হাওর বার্তা ডেস্কঃ কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের মধ্যে শুধু বাইক্কা বিলেই কৃত্রিম কাঠের বাক্সে ডিম দিয়ে ছানা তুলে যাচ্ছে বিরল ‘ধলা-বালিহাঁস’। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি
চলতি বর্ষা মৌসুম ঘিরে বাইক্কা বিলের সংরক্ষিত কাঠের বাক্সে ডিম দিয়েছে ওরা। কয়েকদিন পরই ফুটবে ছানা।
আমাদের দেশের বিরল জলচল পাখি ধলা-বালিহাঁস (Cotton Pygmy-goose)। গৃহপালিত হাঁসের চেয়ে আকারে ছোট, ৩০ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটার।
বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস এর সাইড অফিসার মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আগস্ট মাসের শুরু থেকে আমাদের বাইক্কা বিলে কাঠের বাক্সে ডিম দিয়েছে ধলা-বালিহাঁস। প্রতি বছরের মতো এবারো ডিম থেকে ছানা তুলতে ডিমে তা দিতে শুরু করেছে ওরা। ছয়টি বাক্সে প্রায় অর্ধশত ডিম দিয়েছে। কিছুদিন পরই ছানা ফুটবে।
বাইক্কা বিলে কৃত্রিম কাঠের প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সম্ভবত বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাইক্কাবিলেই বালিহাঁস কাঠের বাক্সে সফলভাবে প্রতিবছর ছানা তুলতে পারছে। ওদের ডিম পাড়ার জায়গায়ই নেই দেশে। কারণ, খুঁড়লে ওরা বাসা করে। পুরনো বড় গাছ, জলাশয় সংলগ্ন পুরাতন মঠমন্দির প্রভৃতি নেই বলে তাদের প্রজনন আজ বাধাগ্রস্ত। তার মানে কাঠের বাক্স দেওয়ার ফলেই ধলা-বালিহাঁস প্রতি বছর বর্ষামৌসুমে তার বংশবৃদ্ধি করে চলেছে।
এর নেপথ্যের অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বাক্স দেওয়ার পেছনে অবদান আছে ১০০ জন স্কুলছাত্রের। আমাদের দেওয়া ডিজাইনে ওরা নিজের টাকা দিয়ে ১০০টি বাক্স তৈরি করে আমাদের দিয়েছিল। এভাবেই শুরু হয়েছে। প্রথমে যখন আমরা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেছিলাম তখন আমাদের কোনো টাকা ছিল না। সেই ১০০ ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ওগুলো আমাদের তৈরি করে দিয়েছিল। এই কথাটা আমি আজকের দিনে বেশি করে স্মরণ করবো যে, এই পাখিটি আমাদের প্রকৃতিতে টিকে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ওই ১০০ স্কুলছাত্রদের অবদানের ফলেই। নইলে হয়তো পাখিগুলো টিকে থাকতো না। এটা ২০০৩ সালের দিকে ছোট উদ্যোগ হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে শুরুটা হয়েছিল। তবে প্রকল্পের উদ্যোগে এ কার্যক্রম ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়।
অন্য পাখিদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরকম আরো অনেক কাজ দেশে করার আছে। মুশকিল হলো আমরা সংগঠিতভাবে উদ্যোগ নিতে পারছি না। যেমন, হাঁড়ি অনেক জায়গায় গাছে বেঁধে দিচ্ছে। ফলে অসুবিধা হলো- যে পাখির দরকার নেই সেই পাখির কাজে লাগছে। যেমন ধরেন কাক-শালিকের বংশ যদি তাতে বাড়ে তাহলে কোনো লাভ হলো না। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে যে, কোন পাখিটার অসুবিধা হচ্ছে। যেমন- এই বালিহাঁসের অসুবিধা ছিল। জলাশয়ের সঙ্গে পুরনো গাছ ও পুরনো বিল্ডিং নেই বহু দেশে। আমাদের আরো কিছু পাখি রয়েছে যারা প্রজননসংকটে।
ধলা-বালিহাঁসের জন্য কৃত্রিম কাঠের বাক্স হাকালুকি হাওরেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি। তবে সাফল্য এসেছে এবং চলছে ক্রমাগত একমাত্র বাইক্কা বিলেই। পৃথিবীতে কোথাও ধলা-বালিহাঁসের জন্য কাঠের বাক্স দিয়েও সাফল্য আসেনি। বাইক্কা বিলেও যে সাফল্য আসবে এটা আমাদের ধারণা ছিল না, অনুমাননির্ভর ছিল। ধলা-বালিহাঁসের সঙ্গে আকার-আকৃতি ও স্বভাবগত অনেকটা মিল আছে বলে এই কাঠের বাক্সের ডিজাইনটা আমরা ‘আমেরিকান উড ডাক’ এর সঙ্গে তুলনা করি। এখন কাঠের বাক্সগুলো কিছু কিছু ভুল ও শুদ্ধভাবে করা হচ্ছে। ভুল করলে হবে ডিম পাড়বে, কিন্তু বাচ্চাগুলো বাঁচবে না। কারণ বাচ্চা ডিম থেকে বেরিয়ে লাফিয়ে পানিতে পড়তে পারে ঠিক এমন সঠিক মাপের গর্ত থাকতে হবে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।