ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৯১০ বছর আগে চাঁদ উধাও হয়ে যাওয়ার রহস্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • ৩১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাতের আকাশ উজ্জ্বল করে রাখে একটি চাঁদ। পৃথিবীর সব জায়গা থেকে চাঁদের আলো দেখা যায়, তবে সময় ভেদে। কখনো ভেবে দেখেছেন হঠাৎ যদি কোনো দিন দেখেন আকাশে চাঁদ নেই, চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার? এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়!

জানেন কি? ১১১০ সালে একদিন হঠাৎ করে আকাশ থেকে রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায় চাঁদ। অবাক করা বিষয় হলো, মেঘ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ কোনোটিই এই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল না। ভয়াবহ এক বিষ্ময়ের আঁধার নেমে আসে পুরো পৃথিবীজুড়ে।

চাঁদ উধাও হওয়ার এই রহস্যের কূল-কিনারা দীর্ঘ ৯০০ বছরেও হয়নি। চলতি বছরের ২১ এ এপ্রিল এই রহস্যজট উন্মোচন করে সু্ইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে নেচার জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তাদের গবেষণা পত্রের শিরোনাম ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড সোশ্যিয়াটাল ইমপেক্টস অব আ ‘ফরগোটেন’ ক্লাস্টার অব ভলকেনিক এরাপশনস ইন ১১০৮-১১১০’।

চাঁদ

চাঁদ

গবেষণা অনুযায়ী, চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে রহস্য কী ছিল জানেন? পুরনো একটি পুঁথি থেকে পাওয়া যায়, ১১১০ সাল ছিল সাংঘাতিক বিপর্যয়ের একটি বছর। মুষলধারে ভারী বৃষ্টিপাত, ক্ষতিগ্রস্থ ফসল, দুর্ভিক্ষ এবং ধারাবাহিক অগ্নি উৎপাত সব যেন একই বছরে হানা দিয়েছিল এই গ্রহে। আর চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে দায়ী ছিল একই সময়ে পরপর অনেকগুলো নিরবিচ্ছিন্ন অগ্নি উৎপাত।

১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার সর্বাধিক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে উৎপন্ন ছাই মেঘের সঙ্গে মিশে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে ভেসে বেড়ায়। এই বিষয়টি টের পাওয়া যায়, যখন গবেষকদের একটি দল গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্ট্যার্ক্টিকায় প্রাচীন হিমবাহের গঠন পরীক্ষা করেন।

হিমবাহের বরফের টিউবগুলো তখনকার সময়ে বায়ুমণ্ডল কী ধরনের কণা দ্বারা আবৃত ছিল সে সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। গবেষকরা ১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত সালফেটের উপস্থিতির প্রমাণ পায়। অতিরিক্ত সালফেটের উপস্থিতির ফলে তখন বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর আগ্নেয়গিরির গাঢ় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল।

আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ

আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ

সেই সঙ্গে তৎকালীন সময়ের পুরনো কিছু গাছের ফসিল পরীক্ষা করে দেখা গেল, গাছের কাণ্ডের রিংগুলোর পুরত্ব স্বাভাবিক নয়। উদ্ভিদের এই পরিবর্তনের ফলে ১১০৯ সালে ইউরোপের আবহাওয়া হয়েছিল অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিমুখর। এ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন বড় বড় আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলেই ঘটে বলে বহু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এর আগেও।

তবে অগ্নি উৎপাতগুলো আসলে কোথায় হয়েছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি গবেষক দলটি। কিছু পুরনো ম্যাগাজিন ঘেটে জানা যায়, ১১০৮ সালে জাপানের আসামা আগ্নেয়গিরিতে টানা তিন মাস ধরে অগ্নি উৎপাত অব্যাহত ছিল। আর গ্রিনল্যান্ডের বরফে সালফেটের উপস্থিতি এই আসামা আগ্নেয়গিরির প্রভাবেই হয়েছিল।

আবার একই সালে, দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো এক স্থানে আরেকটি দীর্ঘ বিস্ফোরণ ঘটে যার প্রমাণ দেয় অ্যান্টার্ক্টিকার হিমবাহ। ১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে এই অগ্নি উৎপাতগুলো মারাত্মকভাবে বায়ুকে দূষিত করে দেয়। এর ফলেই ১১১০ সালে চাঁদ দেখা যায়নি পৃথিবী থেকে। চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ থাকলেও, এটিই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য প্রমাণ। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৯১০ বছর আগে চাঁদ উধাও হয়ে যাওয়ার রহস্য

আপডেট টাইম : ০৪:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাতের আকাশ উজ্জ্বল করে রাখে একটি চাঁদ। পৃথিবীর সব জায়গা থেকে চাঁদের আলো দেখা যায়, তবে সময় ভেদে। কখনো ভেবে দেখেছেন হঠাৎ যদি কোনো দিন দেখেন আকাশে চাঁদ নেই, চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার? এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়!

জানেন কি? ১১১০ সালে একদিন হঠাৎ করে আকাশ থেকে রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায় চাঁদ। অবাক করা বিষয় হলো, মেঘ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ কোনোটিই এই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল না। ভয়াবহ এক বিষ্ময়ের আঁধার নেমে আসে পুরো পৃথিবীজুড়ে।

চাঁদ উধাও হওয়ার এই রহস্যের কূল-কিনারা দীর্ঘ ৯০০ বছরেও হয়নি। চলতি বছরের ২১ এ এপ্রিল এই রহস্যজট উন্মোচন করে সু্ইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে নেচার জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তাদের গবেষণা পত্রের শিরোনাম ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড সোশ্যিয়াটাল ইমপেক্টস অব আ ‘ফরগোটেন’ ক্লাস্টার অব ভলকেনিক এরাপশনস ইন ১১০৮-১১১০’।

চাঁদ

চাঁদ

গবেষণা অনুযায়ী, চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে রহস্য কী ছিল জানেন? পুরনো একটি পুঁথি থেকে পাওয়া যায়, ১১১০ সাল ছিল সাংঘাতিক বিপর্যয়ের একটি বছর। মুষলধারে ভারী বৃষ্টিপাত, ক্ষতিগ্রস্থ ফসল, দুর্ভিক্ষ এবং ধারাবাহিক অগ্নি উৎপাত সব যেন একই বছরে হানা দিয়েছিল এই গ্রহে। আর চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে দায়ী ছিল একই সময়ে পরপর অনেকগুলো নিরবিচ্ছিন্ন অগ্নি উৎপাত।

১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার সর্বাধিক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে উৎপন্ন ছাই মেঘের সঙ্গে মিশে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে ভেসে বেড়ায়। এই বিষয়টি টের পাওয়া যায়, যখন গবেষকদের একটি দল গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্ট্যার্ক্টিকায় প্রাচীন হিমবাহের গঠন পরীক্ষা করেন।

হিমবাহের বরফের টিউবগুলো তখনকার সময়ে বায়ুমণ্ডল কী ধরনের কণা দ্বারা আবৃত ছিল সে সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। গবেষকরা ১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত সালফেটের উপস্থিতির প্রমাণ পায়। অতিরিক্ত সালফেটের উপস্থিতির ফলে তখন বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর আগ্নেয়গিরির গাঢ় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল।

আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ

আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ

সেই সঙ্গে তৎকালীন সময়ের পুরনো কিছু গাছের ফসিল পরীক্ষা করে দেখা গেল, গাছের কাণ্ডের রিংগুলোর পুরত্ব স্বাভাবিক নয়। উদ্ভিদের এই পরিবর্তনের ফলে ১১০৯ সালে ইউরোপের আবহাওয়া হয়েছিল অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিমুখর। এ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন বড় বড় আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলেই ঘটে বলে বহু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এর আগেও।

তবে অগ্নি উৎপাতগুলো আসলে কোথায় হয়েছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি গবেষক দলটি। কিছু পুরনো ম্যাগাজিন ঘেটে জানা যায়, ১১০৮ সালে জাপানের আসামা আগ্নেয়গিরিতে টানা তিন মাস ধরে অগ্নি উৎপাত অব্যাহত ছিল। আর গ্রিনল্যান্ডের বরফে সালফেটের উপস্থিতি এই আসামা আগ্নেয়গিরির প্রভাবেই হয়েছিল।

আবার একই সালে, দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো এক স্থানে আরেকটি দীর্ঘ বিস্ফোরণ ঘটে যার প্রমাণ দেয় অ্যান্টার্ক্টিকার হিমবাহ। ১১০৮ থেকে ১১১০ সালের মধ্যে এই অগ্নি উৎপাতগুলো মারাত্মকভাবে বায়ুকে দূষিত করে দেয়। এর ফলেই ১১১০ সালে চাঁদ দেখা যায়নি পৃথিবী থেকে। চাঁদের অদৃশ্য হওয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ থাকলেও, এটিই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য প্রমাণ। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়।