হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্যা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে জানিয়ে এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধান-চালের ঘাটতি এড়াতে রোপা আমনের দিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেছেন। মন্ত্রিসভা বৈঠকে বন্যা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। আজকে যমুনা নদীর পানি বঙ্গবন্ধু ব্রিজের ওখানে এরই মধ্যে বিপদসীমার বেশ নিচে চলে গেছে। পদ্মা নদীর পানির স্তর ও গতি কমে গেছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের অনুমান আছে যে, আগে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন, প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে একটা দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। এই যে পানিটা যাচ্ছে এটাও ১৮ থেকে ২০ দিন হয়ে গেছে। ১৮ থেকে ২০ দিন পর পানিটা অনেকটা নিচে নেমে যাচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে সতর্ক করলেন, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি যদি কোনো বন্যা আসে তাহলে সেটা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে থাকার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতিটা ওইখানে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বিশেষ করে দুর্যোগ্য ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মসূচি আছে, একটা প্রকল্প আছে সেই প্রকল্পের এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিবে দুর্যোগ্য ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। সেখানে একটা বড় টাকা ধরা আছে যদি কোথাও নদীর বাঁধ ভেঙে যায় ওটাকে তাড়াতাড়ি মেরামত করার জন্য। সে বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন যে, আমনের বীজ যেহেতু নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য একটু উঁচু জায়গায় করার জন্য। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা কর্মসূচি আছে। বিশেষ করে পানি সহিষ্ণু ভ্যারাইটি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, তারা যে নতুন জাত আবিষ্কার করেছেন সেটা ১৫ দিন পানির নিচে থাকলেও নষ্ট হবে না। রোপা আমনের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। রোপা আমন ঠিকভাবে হলে আমাদের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ঘাটতি হবে না গতবারের তুলনায়, গতবার আমনে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ লাখ টন, এবার লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ টন। সেই তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে তবে গতবারের তুলনায় উৎপাদন আশা করা যাচ্ছে বেশি হবে ইনশাআল্লাহ।
তথ্য আদান-প্রদানে সউদীর সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে চুক্তি এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে সউদী আরবের অনেক যোগাযোগ আছে। সেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাস্টম একটি বড় বিষয়। সেজন্য সউদী আরবের শুল্ক সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, শুল্ক ফাঁকি রোধে সহযোগিতা করা। কীভাবে বাণিজ্য সহজ করা যায়, যদি আমরা কাস্টমস ডিউটিগুলো ইজি করে ফেলতে পারি। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও অন্যান স্বার্থরক্ষায় এটা কার্যকর হবে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের বিষয়ে দুই দেশ পরস্পরকে সাহায্য করতে পারবে। আমাদের দেশের কাস্টম বিভাগের দক্ষতা বাড়াতেও সউদী আরব আমাদের সহায়তা করবে।
নেপালকে রেল ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রেলপথে নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এজন্য নেপালের সঙ্গে থাকা ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে নেপালের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক ট্রানজিট চুক্তি আছে। সেই ট্রানজিট চুক্তির মধ্যে নেপাল একটি অনুরোধ করেছে আমাদের রোহনপুর আর ভারতের সিঙ্গাবাদ হয়ে যে রেলপথ আছে সেখানে আরেকটি ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার জন্য। রোহনপুর ও সিঙ্গাবাদ রেলপথের মাধ্যমে তারা মালামাল আনতে নিতে পারে সেটা। এই সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন পেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর থেকে ভারতের সিঙ্গাবাদ হয়ে নেপালের বীরগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা চালু হবে। এছাড়া নেপাল আমাদের সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে চায়। এটা আলোচনা চলছে, আজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওইভাবে আর উপস্থাপন করতে পারেনি। যদি এটি বাস্তবায়ন হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সেই প্রস্তাবও এখানে আসবে।