হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুগে যুগে অনেকে সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। অনেক সভ্যতা বহুদিন টিকে থেকেছে আবার অনেক সভ্যাতা শুরুতেই ধ্বংস হয়েছে। এখনকার মতোই প্রাচীনকালে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন সভ্যতা। যার একেকটির নিজস্বতা ছিল।
একেক সভ্যতার আচার, স্থাপত্যের মধ্যেও বেশ অমিল রয়েছে। বিভিন্ন সভ্যতার মানুষ তাদের জীবনযাপন সহজ করতে নানাভাবে নিজেদেরকে সাজিয়েছিল। এরই মধ্যে প্রত্নতত্ত্ববিদরা খুঁজে পেয়েছেন আদি কালের নানা সভ্যতার নিদর্শন।
বিখ্যাত অনেক সভ্যতার ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ববিদের গবেষণায় আমরা কম-বেশি জানতে পেরেছি। তবে অতীতে এমন অনেক সভ্যতা বা পুরনো জনপদ গড়ে উঠেছিল যেগুলোর ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ববিদরাও এখনো খুব বেশি জানতে পারেননি। প্রতিনিয়ত খোঁজ চলছে পুরোনা সভ্যতা আবিষ্কারের বিষয়ে।
সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকার ইথিয়োপিয়াতে খনন কাজ করছিলেন একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। সে সময় তারা এক শহরের খোঁজ পান। যেটি টিকেছিল প্রায় ১৪০০ বছর আগ পর্যন্ত।
আকসুম সভ্যতা
খ্রিস্টপূর্ব ৮০ থেকে ৮২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব আফ্রিকাতে ছিল আকসুম সভ্যতা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পূর্ব আফ্রিকাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এই সভ্যতা। রোমের মতো শক্তিশালী সভ্যতার সঙ্গেও বাণিজ্যের সম্পর্ক ছিল আকসুম সভ্যতার মানুষদের। চীন ও প্রাচীন পারস্যের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতার। নতুন আবিষ্কৃত এই শহর তার সমসাময়িক।
আকসুম সভ্যতার প্রধান শহরের নাম ছিল আকসুম। যদিও কীভাবে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সে ব্যাপারে এখনো কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই গবেষকদের। তবে মনে করা হয় প্রাক-আকসুম কোনো জনপদ থেকেই উত্তর ইথিয়োপিয়ায় গড়ে ওঠে আকসুম সভ্যতা।
আকসুম সভ্যতার উৎস জানতে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উত্তর ইথিয়োপিয়ার ইয়েহা অঞ্চলের কাছে খনন কাজ শুরু করেন। সেখানেই তারা যে শহরের খোঁজ পেয়েছেন তা প্রাক-আকসুম যুগের। সেই খনন কাজ চালানোর পর প্রত্নতত্ত্ববিদরা খুঁজে পেয়েছেন পাথরের দেয়ালের সারি।
তারা মনে করছেন, সে সময় গড়ে তোলা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এগুলো। গবেষকরা এই প্রাচীন সভ্যতাকে বিটা সেমাতি বলে ডাকেন। স্থানীয় টিগরিনিয়া ভাষায় যার অর্থ দর্শকদের বাড়ি। এই বিটা সেমাতি আবিষ্কারকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন লল্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জ্যাক ফিলিপস। তিনি বলেছেন, আকসুমের ব্যাপারে জানলেও, ওই অঞ্চলে আকসুম পূর্ববর্তী সভ্যতার ব্যাপারে কোনো ধারণাই এত দিন ছিল না।
জন্স হসকিন্সের গবেষক মাইকেল হ্যারোয়ার এ বিষয়ে বলেছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সভ্যতা। তবে পশ্চিমী দুনিয়া এই সভ্যতার ব্যাপারে জানেই না। গ্রিস ও রোমের বহু কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে ইথিয়োপিয়ার এই সভ্যতার ব্যাপারে আগে কেউই কিছু জানতেন না। এর অনেক কিছুই অজানা।
রেডিয়োকার্বন ডেটের মাধ্যমে জানা যায়, এই বিটা সামাতির সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৭১ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ আকসুম সভ্যতা গড়ে ওঠার পরও বিটা সামাতি ছিল। আকসুমের উত্থান বিটা সামাতির অবস্থানে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তবে এটি আবিষ্কারের আগে এর ঠিক উল্টোটা ভাবতেন গবেষকরা।
আকসুম সভ্যতা থেকে খুঁজে পাওয়া নিদর্শনসমূহ
নতুন এই আবিষ্কার অনেক অজানা তথ্য সামনে আনবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই খনন কাজের পর গবেষকরা দেখেছেন, বিটা সামাতিতে ছিল প্রচুর ছোট ছোট বাড়ি। এর পাশাপাশি আয়তাকার বড় বাড়িরও খোঁজ মিলেছে। যেগুলোকে বাসিলিকা বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এগুলো আদালত বা অন্য প্রশাসনিক দফতর হিসাবে ব্যবহৃত হত। পরে উপাসনাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এগুলো।
এখন যেখানে ইয়েমেন, সেখানেই আগে ছিল সাবা সাম্রাজ্য। চতুর্থ শতাব্দীতে সেখানকার রাজা এজানা আকসুম সভ্যতাকে খ্রিস্ট ধর্মে দিক্ষীত করে। তখন এই বাসিলিকাগুলো গির্জায় রূপান্তরিত করেছিলেন। এই সভ্যতায় তামার তৈরি রিংও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ষাঁড়ের শিংয়ে পরানো হত তামার তৈরি এই রিং। সেগুলো রোম সভ্যতা থেকে নিয়ে আসা হত বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
মদ সংরক্ষণের অ্যামফোরও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এখানে। এই ধরনের অ্যামফোরে আকাবা অর্থাৎ এখন যেখানে জর্ডন সেখান থেকে আনা হত। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়, সে সময়কার অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গেও বাণিজ্য চলত বিটা সামাতি ও আকসুমের।