈচিত্র্য যেমন আছে, তেমনি রয়েছে মানব বৈচিত্র্য । কামার, কুমার, চামার, মুচি, ধোপা, নাপিত, ঘোষ, জেলে, মাইমল, কৈবর্ত, জলদাস, নাপিত, চাষী, ব্যবসায়ী, মিস্ত্রী, মাঝি, মৎস্যজীবী, স্বর্ণকার, গোয়ালা, ছয়াল, আড়ৎদার, বেপারি, ধানের দালাল, কবিরাজ, চোর স¤প্রদায়ও আছে। আছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠি। আউল, বাউল, সুফি, সাধক, কবি, লেখক, শিল্পী। নোকা বাইচ, ষাড়ের লড়াই, ঘোড় দৌড়, যাত্রা, ঘাটু গান, গীত, কিচ্ছার আসর, বাহাস, মেলা, বান্নি। লোক সংস্কৃতির তীর্থ ভূমি হাওর। সমৃদ্ধ ছিল জনবলে, ধনে, ধানে, মাছে, দুধে, সম্পদে। এ গুলোর আস্তিত্ব হুমকির মুখে ।

হাওরাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ। এখানে আছে গ্যাস, সাদা মাটি, চুনা পাথর, নুড়ি পাথর, বালি, পাথর, ক্লে, গøাস বালি। তাছাড়া কয়লা, পিট কয়লা, ক্রুয়েড অয়েল ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যায়। দেশে উৎপাদিত মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৯০% আহরিত হয় হাওরাঞ্চল হতে। এখানে ছোট ছোট কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প, শীতল পাটি, বাঁশ, মৃত্তিকা শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, শুটকি, ভ্যালু এডেড পণ্য, গ্রামীণ ব্যবহার্য দ্রবাদি, উৎপাদিত হতো। ছিল ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, লোহা ভিত্তিক নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী, আসবাবপত্র তৈরিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কারখানা। সৌর বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি, গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা, ইপিজেড, আইটি পার্ক এবং বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন এখন সময়ের দাবি, উপেক্ষা করা হবে আত্মঘাতি। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা সংগ্রামী, সাহসী, ভাটির বীর পুরুষরা প্রকৃতি বান্ধব। সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ, পুজি আর প্রযুক্তি প্রদান করুন, পথের বাঁধা সরিয়ে ফেলুন, মানুষ কে এগোতে দিন। নিজেরাই নিজেদের পথ খুজে নিবে, পথ তৈরি করে নিবে।

হাওরের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং বড় আপদের নাম-‘পানি’। অতিরিক্ত এবং অতি কম পানি, দু’ অবস্থাই হাওরবাসির জীবন কে অতিষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে বাধ্য করে। পানিকে কেন্দ্র করে হাওরবাসির সুখ, দুঃখ, জীবন, জীবিকা অনেকটাই নির্ভরশীল। কর্মহীনতায় এবং ফি বছর ফসল হানিতে, বর্ষায় হাওরের মানুষ ঘরে ‘খিল’ দিয়ে দেশান্তরিত হয়। আবার এ পানিকে ব্যবহার করে হাওরবাসির জীবন ধারার আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সম্পদ ধংসের মূল কারণ আনাড়ি এবং হাওর সম্পর্কে অজ্ঞ লোক দ্বারা অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম । ‘ভুরা ও আভুরা সড়ক’ নির্মাণেও সতর্ক হতে হবে। সুদিনে (শুষ্ক মৌসুমে) বিল ঝিলের তলানীতে জমে থাকা শেষ পানিটুকুও শুকিয়ে ফেললে হাওরবাসি মানুষসহ সকল প্রাণির জীবন যাত্রা, বেঁচে থাকা, জীব বৈচিত্র্য, জীবন ও খাদ্য চক্র ভেঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে। এ পানিকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা বিভিন্ন প্রকার মাছ, জলজ প্রাণী, পশু-পাখি, জলজ গাছ/উদ্ভিদ, কীট পতঙ্গ, পোকা মাকড়, পরিবেশ প্রতিবেশ হুমকি ও ধবংসের উপক্রম হয়েছে। হরিলুটে বিনষ্ট হচ্ছে তাদের আবাস, আহার ও প্রজনন স্থল। হাওরের প্রাণ-পানি। আর পানি ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যায় না। বিল শুকিয়ে, কাদা খুড়েঁ ধরে মাছের বংশ নির্মূল করা হচ্ছে।

মা’ মাছসহ প্রজনন সক্ষম সকল মাছ ধরায় মাছের পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে না। একটি জলাশয়/ বিলটিকে কেন্দ্র করেই হয়ত হাওরে একটি গ্রাম-বসতি গড়ে উঠেছে এবং ঐ বিলটিই শুকনা সময়ে ঐ এলাকার একমাত্র জলের উৎস। শুকানোর ফলে এ বিলের পানি ব্যবহার বা মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহকারীদের জীবনে দুর্ভোগ ভোগ করতে হয়। পানির অভাবে মানুষ জনের, মাছ পশু-পাখির রোগ বালাই বৃদ্ধি পায়। জীবন পানির অভাবে চরম বিড়ম্বনায় পরতে হয়। পানির দেশে পানির জন্য চরম হাহাকার আহাজারি বড়ই বেমানান। পানির অভাবে মানুষ, পাখি, মাছ, প্রাণী দেশান্তরী হয়। পরিবেশের বিপর্যয়, বিবর্তন, অযাযিত অপরিকল্পিতভাবে আহরণ, মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত প্রায় এ সব সম্পদ, পরিবেশ এবং ঐতিহ্যকে পুনঃজীবিতের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে কর্মোদ্যম, প্রাণ চাঞ্চল্য, উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে, পজিটিভ পরিবর্তন ঘটবে জীবনে, তৈরি হবে সমৃদ্ধ হাওরাঞ্চল, সোনার বাংলাদেশ ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সমৃদ্ধ হাওরের বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

আপডেট টাইম : ০১:১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অগাস্ট ২০২০
ড. নিয়াজ পাশাঃ সাগর হতে সায়র আর সায়র হতে হাওর শব্দটি উৎপত্তি বলে ভাষা বিজ্ঞানীদের ধারণা। আমার ধারণা-‘হা’=হাওয়া, বাতাস; আর ‘ওর’ = কাদা জলের সংমিশ্রণে এক ধরনের উর্বর পলিমাটি। হাওরের জলীয় আবহাওয়া, উর্বর পলি মাটি, ভেজা বাতাস, স্যাত স্যাতে পরিবেশ, হয়ত এ নামকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। হাওরাঞ্চল একটি চ্যাপ্টা বাটির মতো বেসিন বিশেষ। সমুদ্র সমতল হতে মাত্র ১০-১৫ ফুট উচুঁ; কোন কোন হাওরের গভীরতা সমুদ্র সমতলের নীচেও হয়।

ভারত হতে ৫৪টি নদী দিয়ে সারা দেশে, তার মধ্যে ২৪টি নদী নালা দিয়ে হাওরের মোট পানির ৬৭% পানি হাওরে প্রবেশ করে। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতি বছর হাওর বেসিন হতে গড়ে ১৫৯,০৮৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি সমুদ্রে পতিত হয়। কিন্ত একটি মাত্র নির্গমন পথ, ভৈরবের কাছে-মেঘনা নদীর উপর নির্মিত রেল এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর নীচ দিয়ে সরু পথে উজান হতে আগত এ বিশাল জলরাশি একসাথে ভাটিতে সরে যেতে না পেরে হাওরের নীচু ভূমিতে জমা হয়। তখন এটি বিশাল সমুদ্রের রুপ ধারণ করে। যত দিন উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকে, তত দিন পানিও জমা থাকে। বৃষ্টি কমার সাথে সাথে পানির পরিমাণও কমে আসে। প্রায় ৬-৭ মাস এখানে পানি থাকে। চলাচলে ‘বর্ষায় নাও, শুষ্কে দু’পাও’ এক মাত্র ভরসা। প্রায় সাড়ে আট হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহৎ মিঠা পানির একক ‘ওয়াটার বডি’। এটিও এক ধরনের সাময়িক জলাবদ্ধতা, যাতে মৃদু স্রোত থাকে। আর বর্ষা শেষে পানি সরে গিয়ে কিছু পানি হাওরের জলাশয়-বিল, ঝিল, নদী, নালা, খাল, ডোবার তলানী হিসেবে জমা হয়। সেই সাথে হাওরের মুক্ত জলাশয় চড়ে-বেড়ে উঠা সব মাছ ঐ সব বিল, ঝিল, নদী, পুকুরে আশ্রয় নেয়। ফলে এক একটি বিল মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হয়। অভয়াশ্রম সৃষ্টি ‘পাইল’ দেয়া চালু এবং কোন অবস্থায় শুকানো যাবে না ।
দেশের উত্তর-পূর্বাংশে ৭টি জেলার ৪৭টি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। সুনামগঞ্জে (৯৫), সিলেট (১০৫), হবিগঞ্জ (১৪), মৌল্ভীবাজার (৩), নেত্রকোণা (৫২), কিশোরগঞ্জ (৯৭) এবং ব্রাম্মণবাড়িয়ায় (৭টি) করে মোট ৩৭৩ টি হাওর আছে। বিভিন্ন কারণে হাওর নিজেই বিপিন্ন। আগের ৪১২ টি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ টি। হাওরাঞ্চলে প্রায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন লোক, যা দেশের মোট লোকের ১২%, বসবাস করে। ৩৭৩টি হাওরে ৩,০০০ টিরও অধিক জলমহাল আছে, এগুলোতে সারা বছর পানি থাকে, যার আয়তন ৮, ৬৯, ০০০ হেক্টর যা হাওরের মোট আয়তনের ৪৩%। তাছাড়া প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক জলাশয় আছে, যেগুলো শুষ্ক সময়ে শুকিয়ে যায়। প্রত্যেকটি জলাশয়ের সাথে নদী বা খালের সংযোগ ছিল। এ খাল, নদীগুলো ভরাট আর জলাশয় গুলো মুজে ‘মরা গাঙ্গে’ রুপান্তর হয়েছে। সাথে অযাযিত সম্পদ আহরণের হরি লুটপাটে শূন্যে পরিণত হয়েছে প্রকৃতির ‘রতœ ভান্ডার’। মৎস্য আইনের বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে জলাশয় লিজ দেয়া হয় তিন ও ছয় বছর মেয়াদি সময়ের জন্য। তদারকির অভাবে প্রায়শ আইন ভেঙ্গে মাছ ধরা হয়। অনেক সময় প্রশাসন, ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাবও জলমহাল ব্যবস্থাপণায় বিঘœ ঘটায়। এ হতে বিভিন্ন কায়দায় শুধু সম্পদ চুষে নেয়া হয়, বিনিয়োগ বা উন্নয়ন কার্যক্রম তেমন হয় না।

হাওর হচ্ছে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর; জলে সমতলে আর অন্তরাক্ষে প্রাণী বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, পরিপূর্ণ। ষড় ঋতুর লীলা ক্ষেত্র। একত্রে, একসাথে, ঋতুর-রুপ বৈচিত্র্য স্পষ্টভাবে আর কোথাও পাবেন না। হাওরাঞ্চল হতে বছরে প্রায় ৪.৩২ লাখ টন মাছ আহরণ করা হয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় হতে আহরিত মাছের ২০%। হাওর হতে ধরা মোট মাছের ৭৩.৭ % আসে জলমহাল/ফিশারিজ হতে। চাষাধীন পুকুর হতে ০.১১৪ মিলিয়ন টন যা, হাওরে উৎপাদিত মাছের মাত্র ২.৬৪%। শামুক, ঝিনুকে পাওয়া যেত বিভিন্ন রঙের এবং রকমের মুক্তা। হাওরাঞ্চলে দেশের মোট গবাদি পশুর ২২%, ২৪% হাঁস, ১৪৩ প্রজাতির দেশী মাছ, ১২ বীড়ঃরপ মাছ পাওয়া যায়, এর মধ্যে ৫৪ টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। ‘গোলা ভরা ধান’ আছে সত্য কিন্ত গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ হয়ত আর তেমনভাবে পাবেন না। অষ্টগ্রামের বিখ্যাত ‘পনির’ এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। মিঠা পানির কয়েক প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়।

মোট ২৫৭ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২৯ দেশীয় এবং ১২৮ প্রজাতির বিদেশী পাখি; ২৯ প্রজাতির স্তন্য প্রাণী; ৯ উভয়চর প্রাণী এবং ৪০ প্রজাতির সরিসৃপ আছে। নদী/জলাশয় কেন্দ্রিক পাখি, মাছ /শিকারি পাখি এবং ২,৯৬,০০০ হেক্টর বনভূমি আছে। আকন্ঠ জলে নিমগ্ন হিজল, তমাল, করচ, বাঁশ ঝাড়ে, নল খাগড়া বনে পাখি এবং মাছের আশ্রয়স্থল ছিল। লাকড়ির জন্য এগুলো কেটে সাফ, নিড়ানী দিয়ে মাটির আবরণ- দুর্বা ঘাষ ‘ছিল্লা’ এবং পানিতে ডুব দিয়ে জলজ উদ্ভিদ ‘তুইল্লা’ শেষ করে দিয়েছে। ৪৬০ প্রজাতির গাছ মিঠা পানিতে জন্মাতে পারে। হাওরের পানিতে আর্থিকভাবে মূল্যবান, ফলদ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। জিডিপি’ তে হাওরের অবদান ৬-৮%। এ যেন একটা ‘ দুধালা গাই ’। শুধু বিলিয়ে আনন্দ পায়।

হাওরবাসি মূলত কৃষিজীবী (৫৩.৬৭%), সারা বছর কোন কাজ করে না এমন লোকের পরিমাণ (২৮.৫%), ব্যবসায়ী (১২.৫২), অকৃষিজীবী (১২.১৩%), শ্রমজীবি (৬.৪১%), চাকুরী (৫.৬৫%), বিদেশী প্রেরিত টাকার উপর নির্ভরশীল (৩.৪১%), সার্বক্ষণিক মৎস্যজীবী (২.৫৯%), পরিবহনে (২.৩৯%) এবং সবচেয়ে কম ১.৩৩% মানুষ শিল্প কারখানায় কাজ করে। হাওরাঞ্চলে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর এবং বছরে ৫.২৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়। আগাম বন্যায় বছরে ক্ষতি ০.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর জমির ফসল, যার আর্থিক মূল্য ৩.৪৮ মিলিয়ন টাকা। এ ক্ষতি জাতীয় কৃষির প্রায় ৩%। হাওরে বছরে কৃষি জমি কমছে ০.৩৩%, জাতীয় ০.৭৪%। নদীগুলো খনন করে দেন, অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এ মাটি দিয়ে সমন্বিত গ্রাম সৃজন করা যেতে পারে। নতুন গ্রাম সৃজন ব্যয়বহুল, রক্ষা করা আরো কষ্টকর। হাওরাঞ্চলে মোট ১৫,৩৭৪টি গ্রামে ৩,২, ৪৩৯০ পরিবার রয়েছে, তাদের বসত ভিটার আয়তন ৩,০৩,১২০ হেক্টর, যা হাওরের মোট আয়তনের ১২% । উচু এসব গ্রাম তৈরিতে চারি পাশে খননকৃত ১০-১৫ লক্ষ পুকুর, ডোবা বা গাতা (গর্ত) আছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে এগুলো খনন করে মাছ, মুক্তা চাষ, সম্পূরক সেচ, গৃহস্থালী কাজে লাগানো সম্ভব। হাওরে ৩% লোক ভূমিহীন (জাতীয় ১৪%), কিন্ত ৮১% অকৃষিজীবীর কোন কৃষি জমি নাই। হাওর এলাকায় ৩৪% পরিবার প্রান্তিক কৃষক, ৫% পরিবার জাতীয় লেভেলের নীচে। ৫১% পরিবার ছোট পরিবার কৃষক (জাতীয় ৪৯.৫%) এবং ২৮% লোক অতি দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে ।

হাওরে পেশা বৈচিত্র্য যেমন আছে, তেমনি রয়েছে মানব বৈচিত্র্য । কামার, কুমার, চামার, মুচি, ধোপা, নাপিত, ঘোষ, জেলে, মাইমল, কৈবর্ত, জলদাস, নাপিত, চাষী, ব্যবসায়ী, মিস্ত্রী, মাঝি, মৎস্যজীবী, স্বর্ণকার, গোয়ালা, ছয়াল, আড়ৎদার, বেপারি, ধানের দালাল, কবিরাজ, চোর স¤প্রদায়ও আছে। আছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠি। আউল, বাউল, সুফি, সাধক, কবি, লেখক, শিল্পী। নোকা বাইচ, ষাড়ের লড়াই, ঘোড় দৌড়, যাত্রা, ঘাটু গান, গীত, কিচ্ছার আসর, বাহাস, মেলা, বান্নি। লোক সংস্কৃতির তীর্থ ভূমি হাওর। সমৃদ্ধ ছিল জনবলে, ধনে, ধানে, মাছে, দুধে, সম্পদে। এ গুলোর আস্তিত্ব হুমকির মুখে ।

হাওরাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ। এখানে আছে গ্যাস, সাদা মাটি, চুনা পাথর, নুড়ি পাথর, বালি, পাথর, ক্লে, গøাস বালি। তাছাড়া কয়লা, পিট কয়লা, ক্রুয়েড অয়েল ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যায়। দেশে উৎপাদিত মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৯০% আহরিত হয় হাওরাঞ্চল হতে। এখানে ছোট ছোট কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প, শীতল পাটি, বাঁশ, মৃত্তিকা শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, শুটকি, ভ্যালু এডেড পণ্য, গ্রামীণ ব্যবহার্য দ্রবাদি, উৎপাদিত হতো। ছিল ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, লোহা ভিত্তিক নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী, আসবাবপত্র তৈরিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কারখানা। সৌর বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি, গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা, ইপিজেড, আইটি পার্ক এবং বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন এখন সময়ের দাবি, উপেক্ষা করা হবে আত্মঘাতি। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা সংগ্রামী, সাহসী, ভাটির বীর পুরুষরা প্রকৃতি বান্ধব। সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ, পুজি আর প্রযুক্তি প্রদান করুন, পথের বাঁধা সরিয়ে ফেলুন, মানুষ কে এগোতে দিন। নিজেরাই নিজেদের পথ খুজে নিবে, পথ তৈরি করে নিবে।

হাওরের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং বড় আপদের নাম-‘পানি’। অতিরিক্ত এবং অতি কম পানি, দু’ অবস্থাই হাওরবাসির জীবন কে অতিষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে বাধ্য করে। পানিকে কেন্দ্র করে হাওরবাসির সুখ, দুঃখ, জীবন, জীবিকা অনেকটাই নির্ভরশীল। কর্মহীনতায় এবং ফি বছর ফসল হানিতে, বর্ষায় হাওরের মানুষ ঘরে ‘খিল’ দিয়ে দেশান্তরিত হয়। আবার এ পানিকে ব্যবহার করে হাওরবাসির জীবন ধারার আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সম্পদ ধংসের মূল কারণ আনাড়ি এবং হাওর সম্পর্কে অজ্ঞ লোক দ্বারা অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম । ‘ভুরা ও আভুরা সড়ক’ নির্মাণেও সতর্ক হতে হবে। সুদিনে (শুষ্ক মৌসুমে) বিল ঝিলের তলানীতে জমে থাকা শেষ পানিটুকুও শুকিয়ে ফেললে হাওরবাসি মানুষসহ সকল প্রাণির জীবন যাত্রা, বেঁচে থাকা, জীব বৈচিত্র্য, জীবন ও খাদ্য চক্র ভেঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে। এ পানিকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা বিভিন্ন প্রকার মাছ, জলজ প্রাণী, পশু-পাখি, জলজ গাছ/উদ্ভিদ, কীট পতঙ্গ, পোকা মাকড়, পরিবেশ প্রতিবেশ হুমকি ও ধবংসের উপক্রম হয়েছে। হরিলুটে বিনষ্ট হচ্ছে তাদের আবাস, আহার ও প্রজনন স্থল। হাওরের প্রাণ-পানি। আর পানি ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যায় না। বিল শুকিয়ে, কাদা খুড়েঁ ধরে মাছের বংশ নির্মূল করা হচ্ছে।

মা’ মাছসহ প্রজনন সক্ষম সকল মাছ ধরায় মাছের পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে না। একটি জলাশয়/ বিলটিকে কেন্দ্র করেই হয়ত হাওরে একটি গ্রাম-বসতি গড়ে উঠেছে এবং ঐ বিলটিই শুকনা সময়ে ঐ এলাকার একমাত্র জলের উৎস। শুকানোর ফলে এ বিলের পানি ব্যবহার বা মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহকারীদের জীবনে দুর্ভোগ ভোগ করতে হয়। পানির অভাবে মানুষ জনের, মাছ পশু-পাখির রোগ বালাই বৃদ্ধি পায়। জীবন পানির অভাবে চরম বিড়ম্বনায় পরতে হয়। পানির দেশে পানির জন্য চরম হাহাকার আহাজারি বড়ই বেমানান। পানির অভাবে মানুষ, পাখি, মাছ, প্রাণী দেশান্তরী হয়। পরিবেশের বিপর্যয়, বিবর্তন, অযাযিত অপরিকল্পিতভাবে আহরণ, মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত প্রায় এ সব সম্পদ, পরিবেশ এবং ঐতিহ্যকে পুনঃজীবিতের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে কর্মোদ্যম, প্রাণ চাঞ্চল্য, উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে, পজিটিভ পরিবর্তন ঘটবে জীবনে, তৈরি হবে সমৃদ্ধ হাওরাঞ্চল, সোনার বাংলাদেশ ।